Wednesday, May 13, 2015

বছরে ৭০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য:প্রথম অালো

লাভের অঙ্কটা বিশাল। ঝুঁকি সামান্যই। আর চাহিদা কার্যত অফুরান। ইউরোপে মানব পাচারের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে এই তিন কারণই যথেষ্ট। এভাবে মানব পাচার এখন কোটি কোটি ডলারের বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে সংঘবদ্ধ অপরাধী গ্রুপগুলো ক্রমেই এই অবৈধ মানব পাচারের ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর এএফপির। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দারিদ্র্য ও যুদ্ধপীড়িত এলাকাগুলোর লোকজন প্রাণে বাঁচতে ইউরোপমুখী হচ্ছে। নিদারুণ
কষ্টে থাকা এসব মানুষকে ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার লুফে নিচ্ছে মাফিয়া গোষ্ঠীগুলো। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আন্তসীমান্ত পাচারের ঘটনাগুলো... বেশির ভাগ সময়ই সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাচারের জটিল ঘটনাগুলো বৃহৎ ও সুসংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা সহজেই পরিচালিত হয়।’ ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক আলতাই গ্রুপের কর্মকর্তা আরিজোমালাকুতি মনে করেন, অধিকতর যোগাযোগ-সম্পন্ন হওয়ায় এবং ‘রাঘব-বোয়াল’ চক্রগুলো দায়িত্ব নেওয়ায় এখন এমনকি পাচারের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) উপদেষ্টা গ্রুপটির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৩ সালে অভিবাসীরা আমাদের বলেছিল, তারা ধাপে ধাপে ভ্রমণ করেছে। প্রতিটি ধাপে তারা একটি পাচারকারী গ্রুপ থেকে আরেক গ্রুপের কাছে হাতবদল হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপকেই নতুন করে অর্থ দিতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে তাদের বিভিন্ন স্থানে থেমে কাজ করে অর্থ কামিয়ে, সেই অর্থ দিয়েই তাদের পরবর্তী ধাপে যেতে হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালে আমরা ক্রমবর্ধমানভাবে দেখতে পেলাম, অভিবাসীরা নিজ দেশ থেকে সরাসরি গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অর্থ দিয়েছে। এটা এখন অনেক বেশি বেশি ঘটছে।’ আরিজোমালাকুতি জানান, তিনি ফিলিস্তিনি অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছে, প্রক্রিয়াটা এখন হয়ে গেছে অনেকটা এ রকম: একটি ভ্রমণ প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হবে এবং একটা প্যাকেজ কিনতে হবে। এরপর তারাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজটা করে দেবে। তিনি বলেন, ‘সুতরাং, এমন সব নজির রয়েছে যাতে ইঙ্গিত মিলছে, এখানে অনেক চক্র রয়েছে, যারা পুরো পথের কাজটা করে দিচ্ছে। তা না হলে, অন্তত বিভিন্ন চক্রের মধ্যে কিছু পারস্পরিক সহযোগিতা আছেই।’ গত বছর কমবেশি ১ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসী ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালিতে পৌঁছেছে। এসব লোককে পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত প্রতিটি নৌযানই হাজার হাজার ডলার এনে দিয়েছে পাচারকারীদের। অভিবাসীরা যতটা অর্থ দিতে ইচ্ছুক, তার ভিত্তিতে বিভিন্ন ‘বিকল্প’ ও ‘প্যাকেজ’ রাখা হয়। বেশি অর্থ গুনতে পারলে, নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা থাকে। ফজর লিবিয়া মিলিশিয়া জোটের নিয়ন্ত্রণাধীন ত্রিপলিভিত্তিক সরকারের অবৈধ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আবদেল সালাম আল-কুউইরি বলেন, দেশটির পাচারকারীরা ‘বিশ্বব্যাপী একটি বৃহত্তর পাচার চক্রের অংশ’। এদের ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে শক্ত যোগাযোগ রয়েছে।

No comments:

Post a Comment