মিয়ানমার থেকে ঘর ছাড়া নারী ও শিশুসহ বহু রোহিঙ্গা এখনো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাগরে নৌকায় ভাসছে। দীর্ঘদিন পানি ও খাবার না পেয়ে মারা যাচ্ছিল অনেকে। তাদের দুর্দশা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় সারা বিশ্বে আলোচনা-সমালোচনার ঢেউ ওঠে। কিন্তু মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির এই নীরবতা সবাইকে বিস্মিত করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তাঁর নীরবতার ক
ারণ নিয়ে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আপসহীন লড়াইয়ের কারণে সু চি রীতিমতো কিংবদন্তি। অথচ তাঁর দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের করুণ পরিণতি দেখেও কোনো কথা বলেননি। শোষিত, বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নাগরিক বলে স্বীকার করতে রাজি নয়। সে কারণে নাগরিক অধিকার নেই তাদের। দাঙ্গার শিকার হওয়াসহ নানা অত্যাচারে জর্জরিত রোহিঙ্গাদের অনেকে এ জন্য মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে ছুটছে অন্য কোনো দেশের উদ্দেশে। গত সোমবার সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার দেওয়া উচিত। কিন্তু দলটির নেতা সু চি এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। অবশ্য এটি নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০১৩ সালে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। কার্যত একতরফা ওই দাঙ্গায় শত শত রোহিঙ্গা নিহত হয়। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় বেশ কয়েক হাজার। এ বিষয়েও কোনো কথা বলেননি সু চি। তাঁর বিবৃতি চলমান দাঙ্গাকে আরও উসকে দেবে, এই ছিল তাঁর তখনকার যুক্তি। পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, সু চির নীরবতার পেছনে আসলে রয়েছে রাজনীতি। মিয়ানমারের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই বৌদ্ধ। তাই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতি দেখালে তা এনএলডির জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনএলডির একজন মুখপাত্র বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যা ঘটছে, এতে তাঁদের দলের নেতা সু চি গভীরভাবে মর্মাহত। কিন্তু মুসলিমদের পক্ষে কিছু বললে এর পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। মিয়ানমারের নেত্রীর এই নীরবতার কারণ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিয়ানমার রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক নিকোলা ফ্যারেলিও বলেছেন, সু চি এখন নির্বাচনী অঙ্ক কষছেন।
No comments:
Post a Comment