Monday, May 4, 2015

সব জরিপেই জোটের ইঙ্গিত:প্রথম অালো

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন একেবারে দ্বারপ্রান্তে। ৭ মে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন নিয়ে এ পর্যন্ত পরিচালিত সব কটি জরিপ বলছে, কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তাই ঘুরেফিরেই আসছে কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করতে পারে সে আলোচনা। যুক্তরাজ্যের ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে মোট ৭৫টি জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল। এবার বিভিন্ন আকার ও মানের জরিপের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। শনিবার প্রভাবশালী পত
্রিকা গার্ডিয়ান-এর প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বিরোধী লেবার পার্টিকে ২ শতাংশ পেছনে ফেলে ৩৪ শতাংশ সমর্থন নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টি। তবে দুটি দলই ২৭৬টি করে আসন পাবে বলে জরিপে আভাস পাওয়া গেছে। ১২ শতাংশ সমর্থন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে অভিবাসনবিরোধী কট্টর ডানপন্থী দল ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি (ইউকিপ)। জরিপ অনুযায়ী তারা জিতবে তিনটি আসন। আর গত পাঁচ বছর কনজারভেটিভের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টির (লিবডেম) জনসমর্থন মাত্র ৮ শতাংশ হলেও দলটি ২৭টি আসনে জয়লাভ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৬ আসন। ২০১০ সালের নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো জোট সরকার গঠিত হয় এবং তারা মেয়াদ পূর্ণ করে। ৩০৩ আসন পাওয়া কনজারভেটিভ পার্টি ৫৭টি আসন পাওয়া লিবডেমকে কনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে নিয়ে সরকার গঠন করে। জরিপের ফলকে সত্যি ধরে নিয়ে এবার সরকার গঠনে দুইয়ের বেশি দলের একজোট হওয়া অনিবার্য বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। দলীয় আদর্শের কারণে প্রাদেশিক দল স্কটল্যান্ডের এসএনপি, ওয়েলসের প্লেইড কামরি এবং গ্রিন পার্টি ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টিকে এবার আর সরকারে দেখতে চায় না বলে ঘোষণা দিয়েছে। তারা যেকোনো অবস্থায় ক্যামেরনকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়। ফলে মতপার্থক্য সত্ত্বেও এ দলগুলো লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ডকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্ভাব্য দুই প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও এড মিলিব্যান্ড অবশ্য অনেকটা একই সুরে জোট প্রসঙ্গে কৌশলী জবাব দিচ্ছেন। বলছেন, জোট সরকার নয়, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যেই প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁরা। অচলাবস্থার আশঙ্কা: গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছে, ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্য কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের পর কার্যকর কোনো সরকার গঠিত না হলে এ অবস্থা দেখা দিতে পারে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকেরা এ রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দল কনজারভেটিভ পার্টি যদি অধিকাংশ আসনে জয়ী হয়ে নিক ক্লেগের দলের সঙ্গে জোট নবায়ন করতে না পারেন, তাহলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে। জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও বর্তমান জোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জোটের দুটি দলের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের অনেকে নির্বাচনে সাফল্যের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের মূল ইস্যুগুলো অর্থনীতি: যুক্তরাজ্যের বাজেট ঘাটতি এখন কমবেশি নয় হাজার কোটি পাউন্ড। প্রধান দলগুলো এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এ জন্য সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার পরিমাণের ব্যাপারে তারা একমত নয়। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টি আগে ২০১৫ সালের মধ্যে বাজেট ঘাটতি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে এখন ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে ঘাটতি সম্পূর্ণ দূর করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা এড মিলিব্যান্ড বলছেন, ২০২০ সালে আগামী পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষের মধ্যে তাঁরা এই ঘাটতি দূর করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা না থাকা: এমন হতে পারে যে এবারের নির্বাচনের ওপরই ইইউতে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। নির্বাচনে জিতলে ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টি ২০১৭ সালের মধ্যে ইইউ ত্যাগ করা না করার বিষয়ে গণভোট নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরাও ওই গণভোটের বিষয়ে সমর্থন দিয়েছে। তবে এসএনপি ও লেবার পার্টি এ গণভোটের বিপক্ষে। তারা ইইউতে থাকার পক্ষে। নাইজেল ফারাজের দল ইউকেআইপি ইইউ থেকে সোজা বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে। অভিবাসন: বিদায়ী মেয়াদে কনজারভেটিভ দল বছরে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা এক লাখের নিচে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দলটি তা পূরণ করেনি। এখন বলছে, তারা অভিবাসীর সংখ্যা কয়েক হাজারের ঘরে নামিয়ে আনতে চায়। পাশাপাশি তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের প্রদেয় ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার আইনের সংস্কার করতে চায়। লেবার পার্টিও চায় অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে। ইউকেআইপি এ ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থানে। স্বাস্থ্যসেবা: লেবার পার্টির অভিযোগ, মুক্তবাজার সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে কনজারভেটিভ দল বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) বেসরকারীকরণ করতে চায়। লেবার পার্টি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপের মাধ্যমে আয় বাড়িয়ে আরও কয়েক হাজার চিকিৎসক ও সেবিকা নিয়োগ দিতে চায়। তবে কনজারভেটিভরা বলছে, তাদের নীতি এই সেবাকে আরও কার্যকর করবে। তারা ২০২০ সাল নাগাদ এনএইচএসের ব্যয় বছরে আট শ কোটি পাউন্ড বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

No comments:

Post a Comment