Monday, May 4, 2015

এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে:প্রথম অালো

নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বুদ্ধিমায়ার (৫৫) কপালে জোটেনি সামান্যতম ত্রাণসামগ্রী। ভূমিকম্পে তাঁর বাড়ির প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে দূর পাহাড়ি গ্রাম ফাকেলে বুদ্ধিমায়া একা ত্রাণবঞ্চিত নন, তাঁর মতো বিপন্ন অনেকেই এখনো সাহায্যের অপেক্ষায় বসে আছেন। ছয় নাতি-নাতনিসহ পরিবারের ১৫ সদস্যকে নিয়ে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন বুদ্ধিমায়া। তাঁরই মতো তাঁবুতে ঠাঁই হয়েছে অনেক প্রতিবেশীর। কয়েক প
শলা বৃষ্টিতে তাঁবুর পাশে জমেছে কাদা। বুদ্ধিমায়ার কষ্টের সঞ্চয়ও ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। তিনি বলছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। আমাদের সহায় বলতে কিছু নেই। যেকোনো মুহূর্তে খাবারও ফুরিয়ে যেতে পারে।’ ফাকেল গ্রামের প্রায় সব বাড়িই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ গ্রামের সবাই আদিবাসী তামাং সম্প্রদায়ের। তামাংরা নেপালের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি। ভূমিকম্প দরিদ্র এসব মানুষের অসহায়ত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। ফাকেল গ্রামে প্রায় ৮০০টি বাড়ি। প্রায় সবই তৈরি পাথর আর কাদার গাঁথুনি দিয়ে। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণের এই গ্রামে এখন কোনো ঘরই বসবাসের অবস্থায় নেই। প্রত্যন্ত এই পাহাড়ি গ্রামে যেতে হলে পায়ে হাঁটাই একমাত্র ভরসা। ভূমিকম্প এ দূরের গ্রামকে আরও দূরের করে দিয়েছে। গ্রামের বেশির ভাগ যুবক কাজের খোঁজে কাঠমান্ডু বা অন্য কোনো শহরে পাড়ি জমায়। বুদ্ধিমায়ার কয়েকটি ছেলেও কাঠমান্ডুর রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করে। তবে ভূমিকম্পের পর তারাও চাকরি হারিয়েছে। বুদ্ধিমায়ার ছেলে দুই সন্তানের জনক মদন (২৫) বলছিলেন, ‘ভয় হচ্ছে, আর কয়েক দিন পর আমাদের খাবার থাকবে না। ভূমিকম্প আমাদের জীবন শেষ করে দিয়েছে।’ গ্রামের বাসিন্দা সানু কাঞ্চি নিজের ঘরের ফেটে যাওয়া দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললেন। একটি আধুনিক চলনসই বাড়ি বানানোর স্বপ্ন ছিল সানু এবং তাঁর স্বামী থুলোর। বছর দশেক আগে ধারকর্জ করে আর নিজেদের সব সঞ্চয় মিলিয়ে স্বপ্নের বাড়িটি বানিয়েছিলেনও। সানু বললেন, ‘আমাদের বাড়িটি একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। বাড়ি বানাতে ঋণ করতে হয়েছিল। এখন সব শোধ করতে হবে।’ এ গ্রামে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র চালান ধনঞ্জয় পোখরেল। তিনি বলছিলেন, ‘তাঁবুতে থাকা শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বাড়ছে জ্বর।’ মোড়ল সানো কাঞ্চা (৮৬) বললেন, ‘আমাদের নিয়ে কেউ ভাবে না। বেঁচে থাকার জন্য একটু খাবার চাই আমরা, চাই আশ্রয়।’ ফাকেলের লালধোজ রুম্বা বাড়ির পাশাপাশি হারিয়েছেন গৃহপালিত পশুও। এ গ্রামের মতো অনেক প্রত্যন্ত গ্রামেই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। তবে বুদ্ধিমায়া বিশ্বাস হারাননি। অন্য ক্ষুধার্ত, গৃহহীন মানুষের মতো তাঁরও আশা, খুব শিগগির ত্রাণ আসবে। বুদ্ধিমায়া বলছিলেন, ‘অনেক সময় দূরে লরি দেখলেই ভাবি, কেউ আমাদের জন্য সাহায্য নিয়ে আসছে।’

No comments:

Post a Comment