Tuesday, May 19, 2015

ভাসমান অভিবাসী ঠেকাতে যুদ্ধজাহাজ!:কালের কন্ঠ

মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে আন্দামান সাগরে নৌকায় ভেসে বেড়ানো অভিবাসীদের আশ্রয় না দিতে আরো কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের আরো একটি নৌকা সাগরে ফেরত পাঠিয়েছে। অভিবাসীদের নৌকা ঠেকাতে দেশটির উপকূলে চারটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমান টহল দিচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার জেলেদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অভিবাসীদের উদ্ধার না করতে। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া জানিয়ে
ছে, তারা কোনোভাবেই অভিবাসীদের আর ভার বহন করতে রাজি নয়। অন্যদিকে তিনটি দেশের কঠোর অবস্থান এবং ভাসমান অভিবাসীরা প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কোনো দেশের তীরেই ভিড়তে না পারায় সাগরে মানবিক বিপর্যয় আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মানবিক সংস্থাগুলো। সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে উল্লেখ করে অবিলম্বে উদ্ধার অভিযান চালাতে আবারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো। তা সত্ত্বেও তিনটি দেশের কঠোর অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আন্দামান সাগরে এখনো ছয় হাজার বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ভেসে বেড়াচ্ছে। কড়া সতর্কতায় ইন্দোনেশিয়া : ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের আশ্রয় না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকার পরও গত শুক্রবার জেলেরা পৃথক তিনটি স্থান থেকে ৯ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীকে বিপদগ্রস্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছিল। এর মধ্যে ডুবে যাওয়া নৌকাটি থেকে প্রায় ৮০০ আরোহীকে উদ্ধার করেছিল তারা। সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে এ অভিবাসীদের উদ্ধারের ঘটনার পর এখন ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ সে দেশের জেলেদের নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন নৌকারোহী অভিবাসীদের কোনো সাহায্য না করে। এর মধ্যেই দক্ষিণ থাইল্যান্ডের জেলেরা জানিয়েছে, কমপক্ষে আরো দুটি নৌকাকে তারা ইন্দোনেশিয়া উপকূলের দিকে যেতে দেখেছে। ইন্দোনেশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ফুয়াদ বাসিয়া বলেন, জেলেরা নৌকা আরোহীদের খাদ্য, জ্বালানি ও পানি সরবরাহ করতে পারবে। প্রয়োজনে নৌকা মেরামত করে দিতে পারবে। কিন্তু অবৈধ অভিবাসীদের তীরে নিয়ে আসতে পারবে না। এ বিষয়ে আচেহ প্রদেশের কয়েকজন জেলে বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা এখন থেকে আর অভিবাসীদের কোনো সাহায্য করতে পারবে না, এমনকি যদি তারা ডুবেও মারা যায়। ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনী গতকাল জানিয়েছে, তারা রবিবার আরো একটি নৌকা সাগরে ফেরত পাঠিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে নৌকাটি অভিবাসীদের। নৌকাটি মালাক্কা প্রণালি দিয়ে মালয়েশিয়ার দিকে যাচ্ছিল এবং ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রয় নিতে চায়নি বলে দাবি করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ফুয়াদ বাসিয়া জানান, নৌকাটির সঙ্গে তাঁদের রেডিও যোগাযোগ হয়েছিল। তবে তাতে কতজন আরোহী ছিল বোঝা যায়নি। তিনি আরো জানান, আচেহ উপকূলে এ মুহূর্তে চারটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমান টহল দিচ্ছে, যাতে অভিবাসীদের নৌকাগুলো আটকানো যায়। নৌকাগুলো ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশে নিষেধ রয়েছে বলে তিনি জানান। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষও অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধ করার জন্য দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমুদ্রসীমা অবরোধ করে রেখেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। থাইল্যান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিপদগ্রস্ত নৌকা দেখা গেলেই দ্রুত অভিবাসীদের মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রয়োজন হলে নৌকা মেরামত করে ফেরত পাঠাবে। দুটি দেশই আবারও জানিয়েছে, তারা অভিবাসীদের ভার বহন করতে রাজি নয়। সংকট বাড়ছে : আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, তিনটি দেশের কঠোর অবস্থান এবং গভীর সমুদ্র থেকে দেশগুলোর উপকূলের দিকে আরো বেশ কিছু নৌকা আসতে দেখা যাওয়ায় সাগরে অভিবাসী সংকট আরো তীব্র হতে পারে। সংস্থাটির হিসাব মতে, এ পর্যন্ত তিন হাজার অভিবাসী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে। আর এখনো সাগরে ভাসছে প্রায় ছয় হাজার অভিবাসী। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন জানিয়েছে, অভিবাসীদের কোথাও আশ্রয় না দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে খাবার শেষ হয়ে আসার কারণে মানবিক বিপর্যয়ও আরো বাড়তে পারে। সংস্থাটির মতে, সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত তাদের উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করা। এ বিষয়ে ব্যাংককে বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন হেড জানান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী ভর্তি আরো নৌকা তিনি ইন্দোনেশিয়ার দিকে আসতে দেখেছেন। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড- এই তিনটি দেশের উপকূলের কাছে আন্দামান সাগরে এখনো ভাসছে হাজার হাজার লোকভর্তি নৌযান। এই অভিবাসীদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। বান কি মুন আরো উদ্বিগ্ন : আন্দামান সাগরে মানবিক সংকট আরো তীব্র হওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব চরম উদ্বিগ্ন। তিনি সাগরে আটকে পড়া অভিবাসীদের উদ্ধারে জাতিসংঘের সহায়তার প্রস্তাব করেছেন। এ বিষয়ে তিনি ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। বানের মুখপাত্র জানান, ফোনালাপে সব নেতাই মানুষের জীবনরক্ষার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন। মিয়ানমারের উপলব্ধি : গত ১ মে থেকে আন্দামান সাগরে মানবিক বিপর্যয় দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার জানিয়ে আসছিল, অভিবাসী সংকটের দায় তাদের নয়। তবে মিয়ানমারের তথ্যমন্ত্রী গতকাল বিবৃতিতে বলেন, 'সাগরে মানুষগুলোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বিষয়টি' তাঁর দেশ উপলব্ধি করতে পারছে। ওই সমস্যার জন্য মিয়ানমারকে দোষারোপ না করে আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে সমস্যার সমাধান করা উচিত। থাইল্যান্ডে মূল সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার : থাইল্যান্ডের জঙ্গলের বন্দিশিবিরে অভিবাসীদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পেছনে মূল সন্দেহভাজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও সাতুন প্রদেশের সাবেক প্রশাসনিক সংস্থার প্রধান পাচুবান অংকাচোতিফান গতকাল সকালে থাই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে পাচুবানের ৮১ মিলিয়ন বাথের সম্পত্তি জব্দ করেছে। শিবিরে রোহিঙ্গা-বাঙালি আলাদা : শুক্রবার উদ্ধারের আগে নৌকায় খাবার নিয়ে মারামারির কারণে ১০০ জন অভিবাসীর মৃত্যুর খবরে এখনো রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের মধ্যে ফের মারামারি হতে পারে- এই আশঙ্কায় তাদের আচেহ প্রদেশের শিবিরে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। আশ্রয় দেবে ফিলিপাইন : ফিলিপাইনের যোগাযোগমন্ত্রী হারমিনিও কোলোমা জানান, তাঁর দেশ আন্দামান সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের আশ্রয় দিতে প্রস্তুত, যদি তারা আশ্রয় চায়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, ব্যাংকক পোস্ট।

No comments:

Post a Comment