দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার পরিবহন ধর্মঘট আজ রোববার ষষ্ঠ দিনে পড়েছে। নতুন করে রাজশাহী অঞ্চলে কাল সোমবার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। যাত্রীদের জিম্মি করে চলা এই ধর্মঘট এখন প্রশাসনের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে। ফরিদপুরের মধুখালীতে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাসচালক, সহকারী ও চেকারকে গত সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতে পরদিন মঙ্গলবার থেকে খুল
না বিভাগের ১০ জেলায় আন্তজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধের ডাক দেয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়নি। এই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের কোনো বৈঠকও হয়নি। উল্টো ধর্মঘট আহ্বানকারীরা তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অতীতে দেখা গেছে, ধর্মঘট ডেকে মালিক-শ্রমিকেরা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এবারও এই তিন মন্ত্রীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন মালিক-শ্রমিকনেতারা। কিন্তু এখনো বৈঠকের দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। কারণ, পুলিশ ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। আর মালিক-শ্রমিকেরাও আটক পরিবহনশ্রমিকদের মুক্তির নিশ্চয়তা নিয়ে নিজেদের ‘বিজয়ী’ হিসেবে হাজির করতে চান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কমিটি ধর্মঘটের মূল আহ্বানকারী। রাজশাহীতেও এই সংগঠনের আঞ্চলিক কমিটি কর্মবিরতি ডেকেছে। এই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। আঞ্চলিক পর্যায়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হলেও এতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সায় আছে এবং আস্তে আস্তে বিভিন্ন জেলায় তা বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা আছে। মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে মালিক-শ্রমিকনেতারা মিলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন। তবে এখনো কোনো পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যায়নি। দু-এক দিনের মধ্যে একটা সুরাহায় আসার চেষ্টা চলছে। আর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী দাবি করেন, ফরিদপুরের ওই এলাকায় গত নয় মাসে ১৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানা পুলিশের সুনাম নষ্ট হবে বলে মামলা পর্যন্ত নেয় না। এবার চালক-শ্রমিকেরা মামলা করতে গেলে উল্টো তাঁদের ফাঁসানো হয়। এখন চালককে মুক্ত, দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করলেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে। এভাবে তাৎক্ষণিক যাত্রীদের জিম্মি করে ধর্মঘটের যৌক্তিকতা কী জানতে চাইলে ওসমান বলেন, ওই বাসের প্রতিটি যাত্রীর ভিডিও ফুটেজ আছে। কয়েকজন যাত্রীর পাসপোর্ট নম্বরও আছে। এরপরও শ্রমিককে ফাঁসিয়ে দিলে তো কিছু করার থাকে না। যাত্রী ভোগান্তি: আমাদের কুষ্টিয়া অফিস জানায়, ধর্মঘটের কারণে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার ১৮টি পথে বাস চলাচল বন্ধ আছে। তবে রাতে দূরপাল্লার অল্প কিছু বাস ছাড়ছে। গতকাল দিনে চৌড়হাস কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মজমপুর বাস কাউন্টার থেকে ঢাকাগামী কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইল-খুলনা ও নড়াইল-যশোরসহ জেলার নয়টি অভ্যন্তরীণ পথে বাস ও মিনিবাস এবং নড়াইল-ঢাকাগামী সমস্ত পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেকে অতিরিক্ত অর্থ ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নছিমন, করিমনসহ বিভিন্ন স্থানীয় যানবাহনে চলাচল করেন। যশোর অফিস জানায়, ধর্মঘট আহ্বান করা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা গতকাল দুপুরে যশোর শ্রমিক ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল আলম বলেন, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন ধর্মঘট সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সোমবার কর্মবিরতি: রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মহাসড়কে পরিবহনশ্রমিকদের হয়রানির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রাজশাহী আঞ্চলিক কমিটি আগামীকাল কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় কমিটির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ প্রথম আলোকে জানান, ঢাকা থেকে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি একটি ফ্যাক্স বার্তায় সোমবার কর্মবিরতি পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
No comments:
Post a Comment