রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীতে ভাড়াটের বেশে ঘরে ঢুকে গত শুক্রবার রাতে বাড়িওয়ালার মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। নিহত মেয়েটির নাম সৈয়দা সাবেকুননাহার (৩৫)। মা-বাবার সঙ্গে তিনি উত্তর যাত্রাবাড়ীর রজনীগন্ধা সড়কের ৭৬ /১/এল/১৩ নম্বরে নিজেদের বাড়িতে থাকতেন। তাঁর বাবা এস এম কামরুজ্জামান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। খবর পেয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে সাবেকুনের ভগ্নিপতি জসীম উদ্দ
িন খান ওয়ারী থেকে যাত্রাবাড়ীতে শ্বশুরবাড়িতে যান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, গত বৃহস্পতিবার দুই যুবক এসে সাবেকুন নাহারের মা তহুরা খাতুনের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চান। ১ জুন ওই বাসায় ওঠার কথা বলে তারা অগ্রিম তিন হাজার টাকা তহুরার কাছে দিয়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ওই যুবকেরা ফিরে এসে বলেন, ‘আন্টি, আমাদের থাকার একটু সমস্যা হচ্ছে, আজ থেকে আপনার বাসায় থাকতে পারলে সুবিধা হতো।’ তহুরা জানান, নিচতলায় নির্মাণকাজ চলছে। তবে তারা তৃতীয় তলার খালি বাসায় থাকতে পারবে। এরপর তারা কিছু পুরোনো বই, ব্যাগ ও কাঁথা-কম্বল নিয়ে সেখানে ওঠে। জসীম উদ্দিন জানান, শুক্রবার সকালে যুবকেরা বাইরে গেলেও তারা রাত ১০টার দিকে ফিরে তাঁর শ্বশুরের বাসার দরজায় করা নাড়ে। এ সময় সাবেকুন দরজা খুলে দেন। তাঁর শাশুড়ি এসে জানতে চান, তারা কেন এসেছে। এ সময় ওই দুই যুবক বলেন, ঘরে ফ্যান (বৈদ্যুতিক পাখা) লাগাবে, কিন্তু কোথায় থেকে বিদ্যুতের লাইন নেবে বুঝতে পারছে না। কথা বলতে বলতেই তারা সাবেকুন ও তাঁর মাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতর ঢুকে পড়ে। তাদের পেছনে আরও ছয়-সাতজন ঢোকে। তাদের হাতে ছিল চাপাতি, রশি ও স্কচটেপ। বাসায় ঢুকে তারা ধারালো অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। তারা প্রথমে তহুরাকে রশি দিয়ে তাঁর হাত ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। এরপর সাবেকুনকে পাশের একটি ঘরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। সাবেকুনের পারিবারিক সূত্র জানায়, তহুরা ডাকাতদের অনুরোধ করেন, ‘তোমাদের যা লাগে নিয়ে যাও, কিন্তু কারও কোনো ক্ষতি করো না।’ এরপর তারা বাসার মালপত্র লন্ডভন্ড করে নগদ ৮৫ হাজার টাকা, সাত ভরি স্বর্ণালংকার, দুটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, একটি আইপ্যাড, চারটি মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। ডাকাতেরা বাসার ভেতরে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ডাকাতি করে। ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে সাবেকুনের অসুস্থ বাবা কামরুজ্জামানকেও চুপ থাকতে বাধ্য করে। দুর্বৃত্তরা চলে গেলে সাবেকুনের মা একটা ব্লেড জোগাড় করে নিজের হাতের বাঁধন কেটে অন্যদের বন্ধনমুক্ত করেন। তারপর চিৎকার চেঁচামেচি করলে তিনতলার ভাড়াটেরা ছুটে আসেন। পরে তারা বাসার একটি কক্ষের খাটের ওপর তোশক চাপা দেওয়া অবস্থায় সাবেকুনকে নিথর পড়ে থাকতে দেখতে পান। তাঁর হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ লাগানো ছিল। পুলিশ জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে ও পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। জসীম উদ্দিন খান জানান, সাবেকুন ১০ বছর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভাই সোহেল উজ জামান দেশে ফিরবেন। এরপর সাবেকুনের লাশ দাফন করা হবে। স্বজনেরা জানান, সাত-আট বছর আগে সাবেকুন নাহারের বিয়ে হয়েছিল। কিছুদিন না যেতেই স্বামীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়। তিনি তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। তাঁর এক ভাই ও এক বোন যুক্তরাষ্ট্রে ও আরেকজন স্বামীর সঙ্গে ওয়ারীতে থাকেন। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকর কর প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভাড়াটেরা ডাকাত বেশে সাবেকুনদের বাসা ভাড়া নিয়েছিল। লুট হওয়া টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ ডাকাতদের গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি (মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ) পুলিশের কয়েকটি দল অভিযান চালাচ্ছে। তিনি জানান, ভাড়া নেওয়ার সময় তারা যে ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিয়েছিল, তা ভুয়া।
No comments:
Post a Comment