আগাম বন্যার পানি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন নদীতে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিপৎসীমার ওপরে উঠে যাচ্ছে একের পর এক নদ-নদীর পানি। বন্যা বিশেষজ্ঞরা
বলছেন, ভারতের আসাম-মিজোরামে গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টির প্রভাবে বাংলাদেশকে এমন আগাম বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। আগাম বন্যার প্রভাবে মানুষের ভোগান্তিও অনেক বেশি বেড়ে যায়। এ ছাড়া এবার বন্যাকবলিত এলাকায় নদ-নদীর ভাঙন অন্য সময়ের চেয়ে মারাত্মক রূপ নিতে পারে। ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন-ওয়ারপোর সাবেক মহাপরিচালক ও বন্যা বিশেষজ্ঞ ড. সেলিম ভূইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর ভারত-বাংলাদেশে আগের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও এর সঙ্গে বন্যার অবস্থানগত মিল নেই। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, আগাম বন্যায় পানি যতটা না বিপৎসীমার ওপর দিয়ে ওঠে তার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি অনুভূত হয় মানুষের। সাধারণত প্রথম দিকের বন্যায় মাটি দ্রুত নরম হয়ে নদীর তীরে বেশি মাত্রায় ভাঙন তৈরি করে। এদিকে অন্য যেকোনো দুর্যোগের চেয়ে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে বন্যার প্রভাব খুবই বেশি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টার-বিডিপিসির পরিচালক মুহাম্মদ সাইদুর রহমান। গতকাল র্যাডিসন হোটেলে বন্যা প্রস্তুতি বিষয়ক এক সেমিনারে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বন্যা সবচেয়ে বড় দুর্যোগ বলে চিহ্নিত হবে। তাই বন্যার শুরু থেকেই এ থেকে মানুষকে রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেলিম ভূইয়া বলেন, অন্য যেকোনো দুর্যোগ কম সময়ে শেষ হয়। কিন্তু বন্যা যেমন বেশি সময় নেয়, তেমনি এর ক্ষয়ক্ষতির প্রভাবও মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডাব্লিউসি) সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশের ৪০টি জেলাই প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বন্যার ঝুঁকির মুখে পড়ে। এর মধ্যে দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চল মৌসুমি বন্যা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। একই সূত্র জানায়, গত তিন দিনের বৃষ্টির প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। বৃষ্টি কমলে বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটবে আশা করলেও বন্যাপ্রবণ অনেক এলাকায় বৃষ্টি আরো বাড়ছে। এফএফডাব্লিউসির ৮৪টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুসারে গতকাল রবিবার ৫০টি পয়েন্টের পানি বিভিন্ন হারে বেড়েছে এবং ২৮টি নদীর পানি কমেছে। তবে এর মধ্যে পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এফএফডাব্লিউসি সূত্র অনুসারে, বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কানসা নদীর জারিয়াজঞ্জাল পয়েন্টের পানি। এরপরই বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে সুরমা নদী সুনামগঞ্জ পয়েন্টে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার, যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি এবং বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৪ ও ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সূত্র জানায়, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় টাঙ্গাইলে ১৫০ মিলিমিটার। এরপর রয়েছে সিলেটে ১১৭, কানাইঘাটে ১০২ মিলিমিটার। এফএফডাব্লিউসির কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, 'অন্যবার সাধারণত জুনের শেষে বা জুলাইয়ে বন্যার ঝুঁকি নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকতাম। কিন্তু এবার ওই সময়ের আগেই বন্যা হয়েছে।' এদিকে ইতিমধ্যে বন্যার কবলে পড়া এলাকাগুলোতে নানা ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার ফলে কেবল ডায়রিয়াই নয়, আরো কিছু রোগবালাই দেখা দেয়। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে কিংবা দূষিত পানি পানের কারণেই ডায়রিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। একইভাবে পানিবাহিত অন্যান্য জীবাণুনির্ভর রোগবালাই লেগে থাকে দূষিত পানির কারণে। এ ক্ষেত্রে বন্যাকবলিত এলাকায় দ্রুত নিরাপদ পানি ও ওষুধ সরবরাহের তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের সামসুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে পূর্বনির্ধারিত জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য টিম কাজ শুরু করেছে।
No comments:
Post a Comment