ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) দুই কিশোরীর সময় কাটছে চরম শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায়। তাদের পরিবারে চলছে চাপা ক্ষোভ, কষ্ট আর কান্না। মিরপুর ও উত্তরার পৃথক ঘটনায় দুটি মামলা হলেও গত পাঁচ দিনের তদন্তে ফলাফল শূন্য। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত নিয়েও ভয়ে আছে ওই দুই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা। তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, এ ঘৃণ্য ঘটনায়ও পুলিশ আর্থি
ক সুবিধা নিয়েছে! নির্যাতিতা গার্মেন্টকর্মীর ফুফু পারুল বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, বখাটে ফরিদ গ্রেপ্তার না হওয়ায় তিনি ও পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে আছে। ওই বখাটের সহযোগীদের ভয়ে বাসা থেকে বের হওয়াও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে গেলে তারা নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। উল্টো পুলিশকে নিয়েই ভয়ে আছে তারা। উত্তরায় কলেজছাত্রী অপহরণের পর নির্যাতনের ঘটনায় তার মা জানান, ঘটনার পর পরই পুলিশকে জানানো হলেও তাঁর মেয়েকে অক্ষত উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাদেরও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ওসিসির সমন্বয়ক বিলকিস বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই কিশোরীই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মিরপুরে গার্মেন্টকর্মীকে ফরিদ ও তার এক সহযোগী ধরে নিয়ে যায়। আর উত্তরায় কলেজছাত্রী অপহরণের ঘটনায় ক্যামব্রিয়ান কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জড়িত থাকতে পারেন বলে কলেজছাত্রী ও তার পরিবার থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে। ওই কলেজের এক শিক্ষক মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু একই কলেজের কর্মকর্তা মাহফুজের সঙ্গে তাঁর বিয়ের আয়োজন চলছিল। অপহরণের ঘটনায় ওই শিক্ষকদের হাত থাকতে পারে। ক্যামব্রিয়ান কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, কলেজছাত্রী অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিপ্লব নামের এক শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তরা থানার ওসি শাহাদত হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর থকেই আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে। সন্দেহভাজন শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার প্রথম দিনই উত্তরা এশিয়ান স্কাই শপ নামের একটি দোকানের মালিক রুম্মনকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য মেলেনি। শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’ তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ঘটনার শুরু থেকেই পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনার রাতে উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টরে রাত ৮টা থেকেই দূর্বৃত্তরা অপেক্ষায় ছিল। আশপাশেই থানা ও র্যাব অফিস থাকলেও অপরাধীরা মেয়েটির হবু বর ও মাকে মারধর করে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। তবে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আটক রুম্মন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে অপহরণ হওয়া কলেজছাত্রীর বিয়ের কথা হয়েছিল। তবে অপহরণ ঘটনায় জড়িত থাকার দায় সে এখন পর্যন্ত স্বীকার করেনি। তদন্তসংশ্লিষ্টদের মতে, বেশ কয়েকটি কারণ সামনে রেখে কলেজছাত্রীর রহস্যজনক অপহরণের ঘটনার তদন্ত চলছে। ব্যক্তিগত বিরোধের পাশাপাশি ছিনতাইকারীরাও ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ঘটনার দিন কলেজছাত্রীকে অপহরণের সময় তার মায়ের কাছে থাকা বেশ কিছু স্বর্ণালংকারও অপহরণকারীরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পারিবারিক সূত্র জানায়, হবু স্বামী মাহফুজুল হক ও মাকে সঙ্গে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে উত্তরার হেল্প এশিয়া ফুড থেকে হেঁটে বাসায় ফিরছিল ওই কলেজ ছাত্রী। এ সময় উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টরে ওত পেতে থাকা তিন যুবক ফাতেমাকে অপহরণের চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিলে ঘটনাস্থলের কাছের একটি বাসার নিরাপত্তাকর্মী লিটন এগিয়ে এলে তাঁকে গুলি করে অপহরণকারীরা। এ সময় মাহফুজকেও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে যখম করে অপহরণকারীরা। গুলিবিদ্ধ লিটনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাতেই উত্তরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে ছাত্রীর পরিবার। ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক দল। দুর্বৃত্তরা ভোরে কলেজছাত্রীকে উত্তরার একটি রাস্তায় ফেলে গেলে পুলিশ উদ্ধার করে। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে নেওয়া হয়। এর এক দিন আগে মঙ্গলবার রাতে মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে এক গার্মেন্টকর্মীকেও অপহরণ করে মাইক্রোবাসে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় মিরপুর থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বখাটে ফরিদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ঘটনার পর পরই ফরিদ ও তার সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে।
No comments:
Post a Comment