Sunday, July 6, 2014

বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা জনদুর্ভোগ:নয়াদিগন্ত

বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কি মূল সড়ক, কি নিম্নাঞ্চল সব জায়গা তলিয়ে যাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। প্রতি বছরই এ অবস্থা চলে আসছে। কিন্তু এ থেকে মুক্তির উপা
য় মিলছে না। বরং প্রতি বছরই বর্ষার আগে বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ভোগান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজধানীতে গতকাল সকাল থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি নামে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এরপর বেলা দেড়টা পর্যন্ত থেমে থেমে আরো বৃষ্টিপাত হয়। এতে রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়, শান্তিনগর, কাকরাইল, রাজারবাগ, গুলিস্তান, খিলগাঁও, মানিকনগর, মুগদা, তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশান-১, মিরপুর, পান্থপথ, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার চানখারপুলের নাজিমউদ্দিন রোডসহ বেশির ভাগ এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। শুধু নিচু এলাকার অলিগলি নয়, রাজধানীর মূল সড়কগুলোতেও হাঁটুপানি জমে। কোথাও কোথাও জমে কোমর সমান পানি। মালিবাগ, শান্তিনগর ও রাজারবাগ এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়টি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেও জনবহুল এসব সড়কে হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। গতকাল মালিবাগ থেকে রাজারবাগ সড়কের পানি উপচে একপর্যায়ে পুলিশ লাইনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। একই অবস্থা পানি জমে যাওয়া সব সড়কেরই। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায় কোমর সমান পানির মধ্যেই ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করছে। অনেক দোকানে পানি ঢুকে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সর্বত্রই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মূল সড়কগুলো, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মূল ফটক ও মাঠ, জহুরুল হক হলের সামনের অংশ ও মাঠ, মল চত্বর, জসীমউদ্দীন হল ও  মহসীন হলের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। সকালের টানা বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েন অফিসগামীরা। ছাতা নিয়ে বের হলেও রাস্তায় নেমেই গণপরিবহন সঙ্কটে পড়েন। এ সুযোগ নেন রিকশা ও সিএনজি চালকেরা। দ্বিগুণ, তিন গুণ ভাড়া আদায় করেন তারা। যারা অতিরিক্ত টাকা দিতে পারেননি তাদের হেঁটেই অফিসের যেতে হয়। হাঁটতে গিয়েও বিড়ম্বনার শেষ নেই। ফুটপাথেও পানি উঠে যাওয়ায় জুতা হাতে নিয়ে কাদাপানিতে পথ চলতে হয়। বৃষ্টির কারণে মার্কেটগুলোর সামনে পানি জমে যাওয়ায় ক্রেতাসমাগম কমে যায়। ফলে কেনাকাটাও ভাটা পড়ে। দোকানিদের মুখে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। মৌচাক মার্কেটের জিন্স প্যান্ট বিক্রেতা আমিনুর রহমান জানান, ঈদ উপলে শুক্রবার বেশ ভালো বিক্রয় হয়েছে। তবে গতকাল শনিবার ক্রেতা খুবই কম ছিল। বৃষ্টিতে হয়তো এটি হয়েছে। এখানে বেলা আড়াইটার দিকে মূল সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা যায়। এ দিকে ফুটপাথের দোকানিরাও বিপদে পড়েন টানা বৃষ্টিতে। পলিথিন দিয়ে মালামাল ঢেকে রেখে নিজেরা বড় মার্কেটের নিচে বা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। একে তো ক্রেতা নেই, অন্য দিকে বৃষ্টিতে ভিজে যায় তাদের মালামাল। ফুটপাথ দোকানি শরিফ বলেন, ঈদ এলেই তাদের একটু ব্যবসায় হয়। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়েও অনেকে বিপাকে পড়েন। একে তো রমজান তার ওপর বৃষ্টি হওয়ায় চড়া দাম হাঁকান সবজিবিক্রেতারা। কাঁচাবাজারগুলোও কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।  শান্তিনগর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, অনেক দোকানে পানি উঠে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েন ুদ্র ব্যবসায়ীরা।  গতকাল টানা বৃষ্টিতে গণপরিবহন সঙ্কট দেখা যায়, আবার কোথাও পানির মধ্যে চলতে গিয়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। মতিঝিল এলাকায় সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অপো করার পর মহাখালীগামী বাস পান বিল্লাল হোসেন। ১২টার দিকে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটে বাস থেকে নামার পরই একটি দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থেকে নিজেকে রা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। বিল্লাল হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা আর কাদাযুক্ত রাস্তায় হাঁটা যাচ্ছে না। এ দিকে বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপো করতে হচ্ছে। সময়মতো পৌঁছাতে না পারার কারণে আজ কাজটা করতে পারলাম না। মিরপুর থেকে বনানী আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায় হাবিবের। তিনি জানান, মিরপুরের প্রধান প্রধান সড়কের বেশির ভাগই বৃষ্টিতে ডুবে গেছে। ফলে গাড়িসহ সাধারণ মানুষ রাস্তায় চলাচল করতে পারছেন না। চরম অসুবিধায় পড়েন রাস্তায় বের হওয়া মানুষ। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলায় বিপাকে পড়েন পথচারীরা। এক দিকে সময়মতো যানবাহন পাননি, অন্য দিকে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাবেন সেই উপায়ও নেই। বনানী থেকে মহাখালীর আমতলীতে হেঁটে আসতে শামীমের সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। শামীম জানান, খুবই বাজে অবস্থা। বৃষ্টি হলেই সংস্থাগুলোর কাজের কথা মনে পড়ে। কিন্তু পথচারীরা যে ভোগান্তিতে পড়েন তা কেউ বোঝার চেষ্টা করেন না। বেলা আড়াইটার দিকে দেখা যায়, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মগবাজার থেকে আমিরুল ইসলামের কাকরাইল পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়। প্রতিটি মোড়ে তাকে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ এলাকার সড়কে প্রায় হাঁটুপানি জমে ছিল। প্রতি বছর বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু কোনো সমাধান মিলছে না। বরং ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মাত্র ৩০ ভাগ এলাকায় বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য ড্রেন রয়েছে। বাকি ৭০ ভাগ এলাকায় এ সুবিধা নেই। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, এমনকি ড্রেনও তৈরি করা যায় না বলে অভিযোগ ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। বৃষ্টিতে হঠাৎ জলাবদ্ধতা দেখা দিলে ওয়াসা পাম্প দিয়ে পানি অপসারণের চেষ্টা করে। কিন্তু পাম্প করে পানি ফেলার জন্য খাল বা তেমন কোনো বড় জলাধার না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় ওয়াসাকে। রাজধানীর বেশির ভাগ খালই দখল হয়ে গেছে। আর যে দু-একটি আছে তাও অনেক সরু হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে পাম্প দিয়েও সব জায়গার পানি অপসারণ করা যায় না। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওয়াসা আগামীতে কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে একটি স্থায়ী পানি অপসারণ পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা নিলেও তাতে খুব বেশি সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন না সংশ্লিষ্ট অনেকে।

No comments:

Post a Comment