Sunday, July 6, 2014

রহস্যাবৃত উত্তরার ফাতেমা অপহরণ:নয়াদিগন্ত

রহস্যাবৃত হয়ে পড়ছে উত্তরার কলেজছাত্রী ফাতেমা অপহরণ। পুলিশ নিশ্চিত হতে পারছে না কারা এই অপহরণের সাথে জড়িত। মুখ খুলছে না ফাতেমা নিজেও। অপহরণকারীদের খুঁজে পেলেই খোঁজ মিলবে লিটন হত্যাকারীদের। ফাতেমাকে বাঁচাতে গিয়েই নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন লিটন। পুলিশ বলছে সব কিছু হাতের নাগালে পেয়েও যেন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ফাতেমাকে অপহরণ, লিটনকে হত্যা, আবার নাটকীয়ভাবে ফাতেমাকে উদ্ধারের ঘটনায় সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করা
হলেও পুলিশ তাদের বিস্তারিত পরিচয় বলছে না। পুলিশ বলছে, প্রেমঘটিত কারণে অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে ফাতেমার কোনো প্রেমিক এই ঘটনার সাথে জড়িত কি না এ ব্যাপারে সে কিছু বলতে পারছে না। এমনকি এ ঘটনার সাথে জড়িত অভিযোগে যে চারজনকে আটক করা হয়েছে তারা কারা, এ ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু সে ব্যাপারেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলছেন না তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এসব তথ্য ডিএমপির মিডিয়া সেন্টার থেকে নিতে হবে। আবার মিডিয়া সেন্টার বলছে, পুরো তথ্য তাদের কাছে পৌঁছেনি। ফলে ফাতেমা অপহরণ ও লিটন হত্যাকাণ্ডের পুরো বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে।  এ দিকে পুলিশের অপর কয়েকটি সূত্র বলছে, ঘটনার মূল নায়িকা ফাতেমা বিষয়টিকে জটিল করে ফেলছে। অপহরণের শিকার মেয়েটি ঘটনা সম্পর্কে অসংলগ্ন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে পুলিশকে। ফাতেমা প্রথমে পুলিশকে বলেছিলেন, তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। আবার বলছে যৌন নির্যাতন করা হয়নি। কখনো বলছে, অপহরণের সময় তার চোখ বাঁধা ছিল, কখনো বলছে চোখ খোলা ছিল। কখনো বলছে, কারা তাকে অপহরণ করেছিল তাদের চিনতে পারেনি। আবার রহস্যজনকভাবে চুপ করে থাকছে। এতে করে মূল ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না পুলিশ। তবে মেয়েটির বন্ধু, শিক্ষকসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রেমের প্রস্তাবের নামে মেয়েটিকে যারা হয়রানি করে আসছিল তাদের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কলেজছাত্রী ফাতেমার পরিবার নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা।  এ দিকে ঘটনার শিকার মেয়েটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। গতকাল মেয়েটির বয়স নির্ধারণ, ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার ফল জানতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ওসিসি কর্তৃপক্ষ। তবে ওসিসির একটি সূত্র জানায়, পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে মেয়েটিকে যৌন নির্যাতনের আলামত পাওয়া গেছে। অপহরণ ও নির্যাতনের কোনো ভিডিওচিত্র ধারণ করার কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারছে না মেয়েটি। তার পরও ভিডিওচিত্র করা হয়েছে কি না তা যাচাই করে দেখছে পুলিশ। মেয়েটির পারিবারিক সূত্র জানায়, এক মাস আগে মাহফুজুল হকের সাথে মেয়েটির আংটি বদল হয়েছে। ঈদের পরই বিয়ের কথা ছিল। বিয়ে উপলে মেয়েটির মাকে সোনার গয়না দিতে চেয়েছিলেন মাহফুজুল। তাই তিনি হবু স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গয়না কেনার জন্য বের হন। কেনাকাটা শেষে কনে ও শাশুড়িকে নিয়ে ৪ নম্বর সেক্টরের হেলভেসিয়া রেস্তোরাঁয় ডিনারও করেন তারা। মধ্যরাতে রেস্তোরাঁ থেকে হেঁটেই বাসার উদ্দেশে রওনা হন তারা। সূত্র আরো জানায়, ফাতেমার মা নুরুন্নাহার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে উত্তরার একটি বাসায় থাকেন। ফাতেমাও তার মায়ের সাথে ওই বাসায় বসবাস করতেন।  ফাতেমার মা নুরুন্নাহার বলেছেন, এর আগে এশিয়ান স্কাই শপ ব্যবসায়ী রুম্মনের সাথে ফাতেমার আংটি বদল হয়েছিল। পরে বিভিন্ন কারণে বনিবনা না হওয়ায় আর বিয়ে হয়নি। এখন ফাতেমার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হওয়ায় ুব্ধ হয়ে রুম্মন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ছাড়া ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক আদ্রির নামও পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি।  পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি নিশারুল আরিফ বলেন, ফাতেমা একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। তিনি বলছেন অপহরণের পর তার চোখ বেঁধে রাখা হয়। কিছু সময় পরপর অপহরণকারীরা তার চোখ খুলেও রাখে। যৌন নির্যাতনের বিষয়েও দিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। এতে মূল ঘটনার রহস্য বের করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, কলেজশিক্ষক আদ্রিসহ যাদের নাম এসেছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে ওই কলেজছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। এ সময় তার মা নুরুন্নাহার ও হবু স্বামী মাহফুজুল চিৎকার করলে তাদের বাঁচাতে ছুটে যান পাশের বাসার সিকিউরিটি গার্ড লিটন। এ সময় অপহরণকারীরা মাহফুজুলকে কুপিয়ে আহত করে। পরে তারা লিটনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে লিটন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উত্তরার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

No comments:

Post a Comment