চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে আবাসন ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মঙ্গলবার পুলিশের সাত সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে চট্টগ্রাম মেট্্েরাপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এর আগে সোমবার রাতে একই অভিযোগে নগরীর পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন ও কনস্টেবল মোছলেমকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল দুপুরে গোপনয়ীতা বজায় রেখে অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে আদালতে নিয়ে
আসে নগর পুলিশ। বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করা হলে মহানগর হাকিম রহমতউল্লাহ জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। নিহতের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ‘আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু’ নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার কুসুম দেওয়ান। সিএমপি সূত্র জানায়, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেনÑ পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন, বাকলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এনায়েত হোসেন, পাঁচলাইশ থানার কনস্টেবল মিজানুর রহমান, মোসলেম, খোকন মিয়া, গাড়িচালক ও কনস্টেবল আকবর এবং প্রেষণে নিযুক্ত আনসার সদস্য শাহীনূর আলম। পুলিশ সদস্যদের নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে রাখা হয়েছে এবং আনসার সদস্য শহীদুল আলমকে নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের বিবরণ : নিহত ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ৫ জুন সাজেদা বেগম নামে এক গার্মেন্টকর্মী পাঁচলাইশ থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নগরীর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোডের তার বাসায় গত ১৮ জুন গভীর রাতে তাকে গ্রেফতারের জন্য যান তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পাঁচলাইশ থানার এসআই আমির হোসেন। বাসা থেকে বের করে পুলিশের গাড়িতে তোলার পর রোকনুজ্জামান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোকনুজ্জামানের চাচাতো ভাই হারুনুর রশিদ দাবি করেন, গ্রেফতারের জন্য বাসায় প্রবেশ করে পুলিশ রোকনুজ্জামানের বুকে লাথি মেরেছে। এতে তিনি গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতারের সময় পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে গ্রেফতার হন প্রতিবেশী ও বীমা কর্মকর্তা আজিজুল হক। রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতারের পর সোর্স জামাল তাকে মারধর করেছে। ঘটনার পর পুলিশ সোর্স জামালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে তাকে একটি চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। হত্যা মামলায় পুলিসসহ ১০ আসামি : ২৫ জুন রোকনুজ্জামানের স্ত্রী শিমু আক্তার বাদি হয়ে আদালতে ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে পুলিশ আছেন সাতজন। হত্যা মামলার আসামিরা হলেনÑ পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন, বাকলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো: এনায়েত হোসেন, পাঁচলাইশ থানার কনস্টেবল মিজানুর রহমান (নম্বর-২৩৯০), মোছলেম (৪০৪৫), খোকন মিয়া (৩৯৫৮) ও আনসার কনস্টেবল শাহীনূর আলম (১৯১৬৭৭৫), পাঁচলাইশ থানার গাড়িচালক কনস্টেবল আকবর (৭১৭৮), পুলিশ সোর্স মো: জামাল ও হুমায়ন কবির এবং সাধারণ নাগরিক হারুনুর রশিদ ডিউক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪৪৮, ৩০২, ৩৮০, ৩৫৪ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার কুসুম দেওয়ানকে। নিহতের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ‘আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু’ নিশ্চিত হওয়ার পর গত ৭ জুলাই বিকেলে নগরীর বাকলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে সিএমপি।
No comments:
Post a Comment