Saturday, August 30, 2014

পাকিস্তানে সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা পালনে সম্মত সেনাবাহিনী:নয়াদিগন্ত

পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে সম্মত হয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও আন্দোলনকারী দুই নেতার অনুরোধে সেনাপ্রধান এই ভূমিকা পালনে সম্মত হন বলে জানা গেছে।  এ দিকে গতকাল জাতীয় পরিষদের বক্তৃতা করতে গিয়ে নওয়াজ শরিফ বলেছেন, তার সরকার দেশের বিরাজমান সঙ্কট নিরসনে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানায়নি। বিবিসি ডন নিউজ। প্রধানমন্ত্রী
নওয়াজ শরিফ ও আন্দোলনকারী দুই নেতা সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান ও কানাডাভিত্তিক ধর্মীয় নেতা মাওলানা তাহির-উল কাদরি সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করে তার সহযোগিতা কামনা করেন। তাদের অনুরোধ বিবেচনা করে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সঙ্কট নিরসন করতে পারবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এর ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর ভূমিকা আবার বেড়ে গেল বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে এক বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন ইমরান খান ও কাদরি। তারা বর্তমানে রাজধানীতে অবস্থান নিয়ে বিােভ করছেন। ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরি গত বৃহস্পতিবার রাতে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের সাথে সাাৎ করে জানান, তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার সময় ‘মধ্যস্থতাকারী ও নিশ্চয়তাদানকারী’ হিসেবে তার ভূমিকাকে স্বাগত জানাবেন। পাকিস্তানের প্রতিরামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতার ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক ও আইনগত ভূমিকা পালন করাটা ইতিবাচক। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও বৈঠক করে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করেন। তিন দিনের মধ্যে সেনাপ্রধানের সাথে এটা ছিল তার দ্বিতীয় বৈঠক।  তা ছাড়া চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিকের (পিএটি) নেতারা দেশটির সেনাপ্রধানের সাথে সাাৎ করেছেন। গতকাল শুক্রবার দল দু’টির নেতারা সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফের সাথে সাাৎ করেন। বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর প থেকে দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সেনাপ্রধান মধ্যস্থতাকারী ও নিশ্চয়তাদানকারীর ভূমিকা পালন করার যে প্রস্তাব দেয়া হয় দল দু’টির শীর্ষনেতা ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরি তা মেনে নিয়েছেন। আর এরপরই সেনাপ্রধানের সাথে সাাতের ঘটনা ঘটল। গতকাল শুক্রবার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল অসিম বাজওয়া বলেন, ইমরান ও কাদরি উভয়েই সেনাপ্রধানের সাথে পৃথকভাবে দেখা করেছেন এবং তারা দু’জনেই চলমান সঙ্কট নিরসনে সরকারের সাথে আলোচনা শুরুর ব্যাপারে পদপে গ্রহণে সম্মত হয়েছেন। বিােভকারী নেতারা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সাথেও সম্ভাব্য সমঝোতা চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ সাাৎ করেছেন। তারা উভয়েই বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। ইরমান ও কাদরি উভয়েই তাদের অনুসারী-সমর্থকদের জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা তারা মেনে নিয়েছেন এবং তাদের দাবির ব্যাপারে কী ফলাফল বেরিয়ে আসে তা দেখার জন্য আরো কিছ ুদিন অপো করবেন। আর কাদরি তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সেনাপ্রধান সমস্যা সমাধানে আমাদের কাছে ২৪ ঘণ্টার সময় চেয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিপিপিসহ অন্যরা ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরির আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেননি। এ দিকে তাহির-উল-কাদরি গত জুনে তার অন্তত ১০ সমর্থককে হত্যার অভিযোগ এনেছেন নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে তিনি মামলাও করেছেন।  সরকার সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতা করতে বলেননি : নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, তার সরকার দেশের বিরাজমান সঙ্কট নিরসনে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানায়নি। আর সেনাবাহিনীও নিজ থেকে ওই কাজে নামার আগ্রহ প্রকাশ করেনি। গতকাল শুক্রবার জাতীয় পরিষদে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা নিয়ে পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা হওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি এ মন্তব্য করলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার একটি ফোন পেয়েছিলেন, যাতে বলা হয়েছিল যে ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরি সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের সাথে দেখা করতে চান। তিনি পার্লামেন্ট সদস্যদের জানান, তিনি বলেছিলেন যে ইমরান ও কাদরি যদি সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠক করতে চান, তবে তাদের তা করতে দেয়া উচিত। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে সেনাবাহিনী তাকে বলেছিল যে রাষ্ট্রীয় ভবনাদি রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিবিদদের তাদের আদর্শ জলাঞ্জলি না দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিপিপি চেয়ারম্যান বেনজির ভুট্টোর সাথে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ইতঃপূর্বে পাকিস্তানি মিডিয়া জানিয়েছিল, নওয়াজ শরিফও সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠক করে তাকে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বলেছেন। সেনাপ্রধানের সাথে তার গতকাল বৈঠক হওয়ার কথা। জিয়ো টিভি জানায়, পাকিস্তান সরকারই সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফকে চলমান অচলাবস্থায় নিরসনে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করতে বলেছে বলে দাবি করেছেন দেশটির আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ দফতর আইএসপিআর-এর ডিজি মেজর জেনারেল সালিম বাজওয়া। তিনি শুক্রবার এক টুইটার বার্তায় এ কথা বলেছেন। জেনারেল বাজওয়া বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার বক্তৃতার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার জাতীয় পরিষদে বলেন, প্রতিবাদকারীদের অনুরোধে সেনাবাহিনী আলোচনায় মধ্যস্থকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান ও পিএটি প্রধান তাহির-উল-কাদরি উভয়েই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করেন। তারা বলেন, সরকারই সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে বলেছিল।

No comments:

Post a Comment