বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যমূলক নীতি বিরাজ করছে। অনুৎপাদনশীল খাতে বিদেশী বিনিয়োগ হলেও সেখানে দ্রুতগতিতে সব ধরনের সার্ভিস নিশ্চিত করা হয়। অথচ দেশীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। প্রতিশ্র“তি দিলেও বড় বড় শিল্প ও প্রতিষ্ঠান করার পর সরকার সহজে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ দিতে চায় না। পদে পদে হয়রানি ও নাজেহাল করা হয়। ওদিকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ হারে ব্যাংক ঋণের সুদ। সঙ্গে যুক্ত
হয়েছে নানা নামে গলাকাটা সার্ভিস চার্জ। চতুর্মুখী এই জাঁতাকলে পড়ে দেশের অনেক বিনিয়োগকারী ঋণখেলাপি হয়ে দেউলিয়া হতে বসেছেন। নানামুখী লোকসানে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান। অথচ সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্বিকার। এদিকে ভুক্তভোগী মহল ও অর্থনীতিবিদদের অনেকে যুগান্তরকে জানিয়েছে, বিনিয়োগে বৈষম্যের এ পরিস্থিতির জন্য মূলত সরকারই দায়ী। সরকারের ভ্রান্ত পলিসির কারণে দেশীয় বিনিয়োগ পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা অবশ্যই সরকারের নীতিনির্ধারক মহল জানে, সময়মতো প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ না দেয়া, ব্যাংক ঋণের অস্বাভাবিক সুদের হার, গলাকাটা সার্ভিস চার্জ, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি অযৌক্তিক অজুহাতে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির উন্নয়ন করতে না দেয়ায় দেশের শিল্পপতিদের অনেকে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। অথচ তারপরও যুগ যুগ ধরে এ সমস্যাগুলো জিইয়ে রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় বিনিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালাও নেই। কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। তাদের জামাই আদরে সব সুযোগ-সুবিধাই নিশ্চিত করা হয়। বিদেশীদের বিনিয়োগে এত সব বাধা ও ঝুঁকি নেই। বিদেশী বিনিয়োগ দেখলেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে। এই বৈষম্যমূলক নীতির কারণে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। দিনকে দিন কর্মক্ষম দক্ষ/অদক্ষ বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদিকে ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীদের অনেকে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের হয় সবকিছু গুটিয়ে নিতে হবে, নতুবা দেশের পরিবর্তে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করতে হবে। তারা বলেন, নেতিবাচক এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে সহায়তার হাত প্রশস্ত করতে হবে। সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে সেবাদানকারী সরকারি অফিসগুলোতে শক্ত হাতে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এর ব্যত্যয় হলে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা এক সময় ক্ষোভ-হতাশায় মুখ ফিরিয়ে নেবেন। বিনিয়োগ নিয়ে এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেয়ার নামে হয়রানি, মাত্রাতিরিক্ত সুদে ঋণ নিতে বাধ্য করা, একেক ব্যাংকে একেক ধরনের সুদ এবং সর্বোপরি বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়ে সরকারি নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্যাংক এর দায় নিতে চায় না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও তদারকির অভাবে ব্যাংকগুলো নানা অজুহাতে উচ্চ হারে সার্ভিস চার্জ কেটে নিচ্ছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কমালেও শিল্প খাতে তা কমানো হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ তিন মাস পরপর মূল ঋণের সঙ্গে সুদ যোগ করে। ফলে সুদের ওপর সুদ আরোপিত হচ্ছে। এতে সুদের হার দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত- যা বিনিয়োগকারীরা দিতে বাধ্য হন। এতে করে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারী শিল্পোদ্যোক্তারাও এখন ঋণ গ্রহণে পিছু হটছেন। ফলে একদিকে যেমন ব্যাংকে অলস টাকার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মূল অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সার্বিকভাবে দেশের উন্নতিও ব্যাহত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিনিয়োগ করলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হয়। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ে। কিন্তু এভাবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি বৈষম্য থাকা ঠিক নয়। তার মতে, দেশীয় উদ্যোক্তাদের বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। সব দেশেই এই নীতি অনুসরণ করা হয়। কেননা তাদের বিনিয়োগের কারণে কোনো ঝুঁকি তৈরি হয় না। যেটা বিদেশীদের ক্ষেত্রে তৈরি হয়। কেননা কোনো কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারী তার পুঁজি নিয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিল্প খাতে উচ্চ হারে সুদ আদায় কোনো মতেই যৌক্তিক নয়। ১৯টি ব্যাংক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণ খাতে সাড়ে ১৫ শতাংশ সুদ আরোপ করেছে। তাদের চিঠি দিয়ে সুদ হার কমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা অমান্য করে উচ্চ সুদ বহাল রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সুদের হার বেঁধে দিতে পারি না। তবে কয়েকটি ব্যাংককে সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে।’ সূত্র মতে, দেশী উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করলেও বিদেশী উদ্যোক্তারা এই খাতে বিনিয়োগ করছে না। তারা কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেশি মুনাফার, বিশেষ করে সেবা খাতে বিনিয়োগ করছে। আর দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়লেও এর বেশির ভাগই টেলিকম খাতে। কিন্তু উৎপাদনশীল খাতে ঝুঁকি থাকায় সেখানে বিদেশী বিনিয়োগ তেমন নেই। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগের জন্য বিদেশীদের বেশি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দেশীয় উদ্যোক্তারা বঞ্চিত। ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নয় বিনিয়োগ বোর্ড। তাদের মতে, বিনিয়োগ নীতিমালা অনুসারে সবার জন্য সমান সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে টেলিকম খাতে যে পরিমাণে বিনিয়োগ হচ্ছে, তার বেশির ভাগ অর্থই লভ্যাংশ হিসেবে তারা নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু কোম্পানি রিজার্ভ ভেঙে লভ্যাংশ দিচ্ছে। শিল্প ঋণ বিতরণের তথ্য : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিল্প ঋণের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি মূলধনী ও মেয়াদী ঋণ ছিল যথাক্রমে ৯১ হাজার ৫০৭ কোটি ও ৩০ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে শিল্প ঋণের ২ দশমিক ২৩ শতাংশ বিতরণ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এছাড়া বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৭৯ দশমিক ৫২, বিদেশী ব্যাংকগুলো ১১ দশমিক ১০, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ২ দশমিক ৬৮ এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ে শিল্প ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে শিল্প ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। বঞ্চিত দেশী বিনিয়োগকারীরা : বাংলাদেশে ব্যবসার সবচেয়ে লাভজনক খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সেবা খাত। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে টেলিযোগাযোগ খাত। এই খাতে দেশী উদ্যোক্তাদের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। সবচেয়ে ভালো খাতটি চলে গেছে বিদেশীদের হাতে। ঝুঁকিপূর্ণ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারের অনুগত কিছু উদ্যোক্তাকে দেয়া হলেও বড় ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ দেশী উদ্যোক্তাদের দেয়া হচ্ছে না। এগুলোও চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে। একই অবস্থা গ্যাস খাতে। বিদেশী সহায়তা নিয়ে গ্যাস খাতে দেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের সক্ষমতা রাখলেও তাদের দেয়া হচ্ছে না। মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে এগুলো চলে যাচ্ছে কমিশনভিত্তিক ব্যবসায়ী ও বিদেশীদের হাতে। এছাড়া দেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে এলেই পদে পদে তাদের হয়রানি করা হয়। বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিপরীতে নানা ধরনের অহেতুক তথ্য চেয়ে সময়ক্ষেপণ করার নজিরও রয়েছে ভূরি ভূরি। বৈধ কোনো কাজও হয় না ঘুষ ছাড়া। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়, যা শুরুতেই উদ্যোক্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। বর্তমানে বৃহৎ বৃহৎ উৎপাদন ও বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও সেখানে গ্যাসের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিশ্র“তি দেয়া হলেও অথচ সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কম দামে গ্যাস দিয়ে তাদের দেশে আনার চেষ্টা করছে। এ ধরনের বৈষম্য দেশী বিনিয়োগকে আরও নিরুৎসাহিত করছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সুবিধা : বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুসারে কোনো বিদেশী উদ্যোক্তা এককভাবে অথবা যৌথ মালিকানায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিনিয়োগ করলে প্রথম ২ বছরের জন্য ১০০ শতাংশ কর অবকাশ, তৃতীয় ও চতুর্থ বছরের জন্য ৫০ শতাংশ এবং পঞ্চম বছরে ২৫ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল বিভাগ এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বিনিয়োগ করলে প্রথম ৩ বছর ১০০ শতাংশ কর অবকাশ, পরবর্তী তিন বছর ৫০ শতাংশ এবং সপ্তম বছরের জন্য ২৫ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়। নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতির জন্য প্রথম বছরে ৫০ শতাংশ অবচয় সুবিধা, দ্বিতীয় বছরে ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ অবচয় সুবিধা দেয়া হয়। উৎপাদিত পণ্যের ৮০ শতাংশের বেশি রফতানি করলে শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং আলাদা বন্ডেড ওয়্যারহাউসিং সুবিধা দেয়া হয়। এছাড়া এলসির বিপরীতে ৯০ শতাংশ ঋণ এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগও রয়েছে। ইপিজেডের বাইরে শতভাগ রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও স্থানীয় বাজারে একই শুল্কে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য বিপণনের সুযোগ দেয়া হয়। সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ৫ থেকে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হয়। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ৭৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে স্থায়ী আবাসন সুবিধা এবং ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। বিদেশী বিনিয়োগ : আঙ্কটাডের তথ্য অনুসারে ২০১৩ সালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের বছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মোট বিনিয়োগ এসেছে ১৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ১২৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আর ২০১১ সালে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। খাতভিত্তিক বিবেচনায় ২০১১ সালে টেলিকম খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার, ২০১২ সালে ৩৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার এবং ২০১৩ সালে ৩২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। তবে কর্মসংস্থানের জন্য সবচেয়ে বড় উৎপাদনশীল খাতে ২০১১ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭০ কোটি ২০ লাখ ডলার। কিন্তু ২০১৩ সালে তা কমে ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ মোট বিদেশী বিনিয়োগ বাড়লেও কর্মসংস্থানের খাতে কমে এসেছে। এছাড়া ট্রেড অ্যান্ড কমার্স খাতে ২০১২ সালে বিনিয়োগ ছিল ১৬ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে তা বেড়ে ৩৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশী ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো। ২০১২ সালে বিদেশী ঋণ অনুমোদন পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ৩৫ কোটি ৫ লাখ ডলার, ওরাসকম টেলিকম (বাংলালিংক) ১৭ কোটি, এয়ারটেল ৩০ কোটি এবং রবি ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন পায়। বিনিয়োগে যেসব দেশ : আঙ্কটাডের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, ইতালি, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাজ্য। দেশের বাইরে মূলধন যাচ্ছে : লভ্যাংশের নামে বিদেশী কোম্পানি বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, নরওয়েভিত্তিক একটি বিদেশী কোম্পানি প্রতি বছর ১৪০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে। কিন্তু তাদের শেয়ার মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে। অর্থাৎ ব্যবসা সম্প্রসারণ না করে, নিজেদের দেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে বিদেশী কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানি রিজার্ভ ভেঙেও লভ্যাংশ দেয়। ২০১০ সালে একটি ফোন কোম্পানি ১২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ওই সময়ও এই কোম্পানি নগদ ১ হাজার ৬২০ কোটি ৩৬ লাখ ২৬০ টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পায় ১৬২ কোটি ৩ লাখ টাকা এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠানটি নিয়েছিল ৯০৪ কোটি টাকা এবং ফোন কোম্পানি পায় ৫৫১ কোটি টাকা। এ সময় তারা নিট লাভ করেছে ১ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে তারা শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশের ১ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা নরওয়েতে গেছে। পাশাপাশি বিদেশী উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত বিনিয়োগের আয়ের কর দেয়ার বিধান না থাকায় প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিনিয়োগ বোর্ডের বক্তব্য : এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য এবং বিদেশী বিনিয়োগ লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাভাস চন্দ্র মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, আমরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করি। কারণ তাদের বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটানো হয়। স্থিতিপত্রের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। আর অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে আমাদের কাছে তাদের একটু অগ্রাধিকার থাকে। বিদেশীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বেশি, এটি ঠিক নয়। শিল্পনীতি অনুসারে সবার জন্য সমান সুযোগ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment