Thursday, August 21, 2014

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয় : রান্নার চুলা জ্বলছে না বহু এলাকায়:নয়াদিগন্ত

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাসসঙ্কট দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি তাল্লো পরিচালিত কুমিল্লার বাঙ্গুরা গ্যাসফিল্ড থেকে হঠাৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় নেমে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরিভিত্তিতে সরবরাহ কমানো হয় চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে। বাঙ্গুরা গ্যাসফিল্ডের গ্যাস সরবরাহ চালু হলেও এখন পর্যন্ত স্বাভ
াবিক হয়নি চট্টগ্রামের গ্যাসের সরবরাহ ব্যবস্থা। গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে চাপ কম (লো প্রেসার) থাকায় নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকার বাসাবাড়ির রান্নার চুলাও দিনভর জ্বলছে না। ফলে নাগরিকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিদিন। এমনিতেই জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের জোগান বাড়লেও চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। এর ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বাঙ্গুরার গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্র“টি দেখা দেয়ায় চট্টগ্রামের নাজুক গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সূত্র মতে, দেশে গ্যাসের সর্বমোট উৎপাদন যখন ১৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল তখন চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করা হতো ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে দেশে গ্যাসের উৎপাদন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়লেও চট্টগ্রামে আগের মতো গড়ে সর্বোচ্চ ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী গতকাল দেশে গ্যাসের উৎপাদন ছিল ২৩২১.৯ মিলিয়ন ঘনফুট। আর চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ দেয়া হয় ২২২ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার অর্ধেক গ্যাস নিয়ে চট্টগ্রামের আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প গ্রাহকদের ভয়াবহ সঙ্কটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। নামমাত্র পৃথক গ্যাস বিতরণ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হলেও গ্যাসের জোগান বাড়ানো হয়নি। ফলে, শুধু গ্যাস সংযোগের অভাবেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনে যেতে পারছে না। গ্যাসসঙ্কটের কারণে বন্ধ রয়েছে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট, সিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি (সিইউএফএল) ও বহুজাতিক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো)। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী গতকাল রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ২৭.৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। সিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১২ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল শূন্য। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। সিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়েছে ২৪.২  মিলিয়ন ঘনফুট। বাড়বকুণ্ড ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (এসআইপিপি) ৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে ৪ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। সিইউএফএল ও কাফকো মিলিয়ে ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গতকাল গ্যাসের সরবরাহ ছিল ৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পর্যাপ্ত গ্যাস ও গ্যাসসংযোগের অভাবে চট্টগ্রামের রফতানিমুখী তৈরী পোশাক খাত, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, আবাসন, স্টিল ও রি-রোলিং মিলগুলোয় মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ফলে উদ্যোক্তারা হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, মূলধনী যন্ত্রপাতি বিনষ্ট, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান হ্রাস এবং ঋণখেলাপিসহ বিপুল আর্থিক তির সম্মুখীন হচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুধু চট্টগ্রামের শিল্প কারখানাগুলো গ্যাস-বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের আওতায় পড়ায় একদিকে উৎপাদনের চাকা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, পাশাপাশি অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বাঙ্গুরার গ্যাস সরবরাহ আবার চালু হলেও সঞ্চালন লাইনে এখনো চাপ কম। পুরোপুরি চাপ স্বাভাবিক হতে আরো কয়েক দিন লেগে যাবে বলে সূত্র জানায়। ফলে ঘাটতির মধ্যেও দুর্ভোগ আরো কিছু দিন সইতে হবে বলে সূত্র জানায়।

No comments:

Post a Comment