Thursday, August 21, 2014

ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসই বিপন্ন করে তুলেছে ন্যান্সির জীবন!:নয়াদিগন্ত

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসই বিপন্ন করে তুলেছে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির জীবন। ১০ মাস ধরে তার স্টেজ শোগুলো বাতিল হতে থাকেÑ সেই সাথে হতাশা চেপে ধরে তাকে। সেই হতাশার কারণেই তার এই আত্মহত্যার চেষ্টা। তবে ন্যান্সির আবেদনÑ তিনি বাঁচতে চান। তাকে বাঁচতে সহায়তা করার কথাও বলেছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী। তবে খোলাসা করে কোনো শক্তির বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেননি। হাসপাতালে চি
কিৎসাধীন থাকার সময় এ নিয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচনাও উঠে এসেছিল। সেসব নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। ১৬ আগস্ট অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে চাপিয়ে দেয়া সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছিলেন তিনি। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তরের পর মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরার ছাড়পত্র পান তিনি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি আশঙ্কামুক্ত। ৬০টি ঘুমের বড়ির প্রসঙ্গটিও বানানো। ন্যান্সির হিসাবে দুই পাতা ঘুমের ওষুধ ছিল বাসায়। তার সবই খেয়েছিলেন তিনি। আত্মহত্যার চেষ্টাকে তিনি দেখছেন দুর্ঘটনা হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমি তো কারো তি করিনি। আমি গান গাই। আমি চলচ্চিত্র, টিভির অনুষ্ঠান এবং অডিও অ্যালবামে গান করছি। কিন্তু একজন শিল্পীর মূল আয় হয় স্টেজ-শো থেকে। অথচ গত ১০ মাসে আমার সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল, শুধু স্টেজ শোগুলো বাতিল হয়ে যায়। এটা আমাকে চরমভাবে হতাশ করে তুলেছে। আমার ঘুম হচ্ছিল না। অনিদ্রা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক ঘুমের ওষুধ দিলেন। আমার স্বামী ময়মনসিংহে চাকরি করেন। গানের জন্য কয়েক মাস ধরে আমি দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় আছি। এ সময় কেমন যেন অনিশ্চয়তা অনুভব করছিলাম। ঈদের পর মগবাজারের ভাড়া বাসা ছেড়ে নেত্রকোনায় মায়ের বাসায় চলে যাই। ভেবেছিলাম আত্মীয়স্বজনের মাঝে থাকলে হয়তো ভালো থাকব। হতাশা চেপে বসবে না। কিন্তু মানসিক অবস্থা এমনি ছিল যে ...’। খোঁজ নিয়ে জানা গেলোÑ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যান্সির ইভেন্ট করার জন্য প্রস্তুত থাকলেও ‘অদৃশ্য ইশারায়’ বদলে যায় সেটি। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সিইও নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, উনি রাজনৈতিকভাবে বিএনপি নেত্রীর প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এ শিল্পী গত বছরের ২১ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে সরকারি দল ও প্রশাসনের রোষানলে পড়েন। ২০০৯ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করা মহাজোট সরকারের আমলে ন্যান্সি তার ওপর পুলিশি হয়রানি ও ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রত্যাহারের জন্য হুমকির মুখে পড়েন। যেটাকে তিনি সে সময় ‘বাকস্বাধীনকতার ওপর হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। একই বছরের ৩১ অক্টোবর জাতীয় প্রেস কাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন ন্যান্সি। তার সোজা কথাÑ ‘রাজনৈতিক অঙ্গন আমার নয়, আমার ভুবন সঙ্গীতের।’ তার মতে, ‘দল হিসেবে বিএনপির প্রতি আমার সমর্থন আছে, কিন্তু ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস ঘিরে কদর্য ভাষায় আমাকে আক্রমণ করা  হচ্ছে এবং নেত্রকোনায় আমার বাসায় পুলিশ গেছে, সে রকম কিছু করেছি বলে আমার মনে হয় না।’ ন্যান্সি সে সময় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসকে একটি সাধারণ মন্তব্য হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়, আমি একজন নাগরিক হিসেবে আমার মতামত প্রকাশ করেছি। এটি ফেসবুকে আরো অনেকে করে থাকেন।’ তিনি সে সময় বলেছিলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ২১ আক্টোবর দেয়া বক্তব্যে শান্তির কথা ছিল। সমঝোতার আহ্বান ছিল। ক্ষমার মহিমা ছিল। অতীতের তিক্ততা ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ছিল। ছিল সবাই মিলে এক সাথে দেশ গড়ার প্রত্যাশা। তিনি সুন্দর এক আগামীর স্বপ্ন তার বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন। সংশয়-আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার এ সময়ে তার শান্তির আহ্বান আমাকে খুবই আশবাদী, উদ্বেলিত ও আলোড়িত করে। আমার সেই আবেগ ও অনুভূতির কথাই তুলে ধরে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আমার এই স্ট্যাটাস বহু মানুষ সমর্থন করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ কেউ খুবই আপত্তিকর, নোংরা ও আক্রমণাত্মক ভাষায় আমার সমালোচনা করেছেন।’ ন্যান্সির মতে, ‘যেকোনো বিষয়ে পক্ষে বা বিপক্ষে মত দেয়ার অধিকার সবারই আছে। সে মতামত অবশ্যই শালীন, শোভন ও যুক্তিপূর্ণ হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যের বিষয় অনেকে শালীনতা ও যুক্তির সীমানা অতিক্রম করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ আমাকে হুমকি দিয়েছেন। গালিগালাজ করেছেন। স্ট্যাটাস প্রত্যাহারের পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ।’ ‘আমি স্তম্ভিত। আমাদের পূর্ব পুরুষরা অনেক ত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ করে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। অনেক রক্তের বিনিময়ে এ দেশে গণতন্ত্র এসেছে। কিন্তু এই পরিবেশ দেখে মনে প্রশ্ন জাগে এই কি গণতন্ত্র? এই কি স্বাধীনতা? যারা দায়িত্বে আছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্নÑ কী আমার অপরাধ?’ নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি বলেন, ‘আমি রাজনীতির মানুষ নই। আমার একটাই পরিচয়, আমি গান করি। আমি একজন শিল্পী। আমি যে গান গাই সেগুলোও রাজনীতির গান নয়। ভালোবাসার, বিরহে গান। সুরে সুরে আমি মানুষের সুখের-দুঃখের অনুভূতি তুলে ধরি। আপনারা অনেকেই আমার গান ভালোবাসেন, শিল্পী হিসেবে আমাকে ভালোবাসেন, সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ ন্যান্সি জানান, ‘তার গানের শ্রোতাদের মধ্যে সব দল ও মতের মানুষ রয়েছেন। তাই তিনি কখনোই রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াননি।’ তবে মানুষের অনুভূতির গাই বলেই তার নিজেরও একটা অনুভূতি আছে বলেন ন্যান্সি। জানান, সবার মতোই দেশটাকে তিনিও ভালোবাসেন। এ দেশে এ সমাজে শান্তি থাককু, সৌহার্দ্য থাকু, প্রীতি থাকুক, ভালোবাসা থাকুক, সমঝোতা থাককুÑ বেশির ভাগ মানুষের মতো এটা আমারো প্রত্যাশা।

No comments:

Post a Comment