Friday, August 29, 2014

চাঁদা না দেয়ায় মগবাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৩ জন নিহত আহত ১:নয়াদিগন্ত

চাঁদা না দেয়ায় রাজধানীর মগবাজারের বাসায় ঢুকে নারীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো একজন। নিহতরা হলেনÑ রানু বেগম ওরফে বৃষ্টি (২৮), তাদের ভাড়াটিয়া মুন্না (২২) ও বিল্লাল (২৫)। আহত হয়েছেন রানুর ভাই হৃদয় (২৫)। গত রাত পৌনে ৮টায় মগবাজার ওয়ারলেস গেটের সোনালীবাগ গলিতে এই ঘটনা ঘটে। রাজাবাজারে চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে তার নিজের বাসায় গলা কেটে হত্য
ার এক দিন পর এই ঘটনা ঘটল। এ দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘এ ঘটনার মানে এই নয় যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ নিহত বৃষ্টির চাচা শাহ আলম সাংবাদিকদের জানান, বৃষ্টির স্বামী আবুল হোসেন পাইকারি ব্যবসা করেন। তারা বৃষ্টির বাবা মৃত নুরুল বক্সের ৭৮ নম্বর সোনালীবাগের তিন তলা বাড়ির নিচতলায় বসবাস করে আসছিলেন। বাকি দুই তলা ভাড়া দেয়া ছিল। তিনি বলেন, সম্প্রতি বৃষ্টির পরিবার সোনালীবাগের বাড়ির পাশে একটি টিনশেড বাড়ি কেনে। শিগগিরই তারা ওই বাড়িতে উঠবেন বলে ভাবছিলেন। কিন্তু বাড়িটি কেনার পর থেকে স্থানীয় সন্ত্রাসী কাইল্যা বাবু তাদের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। কিন্তু বৃষ্টিরা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। এরপর সন্ত্রাসীরা কয়েক দফায় তাদের মোবাইলে ও সরাসরি হুমকি দিতে থাকে। চাঁদা না দেয়ায় গত দুই মাস আগে কাইল্যা বাবুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বৃষ্টিদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে। ওই ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়। কিন্তু ওই মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। তিনি আরো বলেন, গুলির ঘটনার পরও চাঁদা না দেয়ায় গত রাত সোয়া ৮টার দিকে কাইল্যা বাবুর নেতৃত্বে রাসেল, জাহাঙ্গীর, রনিসহ ৮-১০ জন সন্ত্রাসী ওই বাড়িতে হামলা চালায়। তারা কলিংবেল চেপে ভেতরে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এ সময় ভাড়াটিয়া মুন্না ও বিল্লালও এগিয়ে আসেন। ব্রাশফায়ার করায় ওই স্থানে যারা ছিলেন সবাই গুলিবিদ্ধ হন। তাদের ছোড়া গুলি রানুর পেটে ও বুকে, মুন্নার পেটে, বিল্লালের পেটে-বুকে এবং হৃদয়ের হাতে ও পেটে বিদ্ধ হয়। পরে সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। হৃদয়কে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহত রানুর ছোট বোন মাহিনুর বেগম জানান, গত সাত-আট মাস আগে তার পরিবার পাশের একটি টিনশেড বাড়ি ক্রয় করে। ওই বাড়ি কেনার পর থেকে সন্ত্রাসী কাইল্যা বাবু বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে সে চাঁদা দাবি করে। কিন্তু চাঁদা না দেয়ায় এর আগেও তাদের লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। তিনি বলেন, ওই জমি দখল করতে কাইল্যা বাবুর পেছনে অন্য কারো হাত থাকতে পারে।  পুলিশের রমনা জোনের এডিসি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। দুর্বৃত্তরা পিস্তল ও দেশী অস্ত্র ব্যবহার করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে তারা খুব বেশি সময় অবস্থান না করে দ্রুত পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।  ঘটনার পর সিআইডি ক্রাইম সিন টিম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও র‌্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি ছোরা ও সাতটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।  ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আইজিপি : গত রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার। এ সময় প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে তার মানে এই নয় যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান। পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। রাজাবাজার ও মগবাজারে অনাকাক্সিত দু’টি ঘটনা ঘটেছে। আশা করি, শিগগিরই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

No comments:

Post a Comment