Friday, September 19, 2014

পিছু ছাড়ছে না জালিয়াতির আশঙ্কা সক্রিয় বেশ কয়েকটি চক্র:নয়াদিগন্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথমবর্ষ স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য তিনটি ইউনিটের মধ্যে দু’টি ইউনিটের পরীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আর এ দু’টি ইউনিটের পরীক্ষায় জালিয়াতির অতীতের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে জালিয়াতচক্র। ক এবং গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখিয়েছে তারা। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীন খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষা
ঘিরেও বড় ধরনের জালিয়াতির আশঙ্কা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে কারণে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জালিয়াতচক্রও সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। জালিয়াতির সুবিধা নেয়া কিছু শিক্ষার্থী ধরা পড়লেও মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরেই। ক এবং গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে আটক হয়েছে ২৭ জন। এর মধ্যে ২২ জনই ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। বাকি পাঁচজনের মধ্যে একজন একটি কেন্দ্রের কর্মচারী এবং অন্যরা চক্রের মধ্যমসারির সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলো সুবিধাজনক হওয়ায় সেগুলোতে সুযোগ নিচ্ছে এসব জালিয়াতচক্র। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খ-ইউনিটের আসনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি জালিয়াতচক্রের অন্যতম প্রধান টার্গেট। যে কারণে জালিয়াতির একটা বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর সময় থেকে এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এসব কারণে কেন্দ্রের পরিদর্শকদের বিশেষ চিঠি দিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে থাকবে কয়েক স্তরের তল্লাশির ব্যবস্থা। মেয়েদেরকে তল্লাশি করার জন্য থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা। এ ছাড়া অন্যান্য নিয়মিত ব্যবস্থা তো থাকবেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, খ-ইউনিটকে ঘিরে জালিয়াতির বড় একটা আশঙ্কা রয়েছেই। তবে এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।  জানা গেছে, এ বছরের ভর্তি পরীক্ষায় একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় চক্রটি কাজ করছে টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে কেন্দ্র করে। এ পর্যন্ত যে চারজন আটক হয়েছে তারা সবাই এ চক্রের সদস্য। ছাত্রলীগের কলেজ শাখার একাধিক নেতাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই এ চক্রের সাথে জড়িত। এর বাইরে ইডেন কলেজ এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে কেন্দ্র করে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। যেটির সাথে একাধিক নেত্রীর নাম এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটও কাজ করছে। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সাথে জড়িত। এর বাইরে আরো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট চক্র জড়িত রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সূত্র জানিয়েছে। বিগত পরীক্ষাগুলোতে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি কেন্দ্রকে টার্গেট করে জালিয়াতি করেছে চক্রগুলো। এর মধ্যে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ রয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে তাই বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরীার হলে ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন বা টেলিযোগাযোগ করা যায় এরূপ কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস অথবা যন্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর আগেও অসংখ্যবার এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কলা অনুষদের ডিন এবং খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, এ পরীক্ষা তার শিক্ষকতা ক্যারিয়ারের শেষ ভর্তি পরীক্ষা। এটিতে তিনি কোনো ধরনের বিতর্কের আঁচ লাগতে দেবেন না, যে কারণে জালিয়াতি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। ক্যাম্পাসের বাইরের ৯টি কেন্দ্রসহ মোট ৭৩টি কেন্দ্রে খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলবে। দুই হাজার ২২১টি আসনের জন্য এ বছর ভর্তি ইচ্ছুক আবেদনকারীর সংখ্যা ৪১ হাজার ৯৬০ জন। আসনপ্রতি আবেদনের সংখ্যা প্রায় ১৯ জন। হরতাল থাকার কারণে এক দিন আগেই ভর্তি ইচ্ছুকদের অনেকই ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেছেন।

No comments:

Post a Comment