Wednesday, September 24, 2014

কথিত স্ত্রী ও তার মা-বাবা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত:নয়াদিগন্ত

চট্টগ্রামে রহস্যজনক নিহত বিচারক আবু সাঈদের কথিত স্ত্রী সানজিদা আকতার মিশু ও তার মা লাকি আকতারসহ পরিবারের স্বজনেরা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত। মিশুর বড় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছিল হত্যা মামলা। মিশুর মা লাকি আকতারেরও তিন বিয়ে হয়। মিশুর বাবা তার তিন নম্বর স্বামী। অন্য দিকে মিশুর এর আগে আরো দু’টি বিয়ে হয়। এর মধ্যে এক স্বামীর ঘরে দুই বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। হালিশহর মোল্লাপাড়ায় মিশুর মা লাকি আকতারের বাসায়
ছিল রংমহল। মিশু, তার মা লাকি আকতার ও বাবা নাসির উদ্দিন ওই বাসায় নাচ-গান ও মদের আসরে বসতো। বিচারক আবু সাঈদ সেখানে যাওয়া-আসা করত।  মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হালিশহর থানার উপপরিদর্শক অলিউল্লাহ নয়া দিগন্তকে জানান, বিচারক আবু সাঈদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে মিশুর পরিবার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এ পরিবারের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন পশ্চিমা বিশ্বকেও হার মানাবে। তিনি জানান, বিচারক আবু সাঈদের মৃত্যুর পর মিশু, তার মা লাকি আকতার, সৎ ভাই ইমরান হোসেন ও কাজের মেয়ে রিমাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়। আজ তাদের রিমান্ড শেষ হবে। রিমান্ডে তারা বরাবরই বলছে এটি হত্যা নয়, আত্মহত্যা। মামলার বাদি হালিশহর থানার উপপরিদর্শক মুহাম্মদ মুকুল মিয়া নয়া দিগন্তকে জানান, মিশু বিচারক সাঈদকে বিয়ে করেছে বলে দাবি করলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র কিংবা কাবিননামার কপি উপস্থাপন করতে পারেনি। খুনের ব্যাপারেও কোনো ধরনের তথ্য দিতে চাইছে না মা-মেয়ে। দুই দিন ধরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিচারকের মারা যাওয়ার ব্যাপারে নীরব রয়েছে তারা। হালিশহর থানার ওসি আবু মোহাম্মদ শাজাহান জানান, মিশুর মা-বাবার শয়ন ক থেকে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। মিশু ও তার মা লাকি আকতারসহ পরিবারের স্বজনেরা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত এ রকম বেশ কিছু তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে।  রিমান্ডে মিশু ও তার মা : মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে মিশু ও তার মায়ের কাছে একাধিকবার খুনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু বারবারই তারা প্রসঙ্গ এড়িয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেছে, খুন হওয়ার কথা তারা কিছুই জানে না। বিচারক সাঈদ নিজেই রুমের দরজা বন্ধ করে ধারালো কাঁচি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ েেত্র মাথার পেছনে আঘাত পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো জবাব দেয়নি। রিমান্ডে মিশুকে জিজ্ঞাসা করা হয় বিচারক সাঈদের প্রথম স্ত্রী রয়েছেনÑ তার পরও কেন তাকে বিয়ে করা? তা ছাড়া বিয়ে যদি হয়েই থাকে তাহলে তা গোপন করা হলো কেন? বিয়ের কাবিননামার কথা বলা হলেও তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন? জবাবে মিশু জানান, পারিবারিক মান-অভিমান থেকে সাঈদ আত্মহত্যা করেছে। বিয়ের প্রসঙ্গে বলে, আদালতে গিয়ে তার সাথে পরিচয় হয়। সে দেখতে হ্যান্ডসাম। আমারও ভালো লাগে। সেখান থেকে এক দিন বাসার ঠিকানা চায়। আমিও না করিনি। এরপর এক দিন-দুই দিন থেকে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করত। গত জুন মাসে আমরা বিয়ে করি। তবে কাউকেই কিছু জানাইনি। ভেবেছি সময় হলে জানতে পারবে সবাই। তার প্রথম স্ত্রীর বিষয়ে কিছু জানতাম না। মাথায় আঘাত করল কে? রক্ত এলো কোথা থেকেÑ প্রশ্ন করায় মিশু বলে, আমরা তাকে কোনো ধরনের আঘাত করিনি। সে ধারালো কাঁচি দিয়ে নিজেকে আঘাত করে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। কেননা ঘটনার সময় সে বেশ রাগান্বিত ছিল। রিমান্ডে মিশুর মা লাকি আকতার বলে, কে মেরেছে তা আমরা দেখিনি। দরজা ভেঙে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে মেডিক্যাল পুলিশ আমাদের আটকে রাখে। আবু সাঈদের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এটি মিথ্যা নয়। এ ব্যাপারে আর কিছু জানি না। পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে গত জুন মাসে মিশুকে বিয়ে করেন বিচারক কাজি আবদুল হাসিব মো: আবু সাঈদ (৪৫)। মিশুর পৈতৃক বাড়ি কদমতলী পোড়া মসজিদ এলাকায়। এর আগে মিশুর আরো দুই বিয়ে হয়েছিল। বনিবনা না হওয়ায় তাদের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার। এ দিকে দ্বিতীয় বিয়ের পর নগরীর হালিশহর মোল্লাপাড়ার তৈয়ব শাহের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয়তলার ফ্যাট ভাড়া নেন বিচারক আবু সাঈদ। ওই বাসায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রহস্যজনক মৃত্যু হয় আবু সাঈদের। বিচারক সাঈদের প্রথম স্ত্রী মনিকা নওগাঁয় থাকেন। তিনি স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানতেন না। অনিন্দ্য (১২) ও রোসাবা (১০) নামে তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। সুরতহাল প্রতিবেদন : সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবু সাঈদের মাথায় ধাতব পদার্থের জখমের চিহ্ন ও কণ্ঠনালীর নিচে কালো দাগ রয়েছে। পুলিশ জানায়, বিচারক আবু সাঈদের অনুপস্থিতিতে ওই ফ্যাটে চলত মাদকসেবীদের আড্ডা। মিশু ও তার মা লাকি আকতারের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে পুলিশ। জানা গেছে, নিহত বিচারক কাজী আবদুল হাসিব মো: আবু সাঈদ কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। চট্টগ্রামে সিনিয়র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে ভারপ্রাপ্ত সিএমএমের দায়িত্বও পালন করেন। পরে তিনি যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে পটিয়া আদালতে কর্মরত ছিলেন। পটিয়া থেকে নওগাঁ জেলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি হন।

No comments:

Post a Comment