Monday, September 8, 2014

বাংলাদেশের ‘ছাড়’ নিঃশর্ত মনে করে জাপান:প্রথম অালো

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় বড় আকারে সম্পৃক্ত হতে চায় জাপান। এবার ঢাকা সফরের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন সে দেশের ২০টি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা। শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট, জি সেভেন-এর অন্যতম সদস্য জাপানের ব্যবসায়ীরা আস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, এটি বিশ্বের স
ামনে বড় করে তুলতে ধরতে পারে ঢাকা।  জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সংক্ষিপ্ত কিন্তু ‘তাৎপর্যপূর্ণ এ সফরকে এভাবেই মূল্যায়ন করতে চান দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কুনি সাতো। দুই দিনের সফর শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী গতকাল রোববার সকালে ঢাকা থেকে কলম্বো গেছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রাতরাশসভায় প্রথম আলোসহ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে আলাপের সময় কুনি সাতো বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক যথেষ্ট উষ্ণ হওয়াটা স্বাভাবিক। আর এ সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অর্থনীতি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে জাপানের সমর্থনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার কোনো আর্থিক সুবিধা কিংবা দেওয়া-নেওয়ার ভিত্তিতে হয়নি বলেও জাপানের ওই কূটনীতিক দাবি করেন। তাঁর মতে, দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধুত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় জাপানকে নিঃশর্ত সহযোগিতা দিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা ও টোকিওতে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ মেয়াদে জাপানের সমর্থনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মূল ভিত্তিই ছিল বন্ধুর জন্য ত্যাগ স্বীকার। তার পরও এমন সমর্থনের বিনিময়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী নতুন কোনো সহযোগিতার কথা ঘোষণা করুক, এমনটা প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রত্যাশার কথাটা সফরের আগে বাংলাদেশ তুলেছিল জাপানের কাছে। কিন্তু জাপান খুব স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়, ‘শূন্য প্রতিশ্রুতি’ নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের জন্য ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের জন্য এমন কোনো সহযোগিতার কথা ঘোষণা করা হবে না, যা খুব শিগগির বাস্তবায়ন করা যাবে না। গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন নিয়ে সমালোচনায় মুখর থেকেছে জাপান। ২০১৩ সালে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন এ দেশে কর্মরত জাপানের নাগরিকেরা। ওই সময় বৈরী পরিবেশের কারণে বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আটকে থাকার পর দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন জাপানের বিনিয়োগকারীরা। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়। বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি আলোচনা চলতে থাকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে নির্বাচনের প্রসঙ্গটিও। দুই দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাপান এখন মনে করছে, নির্বাচন একতরফা হলেও তা আইনসম্মত ছিল। তা ছাড়া নির্বাচনের পর বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য এ ধরনের পরিবেশ সহায়ক। অন্যদিকে কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখছে চীন। দেশটি বাংলাদেশের বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে। আবার বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলছে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান। গতকাল প্রাতরাশসভায় জাপানের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কেনকো সোনে সাংবাদিকদের জানান, শিনজো আবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন বাংলাদেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের অবনতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। এ পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্য কঠিন বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। শিনজো আবে অবশ্য খুব স্পষ্ট করেই বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে জাপানের নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হোক, এটাই জাপান চায়।

No comments:

Post a Comment