Monday, September 8, 2014

ষোড়শ সংশোধন বিল উত্থাপিত:নয়াদিগন্ত

‘বিচারপতিদের অভিশংসন’ ক্ষমতা সংসদের কাছে দেয়ার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধান বিল গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।  সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর অধিকতর সংশোধনকল্পে ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল, ২০১৪’ নামে বিলটি আনা হয়েছে। এটি উত্থাপন করেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। বিলটি উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক সপ্তাহের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট দেয়ার জন্য আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় স
ম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। বিলটি উত্থাপনের সময় কেউ বিরোধিতা করেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যদের কয়েকজন হাত তুলে সমর্থন জানান ও একইভাবে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর ভোটাভুটির সময়ও জাতীয় পার্টির সদস্যদের কেউ কেউ হাত তুলে সমর্থন করেন। কমিটিতে উত্থাপিত হওয়ার পর টেবিল চাপড়ে তারা বিলটির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। যদিও ইতঃপূর্বে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা বিলটির বিরোধিতা করবে।  বিলটি উত্থাপনের আগে বিলে উল্লিখিত ভূমিকা এবং উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃৃতির চারটি স্থানে শব্দ ও বাক্যগত সামান্য সংশোধন করে উত্থাপন করা হয়।  চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হবে বলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখায় জমা পড়ে। এর আগে গত ১৮ আগস্ট মন্ত্রিসভায় বিলটি অনুমোদন হয়।  বিলটিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ’৭২-এর সংবিধানের এই সংক্রান্ত অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিল পাস হলে বিচারকদের বয়স ৬৭ হওয়া পর্যন্ত পদে বহাল থাকবে। সংসদ বিচারকদের অভিশংসন বা অপসারণের ক্ষমতা পাবে। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের অভিশংসনের মতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের মতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে পঞ্চম সংশোধনীর সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সুপ্রিম জুুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর ন্যস্ত করা হয়।  ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন  সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের স্থলে নতুন ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে এই বিলের ২ ধারায়। প্রতিস্থাপিত অনুচ্ছেদটি হলোÑ  ‘৯৬। বিচারকদের পদের মেয়াদ। (১) এই অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সাপেক্ষে কোন বিচারক সাতষট্টি বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। (২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।  (৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিরূপণ করিবেন।  (৪) কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।’ বর্তমান সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে যা আছে  বর্তমান সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের এই সংক্রান্ত বিধানটি নি¤œরূপ : ‘৯৬। (১) এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেে কোন বিচারক সাতষট্টি বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। (২) এই অনুচ্ছেদের নি¤œরূপ বিধানাবলী অনুযায়ী ব্যতীত কোন বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে না।  (৩) একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকিবে যাহা এই অনুচ্ছেদে ‘কাউন্সিল’ বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাঁহাদের লইয়া গঠিত হইবে :  তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল যদি কোন সময়ে কাউন্সিলের সদস্য এইরূপ কোন বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করেন, অথবা কাউন্সিলের কোন সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোন কারণে কার্য করিতে অসমর্থ হন তাহা হইলে কাউন্সিলের যাহারা সদস্য আছেন তাঁহাদের পরবর্তী যে বিচারক কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ সদস্য হিসাবে কার্য করিবেন।  (৪) কাউন্সিলের দায়িত্ব হইবেÑ (ক) বিচারকগণের জন্য পালনীয় আচরণবিধি নির্ধারণ করা; এবং (খ) কোন বিচারকের অথবা কোন বিচারক যেরূপ পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন সেইরূপ পদ্ধতি ব্যতীত তাঁহার পদ হইতে অপসারণযোগ্য নহেন এইরূপ অন্য কোন পদে আসীন ব্যক্তির সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করা। (৫) যে েেত্র কাউন্সিল অথবা অন্য কোন সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্যে রাষ্ট্রপতির এইরূপ বুঝিবার কারণ থাকে যে কোন বিচারকÑ (ক) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে তাঁহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিতে অযোগ্য হইয়া পড়িতে পারেন, অথবা (খ) গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হইতে পারেন, সেই েেত্র রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করিতে ও উহার তদন্ত ফল জ্ঞাপন করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। (৬) কাউন্সিল তদন্ত করিবার পর রাষ্ট্রপতির নিকট যদি এইরূপ রিপোর্ট করেন যে, উহার মতে উক্ত বিচারক তাঁহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হইয়া পড়িয়াছেন অথবা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হইয়াছেন তাহা হইলে রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা উক্ত বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করিবেন।  (৭) এই অনুচ্ছেদের অধীনে তদন্তের উদ্দেশ্যে কাউন্সিল স্বীয় কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করিবেন এবং পরওয়ানা জারি ও নির্বাহের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের ন্যায় উহার একই মতা থাকিবে।  (৮) কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বারযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।’ বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংসদে উত্থাপিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছেÑ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এর বিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক এবং তাদের পক্ষে এ ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। এর প্রতিফলনে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতিকে সংসদ কর্তৃক অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণ (অনুচ্ছেদ ৫২), সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ (অনুচ্ছেদ ৫৭), সংসদ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সমর্থিত প্রস্তাবের মাধ্যমে স্পিকারকে অপসারণ (অনুচ্ছেদ ৭৪) এবং সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত প্রস্তাবের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণকে অপসারণে বিধান (অনুচ্ছেদ ৯৬) ছিল। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারকে যথাক্রমে অভিশংসন, পদত্যাগ ও অপসারণ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী বিধান অদ্যাবধি অপরিবর্তিত থাকলেও সামরিক শাসক কর্তৃক অসাংবিধানিক পন্থায় সামরিক ফরমান সেকেন্ড প্রোকেমেশন (ফিফথ অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডার, ১৯৭৮-এর সেক্রেন্ড শিডিউল দ্বারা সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে অভিযোগে সংসদ কর্তৃক অপসারণের বিধান পরিবর্তনক্রমে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অপর দু’জন প্রবীণ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর ন্যস্ত করা হয়, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এর চেতনার পরিপন্থী। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সংসদে রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় উচ্চ আদালতের বিচারকদের জবাবদিহিতার নীতি বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিদ্যমান রয়েছে।  এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ’৯৬ পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণকে সংসদের মাধ্যমে অপসারণের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ৭-এর চেতনা পুনর্বহালের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪’-এর বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরো বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নিকট এর জবাবদিহিতা থাকা সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সমুন্নত থাকবে মর্মে বিবৃতিতে আশা করা হয়েছে।  নবম সংসদের বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার মো: আব্দুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে একজন বিচারপতির মন্তব্যের পর বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। এ ছাড়া নবম সংসদে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী চূড়ান্ত করার আগেও বিশেষ সংসদীয় কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এবার বিলটি তৈরির আগে সেভাবে কারো মতামত নেয়া হয়নি। সুজনসহ বিভিন্ন সংগঠন ইতোমধ্যেই জনমত নিয়ে বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা করে বিলটি উত্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন সংসদের বাইরের বিরোধী দল ইতোমধ্যেই সংবিধান সংশোধনী বিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংসদে বিলটির বিরোধিতা করবে বলে আগে জানানো হলেও গতকাল বিলটি উত্থাপনের সময় তাতে সমর্থন দেয়।  প্রথম থেকে পঞ্চদশ সংশোধনী এর আগে সংবিধানে মোট পনেরবার সংশোধনী আনা হয়েছে। সে সংশোধনীগুলো হচ্ছেÑ প্রথম সংশোধনী : ১৫ জুলাই ১৯৭৩ সংসদে ‘সংবিধান (প্রথম সংশোধনী) বিল ১৯৭৩’ পাস হয়। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিধান করা হয়।  দ্বিতীয় সংশোধনী : দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয়, ১৯৭৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। অভ্যন্তরীণ বা বহিরাক্রমণে গোলযোগে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হলে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার বিধান করা হয় ওই সংশোধনীর মাধ্যমে।  তৃতীয় সংশোধনী : ১৯৭৪ সালের ২১ নভেম্বর সংবিধানে তৃতীয় সংশোধনী আনা হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়িকে ভারতের নিকট হস্তান্তরের বিধান করে সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়। সংশোধনী বিলটি পাস হয় ১৯৭৪ সালের ২৩ নভেম্বর।  চতুর্থ সংশোধনী : সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তনের বিধান করে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। বিলটি একই দিন উত্থাপন হয়, পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতিও একই দিনে তা অনুমোদন করেন।  পঞ্চম সংশোধনী : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দানের বিধান করে ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল পাস হয় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বিল।  ষষ্ঠ সংশোধনী : উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতকরণ করে ১৯৮১ সালের ৮ জুলাই পাস হয় ষষ্ঠ সংশোধনী বিল।  সপ্তম সংশোধনী : ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন প্রণীত সব ফরমান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, নির্দেশ ও অধ্যাদেশসহ অন্যান্য আইন অনুমোদনের বিধান করে ১০ নভেম্বর ১৯৮৬ সালে পাস হয় সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বিল।  অষ্টম সংশোধনী : রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান ও ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের বিধান করে ১৯৮৮ সালের ৭ জুন পাস হয় সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বিল।  নবম সংশোধনী : ১৯৮৯ সালে সংবিধানের নবম সংশোধনী পাস হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে একই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তিকে পরপর দুই মেয়াদ সীমাবদ্ধ রাখার বিধান করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। ওই বছরের ১০ জুলাই বিলটি পাস হয়।  দশম সংশোধনী : রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে মহিলাদের ৩০টি আসন আরো ১০ বছরকালের জন্য সংরণের বিধান করে ১৯৯০ সালের ১২ জুন পাস হয় সংবিধানের দশম সংশোধনী বিল। একাদশ সংশোধনী : এর বিষয়বস্তু ছিলÑ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের স্বপদে ফিরে যাওয়ার বিধান করে ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট পাস হয় সংবিধানের একাদশ সংশোধনী বিল।  দ্বাদশ সংশোধনী : সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তন ও উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্তি করে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল পাস হয় ১৯৯১ সালে।  ত্রয়োদশ সংশোধনী : ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপে-নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের বিধান করে ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাস হয়।  চতুর্দশ সংশোধনী : ‘সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধনী) বিল ২০০৪’ পাস হয় ২০০৪ সালের ১৬ মে। নারীদের জন্য ৪৫টি আসন সংরণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংরণ, অর্থ বিল, সংসদ সদস্যদের শপথ, সাংবিধানিক বিভিন্ন পদের বয়স বৃদ্ধির বিধান করা হয় ওই সংশোধনীর মাধ্যমে।  পঞ্চদশ সংশোধনী : সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয় ২০১১ সালের ২৫ জুন। এর শিরোনাম ছিলÑ সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধনী) বিল ২০১১। ৩০ জুন পাস হয়। সংবিধানের মূলনীতিতে পরিবর্তন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলুপ্তিসহ সংবিধানে অনেকগুলো মৌলিক পরিবর্তন আনা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে।

No comments:

Post a Comment