Friday, October 24, 2014

দেশজুড়ে নৃশংস খুনের ছড়াছড়ি:নয়াদিগন্ত

আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে খুনের ঘটনা। স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, পাষণ্ড ছেলের হাতে বাবা-মা, আবার বাবা-মায়ের হাতে সন্তান খুনের মতো নৃশংস ঘটনাও বেড়েছে চরমভাবে। গত ২১ দিনেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০০ নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ মাসেই দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। আগের বছরগুলোর সাথে তুলনা করে দেখা যায় খুনের ঘটনা বেড়েই চলছে।  অনুসন্ধানে দেখা গেছে চলতি মাসে যেসব খুনের ঘটনা ঘ
টেছে তার বেশির ভাগ নৃশংস। এ রকম প্রায় ১০০ খুনের ঘটনা ঘটেছে গত ২১ দিনে। গত ১৮ অক্টোবর সিলেটে পিতা ও সৎ মায়ের হাতে খুন হয় একটি শিশু। ১৯ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের সিঙ্গাইরে ছেলের হাতে খুন হন বাবা-মা। আর গণপিটুনিতে নিহত হন ছেলে। ১৯ অক্টোবর রাজশাহীতে শাশুড়িকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে খুন হন জামাতা। ১৪ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ায় রতন মিয়া নামে এক কিশোরকে প্রেমিকার স্বজনেরা হত্যা করে। ১০ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরের ভাষানটেকে বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় খুন করা হয় ভাইকে। ১৬ অক্টোবর রাজধানীর কল্যাণপুরে স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্ত্রী। ১৯ অক্টোবর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী। ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহের নান্দাইলে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তোফাজ্জল হোসেন ও স্বপন মিয়া নামে দুই ভাইকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। ১৫ অক্টোবর চাঁদপুরে বেয়াইনের ছুরিকাঘাতে খুন হন বেয়াই। ১২ অক্টোবর মহেশখালীতে বিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় নেসার আহমদ নামে সাবেক এক ছাত্রদল নেতাকে। ১৪ অক্টোবর গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী জহুরা বেগম। ১৮ অক্টোবর গাজীপুরে এক মাইক্রোবাস চালককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা তার গাড়ি নিয়ে যায়। ৯ অক্টোবর ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে অপহৃত এক স্কুলছাত্রীর ভাইকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বোন অপহরণের ঘটনায় সোহেল মির্জা নামে ওই ভাই বাদি হয়ে মামলা করেছিলেন। ১১ অক্টোবর চুনারুঘাটে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দু’জনকে হত্যা করা হয়। ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাউজানে স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার পরে তার লাশ মাটিচাপা দিয়ে রাখে স্ত্রী। ১৪ অক্টোবর জামালপুরে বড় ভাইয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হন ছোট ভাই। ১২ অক্টোবর কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র নজরুল ইসলামকে পরকীয়ার জের ধরে হত্যা করা হয়। ফরিদপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দু’জনকে। ১৪ অক্টোবর মিরপুরে ছুরিকাঘাতে মাহিদুল ইসলাম ইমন (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। ৩ অক্টোবর মায়ের হাতে খুন হয় কামরুজ্জামান নামে এক যুবক। মায়ের অবৈধ সম্পর্কে বাধা দেয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। ১৪ অক্টোবর মাদারগঞ্জে বাসরঘরে খুন করা হয় এক নববধূকে। ১৯ অক্টোবর পাবনা সদর উপজেলার জালালপুর এলাকায় প্রেমের সম্পর্কের কারণে সাইফুল ইসলাম নামে এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯ অক্টোবর গাজীপুরে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করে পাষণ্ড স্বামী। ১৯ অক্টোবর কক্সবাজারে ঘরে ঢুকে খুন করা হয় এক স্কুলশিক্ষককে। মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বখাটের হাতে নিহত হয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার প্রবাসী মজিবর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম ও তার তিন মেয়ে। দুর্বৃত্তরা তাদের বসতঘরে পেট্রল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলে মা ও তিন মেয়ে পুড়ে মারা যান। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এভাবেই একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে খুনের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খুন হয়েছেন ৪০৩ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩২৮ জন, মার্চে ৩৬৯, এপ্রিল মাসে ৪০১ জন, মে মাসে ৩৭০ জন, জুন মাসে ৩৯২ জন, জুলাইয়ে ৪০৬ জন, আগস্টে ৩৯২ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭৪টি। আগের বছরগুলোর তুলনায় এই খুনের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১০ সালে দেশে খুনের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৯৮৮টি, ২০১১ সালে তিন হাজার ৯৬৬টি, ২০১২ সালে ৪ হাজার ১১৪টি ও ২০১৩ সালে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৩৯৩টি। এ দিকে একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। খুনের ঘটনা কখনো বাড়ে, আবার কমে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

No comments:

Post a Comment