Friday, October 24, 2014

শেরেবাংলা নগর থানার এসআই ২ দিনের রিমান্ডে:নয়াদিগন্ত

রাজধানীর তালতলায় সিএনজিচালক শাহ আলমকে গুলি করার ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আনোয়ার হোসেনকে দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল আনোয়ারকে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া এই ঘটনায় কী পদপে নেয়া হয়েছে, তা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে জানাতে নির্দ
েশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো: সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আইন ও সালিস কেন্দ্রের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। একই সাথে আদালত ওই ঘটনার শিকার শাহ আলমের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত ও চিকিৎসার খরচ বহন করতে বিবাদিদের নির্দেশ দেন। গত রোববার রাতে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আনোয়ার পুলিশের গাড়িচালক শাহ আলমকে (২৬) মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকা থেকে ধরে তালতলায় নিয়ে দুই পায়ে গুলি করেন। পুলিশের দাবি, ওই রাতে এক অভিযানে তালতলায় ছিনতাইকালে শাহ আলমসহ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে আটকের চেষ্টা করলে তাদের সাথে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। বন্দুকযুদ্ধে দলের অন্য সদস্যরা পালিয়ে গেলেও শাহ আলমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ। এরপর তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়ে থানায় মামলা করেন।  অন্য দিকে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহ আলমের পরিবার দাবি করছেন, পূর্বশত্রুতা ও পরকীয়ার জের ধরে মিথ্যা মামলা দিয়ে শাহ আলমকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার পুরোটাই নাটক। ওই অভিযোগ ওঠার পর এসআই আনোয়ারকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়। সরিয়ে নেয়া হয় শেরেবাংলা নগর থানার ওসিকে। শেরেবাংলা নগর থানায় আনোয়ারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন শাহ আলমের ভাই গোলাম মোস্তফা। গত বুধবার মামলাটি ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।  পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গুলিতে আহত পুলিশের গাড়িচালক ও সোর্স শাহ আলমের বিরুদ্ধে কয়েকটি থানায় অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য এসআই আনোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া জরুরি। শাহ আলম বর্তমানে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের এ সাজানো নাটকের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় গত বুধবার আইন ও সালিস কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। গতকাল রিটের পে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। সাথে ছিলেন অবন্তী নুরুল। রুলে ওই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট উপপরিদর্শককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পঙ্গু হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ চালক শাহ আলমকে দেখতে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যরা যারা অস্ত্র বহন করেন, তারা দায়িত্ব পালনে মানসিকভাবে সম এবং প্রস্তুত কি না তা পরীা করে দেখা দরকার।  মিজানুর রহমান বলেন, দেশের সাধারণ নাগরিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী এ রকম নির্মম আচরণ করতে পারে না। সাপ্তাহিক না হলেও অন্তত মাসে একবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা অস্ত্র বহন করেন, তাদের পরীা করে দেখতে হবে। তারা মানসিকভাবে দায়িত্ব পালনে সম ও প্রস্তুত কি না তা পরীা করা প্রয়োজন। কারণ তাদের মানসিক চাপে যদি এমনটা ঘটে তাহলে তা দুঃখজনক। মিজানুর রহমান অতীতের কথা মনে করে বলেন, এই হাসপাতালে বছর দুয়েক আগে লিমনের সাথে অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছিল। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা সোচ্চার হয়েছিলাম। রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে তার মামলা প্রত্যাহার করে নিতে। মিজানুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি অন্যায় আচরণের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখানে কোনো ছলচাতুরী, কোনো মিথ্যা বা বানোয়াট খেলা কমিশন সহ্য করবে না। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার কাউন্সিলে বসব, মানবাধিকারের কথা বলব আর রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করব না, এমন দ্বিমুখী আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, শাহ আলমের দু’টি পা রা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।

No comments:

Post a Comment