আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে আগামী জানুয়ারি থেকে সরকার পতন ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে নামতে পারে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আগাম সতর্কবার্তা হলো, প্রতিপক্ষ দলগুলোর এ আন্দোলনের তীব্রতায় গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারে দেশ। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে আওয়ামী লীগ এখন সংগঠন গোছানোর ওপর জোর দিয়েছে। আগামী
ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব পর্যায়ে দলের সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি গত সোমবার দলের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা ও অধীন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন ও নাশকতা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতা-কর্মীকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। তৃণমূলে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস সংবাদমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একাধিক সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চিঠি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন কালের কণ্ঠের কাছে। খোদ আওয়ামী লীগ, মিত্র বামপন্থী ও জাতীয় পার্টির কিছু নেতাসহ বিরোধী রাজনীতিক ও বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, আগামী জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে সরকারবিরোধী আন্দোলন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জানুয়ারি মাস টালমাটাল হয়ে উঠবে বলে তাঁদের ধারণা। এ ছাড়া সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের এক বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য জোটের শরিক দলগুলোকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বলেছিল এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। এ নির্বাচনের পরপরই সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের নেতারা কথা রাখেননি। এখন অবিলম্বে আরেকটি নির্বাচন না দিলে দেশ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবে না।’ সরকারের এক বছর পূর্তিতে বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। তবে সামনের দিকে আন্দোলন আরো জোরদার হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিএনপিবিহীন আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিচ্ছে, অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলার বিচার শুরু করেছে। এগুলো করে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিকে বাদ দিয়ে যতগুলো নির্বাচনই হোক না কেন, তা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ৭৩টি সাংগঠনিক জেলায় চিঠি পাঠানো হয়েছে গত সোমবার। উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের চিঠি জেলা কমিটির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। জেলা কমিটি চিঠিগুলো গ্রহণ করে পরে তা সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে পাঠাবে। ইতিমধ্যে অনেক জেলার নেতাদের কাছে এ চিঠি পৌঁছে গেছে। চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন কয়েক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সৈয়দ আশরাফ স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়, ‘২০ সেপ্টেম্বর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, অবিলম্বে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন এবং তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায়ে সব স্তরের কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে। সুষ্ঠুভাবে সব স্তরের সম্মেলন, কাউন্সিল অনুষ্ঠান এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলগুলোয় অংশগ্রহণের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কর্মকর্তা ও সদস্যদের সমন্বয়ে ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে।’ চিঠিতে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘সব পর্যায়ে দলের গণভিত্তি সুদৃঢ় এবং বর্তমান ও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই।’ একাধিক সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন ও নাশকতা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতা-কর্মীকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদকের পাঠানো ওই চিঠিতে। বিএনপির পক্ষে জনমত গড়তে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বৃহস্পতিবার নীলফামারী সফর করেছেন। নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম কেন্দ্রের চিঠি প্রাপ্তি স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদকের চিঠি আমি হাতে পেয়েছি। তিনি দ্রুত জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে ইউনিটগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উদ্দেশে এ চিঠি পাঠিয়েছেন।’ মমতাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কাছে পাঠানো কেন্দ্রের চিঠিগুলোও আমরা গ্রহণ করেছি। জেলার পক্ষ থেকে এগুলো সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কাছে পাঠানো হবে। তাদের কেন্দ্রের চিঠির সঙ্গে জেলার পক্ষ থেকেও দিকনির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি দিচ্ছি।’ অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী বলে জানা গেছে। এসব দলের নেতারা মনে করেন, আগামী বছরই সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি, জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোসহ দেশের মানুষের কাছে ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বলেছিলেন, এটা সংবিধানের নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু ক্ষমতাগ্রহণের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা শুরু হয়, আগামী পাঁচ বছর তারা দেশ শাসন করবে। ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্রজোট এমন জোরদার আন্দোলন শুরু করবে যে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। এ জন্য সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য জোটের শরিক দলগুলোকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ দল গোছাচ্ছে। এমনকি তাদের মিত্র শক্তিগুলোকেও প্রতিপক্ষের আন্দোলন মোকাবিলা করতে মাঠে নামার জন্য বলা হয়েছে। এ জন্যই জাতীয় পার্টি সারা দেশে সংগঠনকে গোছাতে তৎপর হয়েছে। এ সবের অংশ হিসেবে গত ২১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন করেছে দলটি। আগামী ২৬ অক্টোবর ঢাকায় শ্রমিক পার্টি ও ২৮ অক্টোবর ওলামা পার্টির সমাবেশ ও মতবিনিময়। ৩০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী। ১ নভেম্বর যুব সংহতির সমাবেশ; ৫ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও সমাবেশ, ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামে সমাবেশ; ১৬ নভেম্বর মৌলভীবাজারে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। সব কর্মসূচিতেই এইচ এম এরশাদ অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন ও প্রতিপক্ষের আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম এম শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর দেশের ভেতরে ও বাইরে যথেষ্ট চাপ রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য এ বিষয়ে সরকারকে বিভিন্ন সময় চাপ দিয়ে এসেছে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও কার্যকর বিরোধী দলবিহীন শাসনের ফলে সরকারের নানা সমালোচনা রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আলোচনাটি আবারও সামনে আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, যদিও সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলছে, তবুও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। রাজনীতিতে অনেক সময় প্রকাশ্যে যা বলা হয় তা আসল কথা নয়। তবে চিঠি দিয়ে দল গোছানোর উদ্যোগ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- এসব নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মসূচি। প্রতিপক্ষ দলের আন্দোলন ঠেকাতে এমনটি করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলার সম্মেলনের সঙ্গে বিএনপির আন্দোলন বা সরকারের এক বছর পূর্তির কোনো সম্পর্ক নেই। কাউন্সিল ও সম্মেলন দলের নিয়মমাফিক কাজ। প্রতি তিন বছর পর পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। সে হিসেবে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আর এক বছর বাকি। আমরা চাইছি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে অধীন সব ইউনিটের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে।’ নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ : সারা দেশে দলের সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় ১০টি টিম গঠন করা হয়। দেশের সাত বিভাগে সাতটি টিম ছাড়াও ঢাকা বিভাগের জন্য দুটি ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য একটি অতিরিক্ত টিম গঠন করা হয়। এ টিমগুলোর নেতৃত্বে ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দলের কাউন্সিল সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৬ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও জেলার সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী মহানগরের সম্মেলন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন হবে। এ বিভাগের প্রতিটি জেলা ও অধীন ইউনিটের সম্মেলনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি হলো রাজনীতির মৌসুম। এ সময় প্রকৃতিতে আবহাওয়া অনুকূল থাকে না। বিএনপি-জামায়াত জোট এ সময় আন্দোলন ও সহিংসতা চালাতে পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগ সংগঠনকে শক্তিশালী করে আন্দোলন মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন : বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের মতো একটি অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গোয়েন্দাদের এ হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনসহ তথ্য মন্ত্রণালয়, রেল বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার নানা রকম পাঁয়তারা করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এ লক্ষ্যে জোটের প্রধান দল বিএনপি তার সংগঠন গুছিয়ে আনছে। বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নতুন কমিটি তৈরি করছে। সংগঠন গোছানোর পরপরই মাঠ পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের তৎপরতা শুরু করবে বিএনপি-জামায়াত জোট। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধী তৎপরতায় স্থান পাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি। এ ইস্যুতে মাঠে থাকবে জামায়াত ও ছাত্রশিবির। তারা দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। জামায়াতের একাধিক নেতার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে। এবারও বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রধান টার্গেট থাকবে পোশাক শিল্প খাত। এর বাইরে রেলপথকেও টার্গেট হিসেবে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতার মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর বাধাগ্রস্ত করতে না পারায় বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন তারা পুনরায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য সংগঠিত হচ্ছে। এ জন্য তারা বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিগুলো পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কড়া নজরদারির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ঈদের আগে ও পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক, তথ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাবের মহাপরিচালক এবং রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজিকে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সুপারিশ অনুযায়ী সম্ভাব্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী যেকোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment