Thursday, October 30, 2014

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশে গণ–অসন্তোষ বাড়বে:প্রথম অালো

জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে সবচেয়ে বেশি গণ-অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বাংলাদেশে। জনসংখ্যার চাপ, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দক্ষতার ঘাটতির কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত ঝুঁকি মানচিত্র (সিসিইআরএ)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্রপ বিশ্বের ১৯৮টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈ
রি করেছে। গতকাল বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ৩২টি দেশ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারত ১৩, মিয়ানমার ১৯ ও পাকিস্তানের অবস্থান ২৪তম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রায় সব দুর্যোগই বাংলাদেশে আঘাত হানে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডিসের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক এবং জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেল (আইপিসিসি) সদস্য আতিক রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ও নদীভাঙনের মতো জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞ ও সরকার যৌথভাবে বেশ কিছু নীতি ও পরিকল্পনা তৈরি করেছে। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। তহবিলের সঠিক বাস্তবায়ন হলে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট আন্তর্জাতিক সহায়তাও পাবে। জরিপে জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত ২৬টি বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়। দূষণ, প্রতিবেশব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নিয়মকানুনগুলো মূল্যায়ন করে এই জরিপটি করা হয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা পেন্টাগনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন বহুমাত্রিক ঝুঁকি তৈরি করছে, যা দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। জনসংখ্যা, অবকাঠামোগত অবস্থা ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দক্ষতার বিচারে আগামী ৩০ বছর ১০টি দেশ সবচেয়ে বেশি গণ-অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকবে। এগুলো হলো: বাংলাদেশ, সিয়েরা লিওন, সাউথ সুদান, নাইজেরিয়া, চাদ, হাইতি, ইথিওপিয়া, ফিলিপাইন, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ও ইরিত্রিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর গড়ে ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আর মোট আয়ের ২৮ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। জলবায়ু পরিবর্তন এই দেশগুলোর প্রকৃতি ও কৃষির ওপর ইতিমধ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছে। দারিদ্র্য, অভিবাসন ও অস্থিতিশীলতা বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। এসব সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তন বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা চতুর্থ দেশ নাইজেরিয়ায় খরার কারণে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। ফলে এরই মধ্যে দেশটিতে বোকো হারাম নামে সহিংস রাজনৈতিক গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরব বসন্ত নামে যে রাজনৈতিক অসন্তোষের জন্ম হয়েছে, তার পেছনে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে মিসর ও সিরিয়ায় সাম্প্রতিক গণ-অসন্তোষকে এর সরাসরি ফলাফল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ম্যাপলক্রপের পরিবেশ বিভাগের প্রধান জেমস এলেইন এ ব্যাপারে বলেন, নীতিনির্ধারকেরা জলবায়ু ঝুঁকির মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধানে মনোযোগ না দিলে এই ঝুঁকি আরও বাড়বে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের ব্যাপারে কারিগরি সহায়তা দিতে এই অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা রয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথেষ্ট সচেতন। দেশের গ্রামাঞ্চলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো আর্থসামাজিক উন্নয়নে যেভাবে সক্রিয় আছে, তাতে দারিদ্র্যের কারণে এখানে বোকো হারাম বা ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। জবাবদিহি ও সচ্ছতার অভাব এবং সবাইকে কাজ না করার চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারবে।

No comments:

Post a Comment