Wednesday, October 22, 2014

বিদ্যুৎ কেন্দ্র রিপাওয়ারিং প্রকল্পের নথি দুদকে:যুগান্তর

আটকে যাচ্ছে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিপাওয়ারিং প্রকল্পের কাজ। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যে প্রকল্পের যাবতীয় কাগজপত্র তলব করেছে। মঙ্গলবার পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (জেনারেশন) প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদকে দুদক এ বিষয়ে ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক আহমেদুল হাসান যুগান্তরকে জানান, ঘোড়াশাল ৩ নম্বর ইউনিটের রিপাওয়ারিংসংক্রান্ত যাবতীয় কাজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে কা
রা কারা সম্পৃক্ত আছেন পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তারা প্রকল্পটি পাইয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের মধ্যে বড় ধরনের আর্থিক আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের তথ্য পেয়েছে। কোন কোন ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন হয়েছে দুদক এখন সেটি খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটের একটি তালিকাও তৈরি করেছে দুদক। এই তালিকায় পিডিবির একজন মেম্বারসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে ৩ হাজার ৪৯ কোটি টাকা খরচ করে তড়িঘড়ি করে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট ৩-এর রিপাওয়ারিংয়ের কাজ কেন করা হচ্ছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রকল্পটিতে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়ম আছে জানিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশন এর আগে প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে একটি চিঠি দিলেও সেই চিঠির সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় আপাতত এই প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে আগ্রহী নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে প্রকল্পটি নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমোদন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হবে। যদি দুদক এই ঘটনায় কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পায় তাহলে এর অনুমোদন দেয়া হবে না। একটি সূত্র জানান, ১৯ অক্টোবর যুগান্তরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র রিপাওয়ারিং-লুটপাটের নতুন ব্র্যাঞ্চ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ বিষয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এই অবস্থায় তোলপাড় শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। দুদকে যেসব কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে : পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, রিপাওয়ারিংয়ের নামে যে দুটি ইউনিটের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে ওই দুটি ইউনিটের প্রকল্প প্রোফাইল, টেন্ডার, টেন্ডারে কারা কারা অংশ নিয়েছিল, কারা সর্বনিু দর দিয়েছে, কারা বাদ পড়েছে, কেন এই ধরনের প্রকল্প নেয়া হল এবং এর সঙ্গে জড়িত লোকাল এজেন্ট ও বিদেশী কোম্পানির প্রোফাইল। আজ আরও একজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যেই একটি সম্পূর্ণ নতুন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিউবো অপর একটি চায়নিজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যার খরচ প্রতি কিলোওয়াট পড়েছে মাত্র ৬৬৬.৭৮ মার্কিন ডলার। যেখানে প্রকৃত উৎপাদন বৃদ্ধির আলোকে ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিটের রিপাওয়ারিংয়ের জন্য দর প্রতি কিলোওয়াট দাঁড়িয়েছে ১১৫০.৪৪ মার্কিন ডলার। একই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে স্থাপনাধীন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরের তুলনায় ৩য় ইউনিটের রিপাওয়ারিংয়ের দর প্রায় দ্বিগুণ কেন এই বিষয়ে তারা জানতে চাইছে। যেখানে কম্বাইন্ড সাইকেল করার জন্য সময় লাগবে ৯৬০ দিন, সেখানে কম সময় লাগবে বলে রিপাওয়ারিং করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে রিপাওয়ারিংয়ে সময় লাগবে ৯০০ দিন। মাত্র ৬০ দিন বেশি লাগার পরও কেন এত বেশি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, এর পেছনে কারা কারা সুবিধা পেয়েছেন, এটা করে লোকাল কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড কি কি সুবিধা পেয়েছে তাও অনুসন্ধান করবে। দুদক সূত্র জানায়, এখন ওই বিষয়ের কাজের অগ্রগতি কতখানি হয়েছে এই বিষয়ে জানবে দুদক। পাশাপাশি কেন বেশি টাকা খরচ করে নতুন কস্বাইন্ড সাইকেল না করে রিপাওয়ারিং করা হচ্ছে এই বিষয়ে বেশি টাকা খরচ করার যে অভিযোগ উঠেছে তাও খতিয়ে দেখবে। এছাড়া প্রকল্পের নেপথ্যে কোনো টাকা লেনদেন হয়েছে কিনা সেটাও দেখবে। তবে দুদকের কাছে খবর রয়েছে- এই কাজ পাওয়ার জন্য স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকা লেনদেন করেছে। এদিকে দুদক এই ঘটনার অনুসন্ধান করার পর টনক নড়েছে মন্ত্রণালয় ও পিডিবির। তারা একে অপরের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। ফলে বেশি টাকা খরচ করে দুটি ইউনিট রিপাওয়ারিং করার পরিকল্পক হিসেবে দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পিডিবি কেউ নিতে চাইছে না। দুদকের ভয়ে পিডিবি বলছে এটা মন্ত্রণালয় করছে। মন্ত্রণালয় বলছে এটা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে আরও আগে। এই কারণে এটা বাতিল করা যাবে না। একটি সূত্র জানায় দুদকের কাছে অভিযোগ এসেছে, স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট ইতিমধ্যে ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মানি লন্ডারিং করেছে এ কাজে। এই টাকা তারা বিদেশে পাঠিয়েছে। দুদক এখন সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখছে। এ কাজে সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া একটি ব্যাংক সহায়তা করেছে বলেও দুদকের কাছে তথ্য আছে। এছাড়া আরও দুটি বড় বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন হয়েছে। পিডিবির ব্যাখ্যা : এ প্রসঙ্গে পিডিবির পরিচালক জনসংযোগ সাইফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩য় ইউনিট রিপাওয়ারিং প্রকল্পের আর্থিক প্রস্তাবে এইচএসবিসি বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে শতভাগ লোন দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। লোন বাবদ ২ হাজার ১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা নেয়া হলে ১৩ বছরে প্রায় ৩ হাজার ৪৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে রিপাওয়ারিংয়ের মাধ্যমে ৪১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এবং রিপাওয়ারিংয়ের পর উৎপাদন কেন্দ্রটি লাইফ পিরিয়ড অনুযায়ী পরবর্তী ২৫ বছর চালু থাকবে যা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেরই সমতুল্য। সাম্প্রতিককালে বিদ্যুৎ সেক্টরে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের যে খরচ তা অপেক্ষা এ ক্ষেত্রে খরচ অনেক কম হবে।  

No comments:

Post a Comment