র্যন্ত একটি করোলা প্রাইভেট কার নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গাড়ি চালিয়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে গিয়েই পড়েন ধরা। একে তো গাড়ি চালাচ্ছিলেন, এর ওপর আবার ল্যাপটপেও কাজ করছিলেন। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখতে পান ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান। গাড়ি থামিয়ে ধরে নিয়ে আসা হলে ডেভিড কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। এভাবে ধরা খেয়ে মুখখানা তাঁর কাঁচুমাচু হয়ে যায়। অবশেষে ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩-এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী এই জরিমানা আদায় করা হয়। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে দেশজুড়ে শুরু হওয়া অভিযানের দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এভাবেই লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরে জরিমানা আদায় ও অবৈধ গাড়ি আটক করা হয়েছে। রাজধানীতে গতকাল জেলা প্রশাসনের দুটি ও বিআরটিএর তিনটি- এই পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৩১টি। আগের দিনের চেয়ে এই মামলা পাঁচটি বেশি। অভিযান আরো জোরদার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ওদিকে এ অভিযান বন্ধ করতে বরাবরের মতো এবারও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নানা অজুহাত তুলে আন্দোলনের পাঁয়তারা শুরু করেছে। সিলেট ও উত্তরবঙ্গে ধর্মঘটও শুরু করেছিল তারা। চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানেও ধর্মঘটের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া মালিক ও শ্রমিকরা অভিযান বন্ধ করতে সরকারের ওপর নানামুখী, বিশেষ করে জনদুর্ভোগ পুঁজি করে কৌশলে চাপ দিচ্ছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে কৌশলে বেশির ভাগ পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যতই চাপ সৃষ্টি করা হোক, সরকার এবার অভিযান চালাতে অনড় রয়েছে। এর আগে সরকার তিন দফায় অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও পরে তা আর শুরু করা হয়নি। ২০১০ সালে অভিযান শুরু হলে অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে মালিকদের চাপে অভিযানই বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। সড়কে নিরাপত্তার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে, মন্তব্য করে গত সোমবার দুপুরে অভিযান চলাকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অভিযানে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা ঠিক। কিন্তু ফিটনেসবিহীন গাড়িতে প্রাণহানি ঘটবে, এটাও তো ঠিক নয়। অবৈধ গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর গত সোমবার থেকে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট আরো বেড়েছে। কারণ বেশির ভাগ অবৈধ গাড়ি অভিযানস্থল পরিহার করে চালানো হচ্ছে বা বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে সরকার এ অভিযান অব্যাহত রাখতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। অভিযানের কারণে বন্ধ রাখা গণপরিবহনের সংকট নিরসনে গতকাল থেকে কর্মচারীদের জন্য ব্যবহার হওয়া বিআরটিসির বাসগুলো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাধারণ যাত্রীদের সেবায় যোগ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল থেকে কর্মচারীদের বহনকারী বিআরটিসির ৭০-৮০টি বাস সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত যাত্রীসেবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রাজধানীর গণপরিবহন সংকট নিরসনের জন্য এই নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। সোমবার ট্রায়াল দেওয়া হয়েছিল। পরদিন মঙ্গলবার পুরোদমে এসব গাড়ি উত্তরা-মতিঝিলসহ গুরুত্বপূর্ণ রুটে চালানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘১০০টি মিনিবাস নামানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এগুলোর একটি অংশ অচিরেই নামবে। বেসরকারি মালিকদের আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টও কিছু গাড়ি নামিয়েছে।’ অসাধু মালিক-শ্রমিকদের চাপে অভিযান শিথিল করে সরকার অবস্থান থেকে সরে আসবে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা জনস্বার্থে এ অভিযান শুরু করেছি। সিলেট ও উত্তরবঙ্গে যে ধর্মঘট শুরু করা হয়েছিল তা ভুল বুঝে করা হয়েছিল। পরে তাদের বোঝানো হয়েছে। তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে। এ কারণে পরিবহন খাতে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা অভিযান বন্ধ করব না। এ অভিযান আরো জোরদার ও সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করা হবে।’ বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে এ অভিযান চলবে। কোনোভাবেই তা বন্ধ করা হবে না। এ জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অভিযান আরো জোরদার করা হচ্ছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম দিন আমি একা অভিযান পরিচালনা করেছি। দ্বিতীয় দিনে আরো একটি আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।’ অসাধু কৌশল : গতকাল জরিমানা আদায় হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা। অভিযান পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, অভিযান থেকে বাঁচতে পুলিশের কাছ থেকে গাড়ির বিভিন্ন ধরনের কাগজ জব্দ করার প্রমাণপত্র জোগাড়ে নেমেছেন গাড়ির মালিক ও চালকরা। এ ছাড়া অভিযানের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পথ পাল্টে চলাচল করে অবৈধ গাড়িগুলো। এ কারণে স্থানে স্থানে যানজট ছিল প্রকট। জোয়ারসাহারায় অভিযানের কারণে মতিঝিল, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বহু গাড়ি বনানী বা কাকলীতে গিয়ে চালানো বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ নছিমন-করিমন-ভটভটিসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন যানবাহনের মালিক ও চালকদের বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন স্থানে দাবি আদায়ের অজুহাত তুলে ধর্মঘট ডাকার পাঁয়তারা করছে। সিলেট বিভাগ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ সাত দফা দাবি তুলে গতকাল গণপরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল। বিকেলে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতার পর শর্তসাপেক্ষে ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়। খুলনায় মহানগর ইজিবাইক মালিক-চালক ঐক্য সংগ্রাম পরিষদ ও মহানগর ইজিবাইক মালিক-চালক সমন্বয় পরিষদ বিভিন্ন দাবি তুলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গত সোমবার। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রামের একাধিক স্থানে নিষিদ্ধ যানবাহনের মালিক-চালক-শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবির ধুয়া তুলে ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এগুলো সবই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে অভিযান বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগের কৌশল বলে ভুক্তভোগীদের ধারণা। তবে স্থানীয় প্রশাসন তা নস্যাৎ করে অভিযান অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে। সরকারও জনস্বার্থে এসব তৎপরতার তোয়াক্কা না করে অভিযান চালাবে। এ অভিযানের সঙ্গে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচারাভিযান। এরপর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত এ অভিযান পরিচালনা করবে। সরেজমিন অভিযান : জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শত শত চালকের জাল লাইসেন্স ও সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরেছে। রাজধানীর জোয়ারসাহারায় সকাল ১১টা থেকে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বশার। জোয়ারসাহারা পুলিশ বক্সের সামনে পরিচালিত এ অভিযানে ৩৫টি মামলা করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ২৬ হাজার ২০০ টাকা। একটি পিকআপ ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বশার কালের কণ্ঠকে বলেন, বহু সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালককে ধরা যায়নি। কারণ যাত্রীরাই মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। দুপুরে অভিযান পরিচালনাকালে গিয়ে দেখা যায়, কনক পরিবহন, বসুমতী পরিবহন, বনশ্রী পরিবহনের তিনটি বাস আটকে রাখা হয়েছে। বাস থেকে নেমে যাত্রীরা দ্রুত বাস ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছিল। বসুমতী পরিবহনের যাত্রী তনুশ্রী সাহা টিকিট দেখিয়ে ধৃত চালকের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে অন্য বাসে ওঠেন। অন্য যাত্রীরাও বাস বদল করে। যাত্রীদের একজন আজাদ রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, লক্কড়-ঝক্কড় বাসে উঠে মরার চেয়ে ভালো বাসে চলাচল করতে চাই। এ ধরনের অভিযান আরো বেশি হওয়া দরকার। শ্যামলীতে আশা টাওয়ারের সামনে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাছিরুল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে মামলা হয় ২৯টি। জরিমানা আদায় করা হয় ৩৭ হাজার টাকা। বাবুবাজার ব্রিজের পাশে সকাল থেকে দিনভর অভিযানে ২২টি মামলা করা হয়। জরিমানা আদায় হয় ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ঢাকা-দোহার রুটের দুটি বাস ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। এসব গাড়ির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ নাগ কালের কণ্ঠকে বলেন, অভিযানে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়নি। সাধারণ যাত্রীদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেখানে ৩১টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২২ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। এ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘জীবনে এ ধরনের বহু অভিযান দেখেছি। কিছুদিন পর অভিযান চলে তারপর বন্ধ হয়ে গেছে। এবারের উদ্যোগটি ভালো। আপস না করে এই অভিযান চালাতে হবে।’ গাবতলীতে মিছিল : গতকাল রাতে অভিযানের বিরুদ্ধে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে মিছিল করেছেন গাড়িচালকরা। ট্রাকচালকদের মিছিলে পরে অন্য পরিবহন শ্রমিকরাও যোগ দেয়। মিছিল থেকে বিআরটিএর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। তারা চালকদের লাইসেন্স নিয়ে হয়রানি এবং পরিকল্পনা ছাড়াই আকস্মিক অভিযান বন্ধের দাবি জানায়। গাজীপুরে অবৈধ গাড়ি নিরাপদে : গাজীপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর, চান্দনাসহ বিভিন্ন টার্মিনালে বেশির ভাগ বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কারণ এগুলোর নেই বৈধ কাগজপত্র। গতকাল দুপুর ১২টায় গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি বাস-মিনিবাস দাঁড়িয়ে থাকার আগের দৃশ্য নেই। নেই হেলপার-কনডাক্টরের হাঁকডাক ও দুঃসহ যানজট। গাজীপুর বাস টার্মিনালে যাত্রী থাকলেও খাঁ খাঁ করছিল টার্মিনাল। এখানে সাভার-নবীনগর, কালিয়াকৈর-ঢাকার সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান রুটের ছয় শতাধিক বাস-মিনিবাসের ৭৫ শতাংশেরই বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ওই সব গাড়ির ৯০ শতাংশই গত সোমবার থেকে সড়কে নামেনি। মোবাইল কোর্টের ভয়ে মালিকরা টার্মিনালেও গাড়ি রাখেননি। তাঁরা বাসাবাড়ির আঙিনা বা দূরের মাঠে নিরাপদ জায়গায় গাড়ি রেখে দিয়েছেন। কালিয়াকৈর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর থেকে নবীনগর, গাজীপুর, ঢাকা, মাওনা রুটে চলাচলকারী পাঁচ শতাধিক গাড়ির মধ্যে মাত্র ২০-৩০টি বৈধ গাড়ি সড়কে চলাচল করছে। গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়ায় যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। দুপুরে চন্দ্রা গোলচত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, ফিটনেসবিহীন বাস বন্ধ করে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অনেকে সড়কের পাশে বা খোলা জয়গায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি রেখে দিয়েছে। গাজীপুর আন্তজেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের এ অভিযান আমরা শতভাগ সমর্থন করি। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে আর একজন মানুষ মারা যাক, তা আমরা চাই না।’ আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, স্থানীয় পরিবহন মালিকরা এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা, নরসিংদী, চিটাগাং রোড ও সোনারগাঁ রুটে প্রতিদিন ৫০০ পরিবহন চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে বন্ধন, উৎসব, আনন্দ, শীতলক্ষ্যা, বন্ধু, নসিব, দুরন্ত পরিবহনের বেশির ভাগই গতকাল পথ পরিবর্তন করে চলাচল করেছে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটের বন্ধন পরিবহনের ৬৫টি গাড়ির মধ্যে ২৫টির ফিটনেস সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র না থাকায় এগুলো টার্মিনালে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এভাবে আনন্দ পরিবহনের ২০টি ও উৎসবের ১৫টি গাড়ি বন্ধ করে রাখা হয়। আনন্দ পরিবহনের চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন বলেন, তাঁদের ৮৫টির মধ্যে ২০টি গাড়ির চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই। বিশেষ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এ রকম অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা উচিত।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Wednesday, November 12, 2014
দুর্ভোগ পুঁজি করে কৌশলে চাপ:কালের কন্ঠ
র্যন্ত একটি করোলা প্রাইভেট কার নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গাড়ি চালিয়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে গিয়েই পড়েন ধরা। একে তো গাড়ি চালাচ্ছিলেন, এর ওপর আবার ল্যাপটপেও কাজ করছিলেন। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখতে পান ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান। গাড়ি থামিয়ে ধরে নিয়ে আসা হলে ডেভিড কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। এভাবে ধরা খেয়ে মুখখানা তাঁর কাঁচুমাচু হয়ে যায়। অবশেষে ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩-এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী এই জরিমানা আদায় করা হয়। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে দেশজুড়ে শুরু হওয়া অভিযানের দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এভাবেই লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরে জরিমানা আদায় ও অবৈধ গাড়ি আটক করা হয়েছে। রাজধানীতে গতকাল জেলা প্রশাসনের দুটি ও বিআরটিএর তিনটি- এই পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৩১টি। আগের দিনের চেয়ে এই মামলা পাঁচটি বেশি। অভিযান আরো জোরদার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ওদিকে এ অভিযান বন্ধ করতে বরাবরের মতো এবারও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নানা অজুহাত তুলে আন্দোলনের পাঁয়তারা শুরু করেছে। সিলেট ও উত্তরবঙ্গে ধর্মঘটও শুরু করেছিল তারা। চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানেও ধর্মঘটের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া মালিক ও শ্রমিকরা অভিযান বন্ধ করতে সরকারের ওপর নানামুখী, বিশেষ করে জনদুর্ভোগ পুঁজি করে কৌশলে চাপ দিচ্ছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে কৌশলে বেশির ভাগ পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যতই চাপ সৃষ্টি করা হোক, সরকার এবার অভিযান চালাতে অনড় রয়েছে। এর আগে সরকার তিন দফায় অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও পরে তা আর শুরু করা হয়নি। ২০১০ সালে অভিযান শুরু হলে অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে মালিকদের চাপে অভিযানই বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। সড়কে নিরাপত্তার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে, মন্তব্য করে গত সোমবার দুপুরে অভিযান চলাকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অভিযানে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা ঠিক। কিন্তু ফিটনেসবিহীন গাড়িতে প্রাণহানি ঘটবে, এটাও তো ঠিক নয়। অবৈধ গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর গত সোমবার থেকে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট আরো বেড়েছে। কারণ বেশির ভাগ অবৈধ গাড়ি অভিযানস্থল পরিহার করে চালানো হচ্ছে বা বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে সরকার এ অভিযান অব্যাহত রাখতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। অভিযানের কারণে বন্ধ রাখা গণপরিবহনের সংকট নিরসনে গতকাল থেকে কর্মচারীদের জন্য ব্যবহার হওয়া বিআরটিসির বাসগুলো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাধারণ যাত্রীদের সেবায় যোগ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল থেকে কর্মচারীদের বহনকারী বিআরটিসির ৭০-৮০টি বাস সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত যাত্রীসেবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রাজধানীর গণপরিবহন সংকট নিরসনের জন্য এই নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। সোমবার ট্রায়াল দেওয়া হয়েছিল। পরদিন মঙ্গলবার পুরোদমে এসব গাড়ি উত্তরা-মতিঝিলসহ গুরুত্বপূর্ণ রুটে চালানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘১০০টি মিনিবাস নামানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এগুলোর একটি অংশ অচিরেই নামবে। বেসরকারি মালিকদের আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টও কিছু গাড়ি নামিয়েছে।’ অসাধু মালিক-শ্রমিকদের চাপে অভিযান শিথিল করে সরকার অবস্থান থেকে সরে আসবে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা জনস্বার্থে এ অভিযান শুরু করেছি। সিলেট ও উত্তরবঙ্গে যে ধর্মঘট শুরু করা হয়েছিল তা ভুল বুঝে করা হয়েছিল। পরে তাদের বোঝানো হয়েছে। তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে। এ কারণে পরিবহন খাতে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা অভিযান বন্ধ করব না। এ অভিযান আরো জোরদার ও সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করা হবে।’ বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে এ অভিযান চলবে। কোনোভাবেই তা বন্ধ করা হবে না। এ জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অভিযান আরো জোরদার করা হচ্ছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম দিন আমি একা অভিযান পরিচালনা করেছি। দ্বিতীয় দিনে আরো একটি আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।’ অসাধু কৌশল : গতকাল জরিমানা আদায় হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা। অভিযান পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, অভিযান থেকে বাঁচতে পুলিশের কাছ থেকে গাড়ির বিভিন্ন ধরনের কাগজ জব্দ করার প্রমাণপত্র জোগাড়ে নেমেছেন গাড়ির মালিক ও চালকরা। এ ছাড়া অভিযানের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পথ পাল্টে চলাচল করে অবৈধ গাড়িগুলো। এ কারণে স্থানে স্থানে যানজট ছিল প্রকট। জোয়ারসাহারায় অভিযানের কারণে মতিঝিল, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বহু গাড়ি বনানী বা কাকলীতে গিয়ে চালানো বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ নছিমন-করিমন-ভটভটিসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন যানবাহনের মালিক ও চালকদের বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন স্থানে দাবি আদায়ের অজুহাত তুলে ধর্মঘট ডাকার পাঁয়তারা করছে। সিলেট বিভাগ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ সাত দফা দাবি তুলে গতকাল গণপরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল। বিকেলে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতার পর শর্তসাপেক্ষে ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়। খুলনায় মহানগর ইজিবাইক মালিক-চালক ঐক্য সংগ্রাম পরিষদ ও মহানগর ইজিবাইক মালিক-চালক সমন্বয় পরিষদ বিভিন্ন দাবি তুলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গত সোমবার। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রামের একাধিক স্থানে নিষিদ্ধ যানবাহনের মালিক-চালক-শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবির ধুয়া তুলে ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এগুলো সবই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে অভিযান বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগের কৌশল বলে ভুক্তভোগীদের ধারণা। তবে স্থানীয় প্রশাসন তা নস্যাৎ করে অভিযান অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে। সরকারও জনস্বার্থে এসব তৎপরতার তোয়াক্কা না করে অভিযান চালাবে। এ অভিযানের সঙ্গে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচারাভিযান। এরপর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত এ অভিযান পরিচালনা করবে। সরেজমিন অভিযান : জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শত শত চালকের জাল লাইসেন্স ও সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরেছে। রাজধানীর জোয়ারসাহারায় সকাল ১১টা থেকে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বশার। জোয়ারসাহারা পুলিশ বক্সের সামনে পরিচালিত এ অভিযানে ৩৫টি মামলা করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ২৬ হাজার ২০০ টাকা। একটি পিকআপ ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বশার কালের কণ্ঠকে বলেন, বহু সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালককে ধরা যায়নি। কারণ যাত্রীরাই মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। দুপুরে অভিযান পরিচালনাকালে গিয়ে দেখা যায়, কনক পরিবহন, বসুমতী পরিবহন, বনশ্রী পরিবহনের তিনটি বাস আটকে রাখা হয়েছে। বাস থেকে নেমে যাত্রীরা দ্রুত বাস ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছিল। বসুমতী পরিবহনের যাত্রী তনুশ্রী সাহা টিকিট দেখিয়ে ধৃত চালকের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে অন্য বাসে ওঠেন। অন্য যাত্রীরাও বাস বদল করে। যাত্রীদের একজন আজাদ রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, লক্কড়-ঝক্কড় বাসে উঠে মরার চেয়ে ভালো বাসে চলাচল করতে চাই। এ ধরনের অভিযান আরো বেশি হওয়া দরকার। শ্যামলীতে আশা টাওয়ারের সামনে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাছিরুল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে মামলা হয় ২৯টি। জরিমানা আদায় করা হয় ৩৭ হাজার টাকা। বাবুবাজার ব্রিজের পাশে সকাল থেকে দিনভর অভিযানে ২২টি মামলা করা হয়। জরিমানা আদায় হয় ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ঢাকা-দোহার রুটের দুটি বাস ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। এসব গাড়ির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ নাগ কালের কণ্ঠকে বলেন, অভিযানে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়নি। সাধারণ যাত্রীদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেখানে ৩১টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২২ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। এ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘জীবনে এ ধরনের বহু অভিযান দেখেছি। কিছুদিন পর অভিযান চলে তারপর বন্ধ হয়ে গেছে। এবারের উদ্যোগটি ভালো। আপস না করে এই অভিযান চালাতে হবে।’ গাবতলীতে মিছিল : গতকাল রাতে অভিযানের বিরুদ্ধে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে মিছিল করেছেন গাড়িচালকরা। ট্রাকচালকদের মিছিলে পরে অন্য পরিবহন শ্রমিকরাও যোগ দেয়। মিছিল থেকে বিআরটিএর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। তারা চালকদের লাইসেন্স নিয়ে হয়রানি এবং পরিকল্পনা ছাড়াই আকস্মিক অভিযান বন্ধের দাবি জানায়। গাজীপুরে অবৈধ গাড়ি নিরাপদে : গাজীপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর, চান্দনাসহ বিভিন্ন টার্মিনালে বেশির ভাগ বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কারণ এগুলোর নেই বৈধ কাগজপত্র। গতকাল দুপুর ১২টায় গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি বাস-মিনিবাস দাঁড়িয়ে থাকার আগের দৃশ্য নেই। নেই হেলপার-কনডাক্টরের হাঁকডাক ও দুঃসহ যানজট। গাজীপুর বাস টার্মিনালে যাত্রী থাকলেও খাঁ খাঁ করছিল টার্মিনাল। এখানে সাভার-নবীনগর, কালিয়াকৈর-ঢাকার সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান রুটের ছয় শতাধিক বাস-মিনিবাসের ৭৫ শতাংশেরই বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ওই সব গাড়ির ৯০ শতাংশই গত সোমবার থেকে সড়কে নামেনি। মোবাইল কোর্টের ভয়ে মালিকরা টার্মিনালেও গাড়ি রাখেননি। তাঁরা বাসাবাড়ির আঙিনা বা দূরের মাঠে নিরাপদ জায়গায় গাড়ি রেখে দিয়েছেন। কালিয়াকৈর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর থেকে নবীনগর, গাজীপুর, ঢাকা, মাওনা রুটে চলাচলকারী পাঁচ শতাধিক গাড়ির মধ্যে মাত্র ২০-৩০টি বৈধ গাড়ি সড়কে চলাচল করছে। গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়ায় যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। দুপুরে চন্দ্রা গোলচত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, ফিটনেসবিহীন বাস বন্ধ করে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অনেকে সড়কের পাশে বা খোলা জয়গায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি রেখে দিয়েছে। গাজীপুর আন্তজেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের এ অভিযান আমরা শতভাগ সমর্থন করি। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে আর একজন মানুষ মারা যাক, তা আমরা চাই না।’ আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, স্থানীয় পরিবহন মালিকরা এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা, নরসিংদী, চিটাগাং রোড ও সোনারগাঁ রুটে প্রতিদিন ৫০০ পরিবহন চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে বন্ধন, উৎসব, আনন্দ, শীতলক্ষ্যা, বন্ধু, নসিব, দুরন্ত পরিবহনের বেশির ভাগই গতকাল পথ পরিবর্তন করে চলাচল করেছে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটের বন্ধন পরিবহনের ৬৫টি গাড়ির মধ্যে ২৫টির ফিটনেস সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র না থাকায় এগুলো টার্মিনালে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এভাবে আনন্দ পরিবহনের ২০টি ও উৎসবের ১৫টি গাড়ি বন্ধ করে রাখা হয়। আনন্দ পরিবহনের চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন বলেন, তাঁদের ৮৫টির মধ্যে ২০টি গাড়ির চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই। বিশেষ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এ রকম অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা উচিত।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment