আইপিসিসি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, ফলাফল এবং পরিবর্তন রোধের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে তিনটি প্রতিবেদন দেয়। গতকাল দেওয়া প্রতিবেদনটি ছিল তিন প্রতিবেদনের মিলিত রূপ। এর উদ্দেশ্য, ২০১৫ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি বৈশ্বিক চুক্তি করতে সরকারগুলোকে প্রভাবিত করা। আইপিসিসি বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বেশির ভাগ বিদ্যুৎ এমন উৎস থেকে উৎপাদন করতে হবে, যেগুলো কম কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। আর এটা সম্ভবও। আর কার্বন ছড়িয়ে পড়া ঠেকিয়ে তা মজুতের ব্যবস্থা না করতে পারলে ২১০০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যাপক ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানের কথায় কোনো অস্পষ্টতা নেই। কাজ এখন বিশ্বনেতাদের। সময় আমাদের পক্ষে নয়।’ বিভিন্ন সময় জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ একটি বিষয়ে একমত হয়েছে যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতেই হবে। এবারের প্রতিবেদনে এভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পদ্ধতি বাতলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বিশ্ব ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। এ থেকে পেছনে ফেরার কোনো উপায় থাকবে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষতিকর তিন গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ এখন গত আট লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৮৮০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ০ দশমিক ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। ১৯০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ৭ দশমিক ৬ ইঞ্চি। ওই গ্যাসগুলো শীতপ্রধান দেশে ব্যবহৃত ফসল চাষের গ্রিনহাউসের মতো উত্তাপ ধরে রাখে বলে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়। আইপিসিসির প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট, বিশ্বকে এখন কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৩০ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে অবশ্যই একে ৫০ শতাংশ হতে হবে। আইপিসিসির প্রধান রাজেন্দ্র পাচৌরি প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, এই শতকের শেষাবধি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যদি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হয়, তবে এই শতকের মাঝামাঝি সময় কার্বন নিঃসরণ তিন বা চার গুণ কমাতে হবে। তা কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে। এর উৎস হতে পারে জৈব বা পরমাণু জ্বালানি। প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে স্পষ্ট করে বক্তব্য থাকায় পরিবেশবাদীরা খুশি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) সামান্থা স্মিথ বলেন, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা একেবারে নতুন কথা। উদ্বিগ্ন সৌদি আরব: জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে আলোচনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর তালিকা নিয়ে ব্যাপক গোলযোগ হয়। ওই আলোচনায় উপস্থিত একজনের ভাষ্য, ওই তালিকায় নিজেদের নাম দেখে সৌদি আরব ব্যাপক ক্ষোভ দেখায়। কার্বন নিঃসরণ কমানো আগে না অর্থনৈতিক উন্নয়ন আগে—এই নিয়ে বিতর্কের সময় আলোচনা থেমেও যায়। সৌদি আরব ও বলিভিয়ার অভাবিত ঐক্যবদ্ধ আপত্তির মুখে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের ২ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ বাদ দিতে হয়।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Monday, November 3, 2014
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতেই হবে:প্রথম অালো
আইপিসিসি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, ফলাফল এবং পরিবর্তন রোধের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে তিনটি প্রতিবেদন দেয়। গতকাল দেওয়া প্রতিবেদনটি ছিল তিন প্রতিবেদনের মিলিত রূপ। এর উদ্দেশ্য, ২০১৫ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি বৈশ্বিক চুক্তি করতে সরকারগুলোকে প্রভাবিত করা। আইপিসিসি বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বেশির ভাগ বিদ্যুৎ এমন উৎস থেকে উৎপাদন করতে হবে, যেগুলো কম কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। আর এটা সম্ভবও। আর কার্বন ছড়িয়ে পড়া ঠেকিয়ে তা মজুতের ব্যবস্থা না করতে পারলে ২১০০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যাপক ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানের কথায় কোনো অস্পষ্টতা নেই। কাজ এখন বিশ্বনেতাদের। সময় আমাদের পক্ষে নয়।’ বিভিন্ন সময় জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ একটি বিষয়ে একমত হয়েছে যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতেই হবে। এবারের প্রতিবেদনে এভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পদ্ধতি বাতলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বিশ্ব ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। এ থেকে পেছনে ফেরার কোনো উপায় থাকবে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষতিকর তিন গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ এখন গত আট লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৮৮০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ০ দশমিক ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। ১৯০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ৭ দশমিক ৬ ইঞ্চি। ওই গ্যাসগুলো শীতপ্রধান দেশে ব্যবহৃত ফসল চাষের গ্রিনহাউসের মতো উত্তাপ ধরে রাখে বলে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়। আইপিসিসির প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট, বিশ্বকে এখন কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৩০ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে অবশ্যই একে ৫০ শতাংশ হতে হবে। আইপিসিসির প্রধান রাজেন্দ্র পাচৌরি প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, এই শতকের শেষাবধি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যদি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হয়, তবে এই শতকের মাঝামাঝি সময় কার্বন নিঃসরণ তিন বা চার গুণ কমাতে হবে। তা কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে। এর উৎস হতে পারে জৈব বা পরমাণু জ্বালানি। প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে স্পষ্ট করে বক্তব্য থাকায় পরিবেশবাদীরা খুশি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) সামান্থা স্মিথ বলেন, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা একেবারে নতুন কথা। উদ্বিগ্ন সৌদি আরব: জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে আলোচনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর তালিকা নিয়ে ব্যাপক গোলযোগ হয়। ওই আলোচনায় উপস্থিত একজনের ভাষ্য, ওই তালিকায় নিজেদের নাম দেখে সৌদি আরব ব্যাপক ক্ষোভ দেখায়। কার্বন নিঃসরণ কমানো আগে না অর্থনৈতিক উন্নয়ন আগে—এই নিয়ে বিতর্কের সময় আলোচনা থেমেও যায়। সৌদি আরব ও বলিভিয়ার অভাবিত ঐক্যবদ্ধ আপত্তির মুখে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের ২ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ বাদ দিতে হয়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment