Saturday, December 27, 2014

সহিংসতার মূলে ভূমি বিরোধ, মামলা হয়নি, গ্রেপ্তারও নেই:প্রথম অালো

রাঙামাটির নানিয়ারচরে তিনটি আদিবাসী গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ১০ দিন পরও থানায় মামলা হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ভূমি বিরোধের কারণে সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে পাহাড়ি-বাঙালি দুই পক্ষের লোকজনই দাবি করেছেন।  সহিংসতার কারণ সম্পর্কে নানিয়ারচর থানার ওসি মোহাম্মদ রশিদ বলেন, এখানকার মূল সমস্যা ভূমি বিরোধ। এর জের ধরে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। পাহাড
়ি ও বাঙালিদের মধ্যে আস্থার সংকটও রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ১৬ ডিসেম্বর নানিয়ারচরের বুড়িঘাট ইউনিয়নের তিনটি আদিবাসী গ্রামে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ৫৪টি বসতবাড়ি ও সাতটি দোকান। ভাঙচুর করা হয় বৌদ্ধমন্দির। এর আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর রাতে একই এলাকার পাঁচ বাঙালি পরিবারের বাগানের চার লাখ আনারসগাছ ও ২২ হাজার সেগুনচারা নষ্ট করে দুর্বৃত্তরা। আদিবাসী পাড়ায় হামলার ঘটনায় পুড়ে গেছে তোষণ কান্তি চাকমার বাড়ি। মামলা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা করে কী হবে। বরং হয়রান হতে হবে। একই অভিমত ঘর হারানো কল্পনা চাকমা, প্রীতি বালা চাকমা ও কুমার চাকমারও। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালি চাষি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘হয়রানি ও জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মামলা করিনি। প্রশাসন যদি সামাজিকভাবে সমাধান করে দেয়, তাহলে সবার জন্য ভালো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য বাঙালিদেরও একই মত।’ রাঙামাটির পুলিশ সুপার আমেনা বেগম জানান, আদিবাসী গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং বাঙালিদের বাগানের চারা নষ্ট করার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসন ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ব্যস্ত থাকে। দুর্বৃত্তরা ওই সময়টিকেই বেছে নিয়েছে। আনারস বাগান নষ্টের ঘটনায় আমাদের জন্য অপেক্ষা না করে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক।’ রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. শামসুল আরেফিন বলেছেন, সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাঙালি চাষি মোহাম্মদ শাহজাহান, নুরুল ইসলাম, আসাদ ও কামাল হোসেন বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়ি এলাকায় প্রায় পৌনে পাঁচ একর পাহাড়ি জমি লিজ নিয়ে (বর্গা) আনারসের চারা লাগান। নানিয়ারচর পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবছার উদ্দিন নিজেকে ওই জমির তত্ত্বাবধায়ক (দেখভালকারী) হিসেবে দাবি করেছেন। একই জমিতে তিনি নিজেও সেগুনের চারা লাগান। তাঁর দাবি, এই জায়গার মালিক একই এলাকার নূরউদ্দিন ও আবদুল মান্নান। গত বছর মোজাফফর হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দুজন এই জমি কেনেন। আবছার মাস্টার জানিয়েছেন, জমির মালিকেরা এখন সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। তবে আদিবাসীরা দাবি করেছেন, বাগান গড়ে তোলা ওই জায়গার মালিক নিশি কুমার চাকমা ও তাঁর ভাই প্রফুল্ল কুমার চাকমা। দেড় বছর আগে জমির দখল নেন কয়েকজন বাঙালি। দখল টিকিয়ে রাখতেই বাগানের চারা নষ্ট ও আদিবাসী গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে। নিশি কুমার চাকমার ছেলে রুনু কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা ও দাদারা অনেক আগে থেকেই এই জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু গত বছর বাঙালিরা জোরপূর্বক আমাদের জমি দখল করে সেখানে আনারস ও সেগুন বাগানের চাষ করেন।’ তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক পেয়ার আহমদ খান বলেন, ‘আনারস বাগানের জমি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া। কিন্তু পাহাড়িরা এসব ভূমি নিয়ে বিরোধ করে আসছেন। এর জের ধরে তাঁরা আনারস ও সেগুন বাগান নষ্ট করেছেন।’ অন্যদিকে ইউপিডিএফের তথ্য ও প্রচার বিভাগের প্রধান মীরন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। বাঙালিরা আনারস বাগান নষ্টের ঘটনায় বিচার চাইতে পারতেন। কিন্তু তা না করে পরিকল্পিতভাবে আদিবাসীদের গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। বিরোধপূর্ণ ওই জমির বিষয়ে ৭৮ নম্বর বগাছড়ি মৌজার হেডম্যান সুধীর বিহারী খীসা বলেছেন, ‘বাঙালি কোনো ব্যক্তিকে পাহাড়ে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার আগে হেডম্যানের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিতে হয়। এই বিধান বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমি কোনো বাঙালিকে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রতিবেদন দিইনি।’

No comments:

Post a Comment