সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ এবং এর আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদে ওই জেলায় আজ শনিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। এ
কই সঙ্গে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং ১৪৪ ধারা জারির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন খালেদা জিয়া। সেখানেই এ সিদ্ধান্ত হয়। এই হরতাল ডাকার মাধ্যমে 'আন্দোলনে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না' ঘোষণাকারী বিএনপি এ যাত্রায় পিছু হটল বলেই মনে করা হচ্ছে। বৈঠক শেষে গত রাত সোয়া ৯টায় সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন হরতাল আর কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শুক্রবারে সাধারণত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অফিস করেন না। কিন্তু গাজীপুরের জনসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রেক্ষাপটে গত রাতে তিনি কার্যালয়ে আসেন। কার্যালয়ের বাইরে কয়েক শ নেতা-কর্মীও ছিল। প্রায় এক বছর পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে দেশের রাজনীতি। জনমনেও আস্তে আস্তে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালতের পাশাপাশি সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখন একটাই প্রশ্ন- ৫ জানুয়ারি কী হচ্ছে ঢাকায়? একতরফা নির্বাচনের এই দিনটি আওয়ামী লীগের কাছে 'গণতন্ত্রের বিজয় দিবস' হিসেবে বিবেচিত আর বিএনপি ওই দিন 'কালো দিবস' পালন করতে চায়। দিবসটি পালনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই দিন জনসভার অনুমতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু একই দিন বিএনপি জনসভার অনুমতি চেয়ে এখনো পায়নি। ফলে প্রশ্ন ছিল- বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোট ওই দিন কী করবে? তারা কি হরতাল-অবরোধ দেবে, নাকি আগের ঘোষণামতো যেকোনো মূল্যে জনসভা করবেই। আবার কৌশলগত কারণে দলটি জনসভা পেছাবে বলেও মত ছিল। শেষমেশ বিএনপি হরতালের পথেই গেল। গাজীপুরের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ের জরুরি বৈঠকে উপস্থিত নেতারা এখনই সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে ৫ জানুয়ারিকে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে মত দেন। তাঁরা বলেন, যা করার ৫ জানুয়ারিই করতে হবে। আগে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যেকোনো মূল্যে গাজীপুরে জনসভা করবেই। খালেদা জিয়া সেখানে যাবেন। যেখানেই বাধা দেওয়া হবে, সেখানেই অবস্থান নিয়ে জনসভা করা হবে। ছাত্রলীগ ওই কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারির পরিপ্রেক্ষিতে সে সিদ্ধান্ত থেকে বিএনপি সরে আসায় দেশব্যাপী মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে, যদিও হরতাল নিয়েও দেশবাসীর মাঝে নেতিবাচক মনোভাব প্রবল। সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, 'শনিবার গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবৈধ সরকার এই জনসভা বানচাল করতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে আমাদের জনসভাস্থল দখল করে নেয়। দুপুরে স্থানীয় প্রশাসন গোটা জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে। আমরা ১৪৪ ধারার নিন্দা জানাচ্ছি।' ফখরুল অভিযোগ করেন, 'পুলিশের মদদে গাজীপুরে ছাত্রলীগ গতকাল থেকে আমাদের জনসভাস্থলে গোলাগুলি করে দখল করে নেয়। তারা ব্যানার-ফেস্টুন জ্বালিয়ে দেয়।' এ কর্মসূচির পর পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কর্মসূচি জানানো হবে বলেও জানান ফখরুল। খালেদা জিয়া পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গাজীপুর যাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে দলের মুখপাত্র বলেন, হরতাল আহ্বানের পর সেখানে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতার লড়াইয়ে পরস্পরের প্রতিপক্ষ বড় এ দুটি দল কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। বরং উভয়ই এখন হার্ডলাইনে। ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আগাম নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চাইছে বিএনপি। অন্যদিকে গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারিসহ বিএনপির আন্দোলন দমাতে সরকার ঢাকাসহ সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে। বিএনপি নেতাদের বাসায় বাসায় শুরু হয়েছে তল্লাশি। ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অনেক নেতা-কর্মীই গত দুই দিনে আত্মগোপনে চলে গেছে। সব মিলিয়ে গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন-পূর্ববর্তী পরিস্থিতির মতোই দেশের রাজনীতি আবারও সাংঘর্ষিক হয়ে উঠছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের মতে, সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সরকারই সৃষ্টি করছে। কারণ তারা বিএনপিকে রাস্তায় নামতেই দিতে চাইছে না। তিনি বলেন, তারেক রহমানের বক্তৃৃতায় সরকারি দল একটি সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু জনসভা করতে এভাবে বাধা দেওয়াটা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজউদ্দিন খান বলেন, তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বললেই তিনি রাজাকার হয়ে যাবেন না। অবশ্য বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তারা কতটুকু আন্দোলন করতে পারবে এ নিয়ে সংশয় আছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সাল মোটামুটি স্থিতিশীল গেলেও ২০১৫ সাল মনে হচ্ছে ভালো যাবে না। কারণ বড় দুটি দলের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে বলে মনে হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই সংযত না হলে পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্রপাত বকশীবাজারের সংঘর্ষ : বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের ছক কষেছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু গত বুধবার বকশীবাজার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরা দিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-বিএনপির প্রথম দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ওই দিন খালেদা জিয়া হাজিরা দিতে যান। এ উপলক্ষে বিএনপি ব্যাপক শোডাউনের আয়োজন করে। পরে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় পুলিশ-ছাত্রলীগ ও বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে, যাতে আসামি করা হয় বিএনপির দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে। ইতিমধ্যে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় গত দুই দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরো অন্তত ৮০ জনকে। অনেকেই আত্মগোপনে : সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা আজিজুল বারী হেলালসহ আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছে। এর মধ্যে মিন্টু, সোহেল ও হেলাল বকশীবাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। একই মামলায় আরো ২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামির সংখ্যা শতাধিক। আন্দোলন দমনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আটক করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে বলে দলটির নেতারা আশঙ্কা করছেন। হার্ডলাইনে সরকার : জানা গেছে, বিএনপির আন্দোলন নিয়ে সরকার এক ধরনের উভয় সংকটে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সরকার হার্ডলাইনে গেছে। কারণ একদিকে আন্দোলনে ছাড় দিয়ে জনসভা করতে দেওয়া হলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বড় ধরনের লোকসমাগম করে দেখাবে যে তাদের জনপ্রিয়তা কত। পাশাপাশি এ ধরনের জনসভা করতে দেওয়া হলে কোনো একটি ঘটনার সূত্র ধরে ব্যাপক নাশকতার শঙ্কাও সরকারে রয়েছে। এমনকি ব্যাপক লোকসমাগম করে এক ধরনের 'গণ-অভ্যুত্থান' পরিস্থিতি সৃষ্টি করাও অস্বাভাবিক নয় বলে কেউ কেউ মনে করেন। পাশাপাশি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপ হতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা আছে। এদিকে সরকারের বিরুদ্ধে 'অগণতান্ত্রিক' আচরণের অভিযোগ উঠছে। কিন্তু সব কিছুর হিসাব-নিকাশে সরকার শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে মাঠে না নামতে দেওয়ারই পক্ষে। কারণ এতে অন্তত সরকারের বেকায়দায় পড়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সরকারের 'সবুজ সংকেত' পেয়েই গাজীপুর ও ঢাকায় মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ। পাশাপাশি আন্দোলন দমাতে সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। জানতে চাইলে বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে জনসভার তারিখ নির্ধারণ হবে বলে আশা করি। তাঁর মতে, জনসভার তারিখ নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ বা জেদাজেদির প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। ব্যাপারটি প্রশাসনিক এবং বিএনপি অন্য একটি তারিখ বা দিন নিয়ে নিলেই হয়। তিনি অভিযোগ করেন, সংঘাত সৃষ্টি করে বিএনপি দেশের ভালো পরিবেশকে নষ্ট করছে। উপায় নেই বিএনপি জোটের : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আইনজীবী নেতাদের পাশাপাশি দলটির অধিকাংশ নীতিনির্ধারক মনে করেন, যে গতিতে মামলা চলছে তাতে আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে খালেদা জিয়ার 'সাজা' হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে অন্যান্য মামলায় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য ও সক্রিয় কেন্দ্রীয় নেতাদের 'সাজা' হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে দলটির মধ্যে। নেতাদের মতে, ওই সব মামলার রায় ঘোষণা হলে দলের অস্তিত্ব বলতে আর কিছু থাকবে না। বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে জেলখানায় যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই রাজনৈতিক সংকট নিষ্পত্তি করতে মরিয়া বিএনপি। তাই এবার দলটি সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ বিএনপির নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ব্যর্থ হবে না। কারণ আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। সরকারই বরং বিএনপিকে ধ্বংস করার নীলনকশা করছে।' এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিকে ভয় পায় বলেই বিএনপির জনভায় বাধা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবই।' রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি : এদিকে রাজধানীর বকশীবাজারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ও নেতা-কর্মীদের ওপর 'হামলা'র প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশের জেলা সদর ও মহানগরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীতেও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল ঢাকা মহানগর বিএনপির দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বিকেলে শ্যামপুর থানা বিএনপির উদ্যোগে মিছিল হয়। মিছিলটি দোলাইরপাড় বিদ্যুৎ অফিস থেকে শুরু হয়ে দোলাইরপাড় বাসস্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়। ঢাকা মহানগরীর দারুসসালাম থানা বিএনপি বিকেল ৪টায় মিরপুর মাজার রোড থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে।
No comments:
Post a Comment