জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ক্ষতিকর কার্বনসহ গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর জন্য বৈশ্বিক প্রচেষ্টা চলছে জোরেশোরে। এ ব্যাপারে ধনী দেশগুলোকে রাজি করাতে জোর চাপ দিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহজুড়ে পেরুর রাজধানী লিমায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এ নিয়ে চলল উত্তপ্ত আলোচনা। এত সব আয়োজন যখন চলছে, তখন দেখা গেল, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়িয়ে চলেছে বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো। শীর
্ষ ৫০০টি কোম্পানি ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করেছে। খবর গার্ডিয়ানের। কার্বন নিঃসরণে বড় কোম্পানিগুলোর এই বাড়বাড়ন্ত পুরো প্রচেষ্টাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই ৫০০ কোম্পানি পৃথিবীর ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। বৈশ্বিক মোট উৎপাদনের ২৮ শতাংশ পণ্য তৈরি করে এসব কোম্পানি। তথ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টমসন রয়টার্স এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান বিএসডি কনসালটিংয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। থমসন রয়টার্সের টেকসই উন্নয়নবিষয়ক পরিচালক টিম নিক্সন বলেন, ‘আমরা প্রায় সবাই এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য ব্যবহার করি। এটা স্বচ্ছতার বিষয়। আমাদের আশা, এসব কার্বন নিঃসরণকারী প্রতিষ্ঠান এ প্রতিবেদন দেখবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যবস্থা নেবে।’ জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউনেপ) বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে। খরা, বন্যা ও বাড়তে থাকা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কমাতে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ জাতিসংঘের এ লক্ষ্য পূরণে সম্মত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, কার্বনসহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১৩ সালে যে ৫০০টি কোম্পানির কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে, এর মধ্যে সবার আগে আছে পেট্রোচায়না কোম্পানি লিমিটেড, চায়না পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড কেমিক্যাল করপোরেশন, ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আরসেলোর মিত্তাল। এসব কোম্পানির মধ্যে যেগুলোর কার্বন নিঃসরণের হার ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, সেগুলো হলো খনি কোম্পানি গ্লেনকোর, রাশিয়ার সারগাফনেফতেগ্যাস ও এক্সিলোন করপোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এবং থমসন রয়টার্সের অনুসন্ধান থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক আন্তসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) সম্প্রতি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এখন অপ্রতিরোধ্য অবস্থায় চলে এসেছে। এর প্রভাব এখনই দেখা যাচ্ছে। এর ক্ষতির হাত থেকে এ গ্রহকে রক্ষা করতে চলতি শতকের শেষে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। কয়লা, খনিজ তেল বা গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। গবেষণার বিষয়ে বিএসডি কনসালটিংয়ের নির্বাহী ব্যবস্থাপক জন মোরহেড জানান, কার্বন নিঃসরণকারী বৃহৎ ৫০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর্থিক খাত, তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ খাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষাকৃত কম কার্বন নিঃসরণ করে। আগামী বছরের শেষ দিকে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি চুক্তি হওয়ার কথা। এরই প্রস্তুতি হিসেবে এবারের লিমা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এবারের সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। স্বল্পোন্নত দেশগুলো চাইছিল, কার্বন নিঃসরণের এবং অভিযোজন খাতে ধনী দেশগুলোর বরাদ্দের বিষয়টি একটি আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা হোক। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
No comments:
Post a Comment