মর্গে ‘লাশ’ নেওয়ার সময় হাত নেড়ে বেঁচে থাকার বিষয়টি জানান দিয়েছিলেন তিনি। বেচেঁ থাকলেনও প্রায় ২৬ ঘণ্টা। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে হৃৎস্পন্দন না পেয়ে অনেক পরীক্ষার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানালেন, তিনি আর নেই। মৃত্যুর পরও জানা গেল না ৪৫ বছর বয়সী এই নারীর নাম–পরিচয়। গত মঙ্গলবার হাসপাতালের সামনে ফুটপাতে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন এই নারী। হাসপাতালের পরিচালক তাঁকে দেখত
ে পেয়ে ভর্তির নির্দেশ দেন। সেদিন হাসপাতালের নতুন ভবনের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর ইউনিটে ভর্তির পর চিকিৎসকেরা জানান, তিনি মারাত্মক পুষ্টিহীনতা ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন। হৃৎস্পন্দন না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে চিকিৎসক তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছিলেন। নড়ে উঠল ‘লাশ’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, হৃৎস্পন্দন না পেয়ে বৃহস্পতিবার তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে মৃত্যুসনদ লিখেছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তাঁর ‘লাশ’ মর্গে নেওয়ার সময় হাত নড়ে ওঠে। জানান দেন, তিনি বেঁচে আছেন। তাঁকে আবার নেওয়া হয় ওয়ার্ডে। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ রোগীর মতোই তাঁকে সার্বক্ষণিক তদারকিতে রেখে চিকিৎসাও শুরু হয়। সূত্র আরও জানায়, মৃত্যুসনদ লেখার ঘটনায় গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে জরুরি বৈঠকে বসেন পরিচালকসহ হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠকে ওই ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানসহ কর্মকর্তারা ওই নারীকে দেখতে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত তিনি চোখ মেলে তাকিয়েছেন। তরল খাবারও খাওয়ানো হয়েছিল তাঁকে। বিকেলের দিকে তিনি আবার আগের মতো অচেতন হয়ে পড়েন। তাঁর হৃৎস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁকে ইসিজি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল চারটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ মর্গে নেওয়া হয়। তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত হবে। ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এনামুল করিমকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, বৃহস্পতিবার মৃত্যুসনদ লেখা চিকিৎসককে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ভর্তির পর ওই নারীর বিনা মূল্যে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তাঁরা ওয়ার্ডবয়দের দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কেউ পরীক্ষা করাতে নিয়ে যায়নি। হাসপাতালের উপপরিচালক মুশফিকুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওই নারী মারা গেছেন। তাঁকে আগের দিন মৃত ঘোষণা করার ঘটনার তদন্ত চলবে। তদন্তে দেখা হবে, সব ধরনের পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল কি না এবং কে করেছেন। এটা ছিল চরম ভুল সিদ্ধান্ত। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘তবে গণমাধ্যমের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে, এমন কিছু যাতে লেখা না হয়, যাতে পুরো হাসপাতালের ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়।’
No comments:
Post a Comment