চলতি অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রথম ছয় মাসে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১.৫ শতাংশ। তবে নিটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্ট, চামড়াজাত পণ্যসহ বড় খাতগুলোতে এ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এখনো রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি রয়েছে ৪.৪২ শতাংশ বা ৬৮ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। অথচ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬.৫৬ শ
তাংশ। এবার পুরো ছয় মাসই রফতানির লক্ষ্যমাত্রায় ধারাবাহিকভাবে ধস নেমেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ কথা জানা গেছে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৫৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৪৯১ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল এক হাজার ৪৬৪ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছে। একক মাস হিসাবে ডিসেম্বরে আগের ডিসেম্বরের তুলনায় রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এবার ডিসেম্বরে ৮৬ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয়েছে ২৮৪ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী রফতানি আয়ের চালিকাশক্তি গার্মেন্ট রফতানিতে গত ছয় মাসে গতি তেমনভাবে ফেরেনি। এমনকি ওভেন পোশাক রফতানি কমেছে দশমিক ৩৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ওভেন রফতানি ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ কম হয়েছে। এ ছয় মাসে ওভেন পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৫৯৬ কোটি ২৭ লাখ মার্কিন ডলার। নিটওয়্যার রফতানি সামান্য বাড়লেও লক্ষ্যমত্রার তুলনায় কমেছে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৬০৬ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের তুলনায় রফতানি কমেছে হিমায়িত খাদ্য, চামড়া, কাঁচা পাট, সিল্ক, বিশেষায়িত বস্ত্র প্রভৃতি। আলোচ্য সময়ে রফতানি আয় বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্য, রাবার, চামড়াজাত পণ্য, কাঠ ও কাঠজাতীয় পণ্য, কার্পেট, প্রকৌশল পণ্য, সমুদ্রগামী জাহাজ ও কম্পিউটার সেবা, কেমিক্যাল পণ্য প্রভৃতি। রফতানিকারকেরা বলছেন, রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টের দুর্ঘটনা এবং গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের ফলে রফতানি কমে ছিল। এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে তা আশানুরূপ নয়। আগামী সাত বছরে প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্বল অবকাঠামো, দক্ষ শ্রমিকের অভাব এবং গার্মেন্টের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার আর ব্যাংকের সুদের হারকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। পোশাক শিল্প রফতানিকারকেরা বলছেন, রফতানি আয় বাড়লেও বর্তমান বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের জন্য খুব হিসাবি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইপিবি বলছে, অর্থবছর শেষে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে কিছুটা হিমশিম খেতে হবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলছেন, রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও পোশাক শিল্পের নেতিবাচক প্রচারণাই দায়ী। এখন রফতানিতে কিছুটা গতি এলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। তার মতে, বিগত দিনে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে আরো বেশি রফতানি হতো। কিন্তু গেল কয়েক মাস ধারাবাহিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ধস নামছে। এটা শুভ লক্ষণ নয়। রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সবার আগে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে মনে করেন রফতানিকারকেরা। এখন নতুন করে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে তাতে রফতানি খাত আবার ধসের মুখে পড়বে।
No comments:
Post a Comment