প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব ইতিহাসে ২০১৫ সাল একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে। গত ৭ জানুয়ারি নিউ ইউরোপ ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যায় ‘২০১৫ সালে আমাদের বিশ্ব’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি এ কথা বলেছেন। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ব্রাসেলভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ১৯৯৩ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, আমরা নতুন বছরে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। ২০১৫ সাল এবং পরবর্তীতেও আমাদের ভাবমর্যাদা গড়ে ত
োলা প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ যে পুরোটাই অনিশ্চিত, তা নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে। ২০১৫ সালে আমাদের বিশ্ব এবং ২০১৫ সালের পরে আমাদের বিশ্ব কেমন হবে, সেটি এখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে হবে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আমাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের ওপর। বর্তমানে আমরা কী করছিÑ তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ। আমাদের কর্মকাণ্ড আমাদের কথায় প্রতিফলিত হবে এবং এভাবেই আমরা পূর্বাভাস দিতে পারবÑ সুন্দর এক ভবিষ্যতের। নিবন্ধে বলা হয়, ২০১৫ সালের পরে বিশ্বের জন্য আমাদের রূপকল্প হওয়া উচিত জনগণের আশা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটানো। এ জন্য শান্তির সংস্কৃতি, উন্নয়নের অধিকার, ভবিষ্যৎ সম-অধিকার, জনগণের বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যাপক অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি, সবার জন্য ন্যায়ভিত্তিক সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা। একটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ গড়ে তোলা। এ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে এই রূপকল্প বাস্তবায়ন নির্ভর করে। নিবন্ধে আরো বলা হয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে দারিদ্র্য ও অজ্ঞতা। অতএব ২০১৫ সাল-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় মূল বিষয় হতে হবে দারিদ্র্য নিরসন ও শিক্ষা বিস্তার ঘটানো। এখন পর্যন্ত ছয় কোটি শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ কিশোরী এবং ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন লোক এখনো চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। এসব বিষয়কে বাদ দিয়ে আমরা টেকসই উন্নয়ন করতে পারি না। বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অন্তর্ভুক্ত করেছে। রূপকল্প-২০২১ তে এই জনমুখী কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর মধ্য আয়ের দেশ হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই এমডিজি-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ পূরণ অথবা মূল ধারায় অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্য ১৯৯১ সালে ছিল ৫৭ শতাংশ। সেখান থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ২৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এ কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, এমডিজি বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণে সর্বাধিক সফল এজেন্ডা। পাশের দেশগুলো ও অঞ্চলে এমডিজি বাস্তবায়নে ভিন্নতা রয়েছে। ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন লোক এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। ফলে ২০১৫-পরবর্তী এজেন্ডায় দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ কথা আজ আমাদের স্বীকার করতেই হবে, মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাজে নানা প্রতিকূলতা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিটি নীতির লক্ষ্য হচ্ছে নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে সব বাধাবিপত্তি দূর করে এগিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যে তার সরকার দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নারীশিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক করেছে এবং ভবিষ্যতে স্নাতক পর্যন্ত এ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের জন্য বৃত্তি ও স্কুল ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা তহবিল থেকে ২০১৪ সালে এক কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মেয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ শতাংশ শিক্ষকের পদ নারী শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে। স্কুলের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা এখানে পাঠলাভের সুযোগ পাচ্ছে। সরকারের নারী উন্নয়ন নীতিতে শিক্ষা সুবিধা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে এটি প্রণয়ন করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, মেয়েদের আত্মকর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে ছয়টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দক্ষ প্রশিক্ষণ এবং তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এশিয়ার দেশগুলো নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে চট্টগ্রামে প্রথম এশীয় মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমরা ২০১৫-পরবর্তীতে আমাদের রূপকল্প এবং আগামী দশকে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আমাদের মিশন কী হবে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। রাজনীতি, সরকারি-বেসরকারি চাকরি, বিচার বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী, কারিগরি পেশা, বিমান চালনাসহ সব পেশায় এবং খেলাধুলায় ফুটবল, ক্রিকেটসহ সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা হিমালয় পর্বত জয় করেছি। বিশ্বে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যে দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, সংসদ নেতা ও উপনেতা নারী। বিশ্বের পশ্চিমাঞ্চলের অনেক দেশে এমন চিত্র পাওয়া যাবে না। আমাদের কর্মীর সংখ্যা গত তিন বছরে ২৪ থেকে ৩৬ শতংাশে উন্নীত হয়েছে। নারীরা আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ অর্জনে অবদান রাখছে। বিশ্বে তৈরী পোশাক রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রধানমন্ত্রী নিবন্ধে বলেছেন, আমরা অতীত অভিজ্ঞতা ও ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা শক্তি সঞ্চয় করেছি। অতীতের শিক্ষা বিবেচনায় রেখে আমরা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করছি। আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বর্তমান, যেখানে আমাদের অবস্থান। এই বর্তমানের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ হচ্ছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যা আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য রেখে যেতে চাই।
No comments:
Post a Comment