সাত দিন ধরে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশ এই কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়। একই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন এবং রাস্তায় ইট, বালু ও মাটিভর্তি ১১টি ট্রাক দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারি বের হওয়ার চেষ্টা করলে পেপার স্প্রে ছোড়ে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি কার্যালয়েই আছেন। এর আগে ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রথম বর্
ষপূর্তিতে যেকোনো মূল্যে রাজধানীতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। একই দিন আওয়ামী লীগও সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পুলিশ রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়া যাতে কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য তাঁকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতেও পুলিশ কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। গত সাত দিনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। আবার অনেকে যেতে না পেরে ফটক থেকে ফিরে গেছেন। অবশ্য খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধ হওয়ার পরদিন ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘...উনি তো বন্দী নয়। ইচ্ছা করলে উনি উনার বাসায় এখনই যেতে পারেন।’ এর পরদিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন। তাঁকে আটকও করা হয়নি। পুলিশ যদি মনে করে তিনি নিরাপদ, তাহলে তিনি বাসায় যেতে পারেন। গতকাল শুক্রবার সকালে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা পুলিশ আবার খুলে দেয়। কিন্তু কার্যালয় থেকে বের হওয়ার অবস্থা নেই। সোমবার রাতে ইট-বালু ও মাটির ট্রাকগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও একটি জলকামান ও দুটি প্রিজন ভ্যান দিয়ে এখনো রাস্তা আটকানো আছে। এর আগে বৃহস্পতিবারও দিনের বেলায় ফটকের তালা খুলে দিয়ে রাতে আবার তালা দেয় পুলিশ। বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটির সামনে ও ডান পাশে দুটি ফটক আছে। দুই ফটকের সামনে ও রাস্তায় পুলিশের প্রায় ১০০ জন নারী ও পুরুষ সদস্য এখনো পাহারায় আছেন। ৩ জানুয়ারি রাত থেকেই সেখানে পার্কিং করা অবস্থায় আছে পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান, দুটি জিপ ও চারটি মাইক্রোবাস। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবকেও গতকাল দুপুরে এ সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একটাই বক্তব্য, কোনো রাজনৈতিক নেতার ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা যুক্তিসংগত নয়।’ সরকারি সূত্রগুলো বলছে, তাদের কাছে খবর ছিল ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়া ৩ জানুয়ারি রাতেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন। সমাবেশ করতে পারলে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে পারেন বলেও গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এ কারণে দুই দিন আগেই খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার কৌশল নেওয়া হয়। বিএনপির নেতাদের দাবি, ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটায় খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে আসেন। এর মধ্যে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের নেতা রুহুল কবির রিজভী ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। তাঁকে দেখতে খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে যেতে চেয়েছিলেন। এরই মধ্যে রাত নয়টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাঁর কার্যালয় ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। রাত ১১টার দিকে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হতে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়াকে বাসা পর্যন্ত যেতে দেওয়া হবে। এ সময় তাঁর গাড়ির সামনে-পেছনে পুলিশের দুটি করে চারটি গাড়ি থাকবে। এটা জেনে তিনি আর বের হওয়ার চেষ্টা করেননি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন একজন চিকিৎসকসহ এমন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি দাবি করেন, ৫ জানুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে যে পেপার স্প্রে ছোড়ে, তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মরিচের মতো ঝাঁজালো এই রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অবশ্য এই অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দাবি করেন, খালেদা জিয়া অসুস্থতার ভান করেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াসহ প্রায় ৫০ জন ওই কার্যালয়ে আছেন। এঁদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, দলের নেতা বিলকিস জাহান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবুল আলম ডিউ, মিডিয়া উইংয়ের দুই সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দীন দিদার, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়ক আবদুল মজিদসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের ৩৫ জন সদস্য। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার বাসার গৃহকর্মী কুলসুমসহ কার্যালয়ের কর্মচারীরাও আছেন। কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩ জানুয়ারি অবরুদ্ধ হওয়ার রাতে খালেদা জিয়ার জন্য তাঁর বাসা থেকে একটি খাট ও ম্যাট্রেস আনা হয়। এ ছাড়া ওই কার্যালয়ে শীতবস্ত্র হিসেবে বিতরণের জন্য থাকা কম্বল বিছিয়ে নিরাপত্তা দলের সদস্যসহ অন্যরা ঘুমাচ্ছেন। কার্যালয় সূত্র জানায়, এ কার্যালয়ে চা ছাড়া আর কোনো রান্নাবান্না হয় না। অবরুদ্ধ হওয়ার প্রথম দিন খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে খাবার আনা হয়। এর পরদিন থেকে খালেদা জিয়ার খাবারসহ প্রতিদিন আরও ১০-১৫ জনের খাবার রান্না করে পাঠান তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহীনা খান। অন্যদের খাবার-দাবার সরবরাহ করছেন দলের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এমন একজন রাজনৈতিক নেতাকে অবরুদ্ধ করে রেখে সরকার প্রতিপক্ষকে দমন ও নিপীড়নের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাঁর মতে, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সরকারের এ ধরনের নিপীড়ন খুবই অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক। গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ৭ দিন কার্যালয় ঘিরে আছে পুলিশ। প্রধান ফটকে তালা। সামনের দুই পাশের রাস্তাতেই পুলিশের গাড়ি ও জলকামান ৩ জানুয়ারি কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার প্রবেশ, পুলিশের অবস্থান ৪ জানুয়ারি অনুমতি না পেলেও ৫ জানু. সমাবেশের ঘোষণা ৫ জানুয়ারি অবরোধের ডাক, ১১টি ট্রাক রেখে প্রতিবন্ধকতা ৬ জানুয়ারি আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া অসুস্থ, দাবি তাঁর প্রেস সচিবের ৮ জানুয়ারি বিকেলে তালা খুলে সন্ধ্যায় আবারও তালা। ৯ জানুয়ারি পুলিশের পাহারা অব্যাহত খালেদা জিয়া সম্পর্কে তাঁরা যা বললেন প্রধানমন্ত্রী উনি তো বন্দী নয়। ইচ্ছা করলে এখনই যেতে পারেন ত্রাণমন্ত্রী ইট ও বালুর ট্রাক তাঁর বাড়ি সংস্কারের জন্য এনে রেখেছেন তথ্যমন্ত্রী ওনাকে উসকানি থেকে বিরত করেছি ত্রাণমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসুস্থতার ভান করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন হানিফ খালেদা জিয়া দেশবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন
No comments:
Post a Comment