
খবর জানাতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, কেউ এই ঘটনায় সাক্ষ্য দিতে আসছে না। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের আয়োজনে বেলা ১১টায় মানববন্ধন শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন থেকে শুরু হয়ে টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, গণিত ভবন হয়ে কার্জন হল এলাকা পর্যন্ত এই মানববন্ধন হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়াও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ইয়ুথ অ্যান্ড হাঙ্গার বাংলাদেশ, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের সামনে নিপীড়নকারীদের গ্রেপ্তার কর’, ‘প্রশাসনের নির্লিপ্ততা মানি না, মানব না’, ‘জাগো নারী জাগো’সহ নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। মানববন্ধন শেষে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। শিক্ষক সমিতির সময়সীমা: যৌন নিপীড়নকারীদের শনাক্ত করে সাত দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সকালে পৃথক মানববন্ধন থেকে এ সময়সীমা বেঁধে দেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকসুদ কামালের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, টিভি অ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভুঁইয়া, ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান, স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আজিজুর রহমান প্রমুখ। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন যৌন নিপীড়নের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, কালক্ষেপণ না করে সিসিটিভির মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অগ্রগতি নেই তদন্তে: নারী লাঞ্ছনার ঘটনার এক সপ্তাহ পরও পুলিশের তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। জানতে চাইলে ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা মহানগ র পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ইব্রাহিম ফাতেমী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার শিকার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে সাড়া পাইনি। তবে আমরা ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন কর্মী ও চা দোকানিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।’ তবে পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, তাঁরা ছবি দেখে পাঁচজনের চেহারা শনাক্ত করেছেন। তবে এখনো তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া তথ্য চেয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে ফোন করে মানুষজন গালিগালাজ করছে। গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়ে রিট: নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন জমা দেওয়া হয়। দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও বিশেষ আদালত গঠন করে বিচারের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। আবেদনে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, আইজিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, র্যাব সদর দপ্তর ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিবাদী করা হয়েছে। ৫০ শিক্ষকের বিবৃতি: নববর্ষের দিন নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক। গতকাল পৃথক তিনটি বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকেরা হলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজিজুর রহমান, আফরোজা জামান; শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাসুদুজ্জামান; ব্যাংকিং বিভাগের মুজাহিদুল ইসলাম; অর্থনীতি বিভাগের এম এম আকাশ প্রমুখ। অ্যাডাবের নিন্দা: বেসরকারি সংস্থাগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (অ্যাডাব) এক বিবৃতিতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেছে, পরিকল্পিত ও পৈশাচিক এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি কর্তব্যে অবহেলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের মানববন্ধন: নারী লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। বিকেলে তেজগাঁও বিজি প্রেস-সংলগ্ন পুলিশ বক্সের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তাঁরা এ দাবি জানান। সকালের খবর, সমকাল, যায়যায়দিন, চ্যানেল আইসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক কর্মী এতে অংশ নেন।
No comments:
Post a Comment