Saturday, May 9, 2015

চুরি-ডাকাতিতে ব্যাংক প্রহরীরাও জড়িত:কালের কন্ঠ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চুরি-ডাকাতির ঘটনাগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই সব শাখার কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষী বা প্রহরীরা জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব। তাই ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের আগে তাঁদের সম্পর্কে যথাযথভাবে তথ্য সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য আরো বেশিসংখ্যক সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে র‌্যাব। গত বছরের ২৬ জানুয়ারি কিশোরগ
ঞ্জে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখায় সুড়ঙ্গ কেটে ১৬ কোটি টাকা চুরির ঘটনার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে আরো চারটি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এগুলো তদন্ত করতে গিয়ে র‌্যাব কয়েকটিতে ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তাই ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদারের পাশাপাশি প্রহরী নিয়োগে সজাগ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গত ৩০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমের কাছে পাঠানো চিঠিতে বেনজীর আহমেদ বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা অপর্যাপ্ত ও দুর্বল ছিল। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব কর্মচারী ও নিরাপত্তা প্রহরীদেরও ডাকাতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। ব্যাংক শাখাগুলোর নিরাপত্তায় প্রহরী নিয়োগে আরো সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাংকে নিজস্ব সিসি টিভি স্থাপন করে নজরদারির আওতায় আনা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ব্যাংকে অ্যান্টি-থেফট অ্যালার্ম বসানো যেতে পারে। আপৎকালীন দ্রুত নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা পেতে যথাযথ যোগাযোগ স্থাপন ও সমন্বয় করা যেতে পারে। গত ২১ এপ্রিল আশুলিয়ায় দিনের বেলায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি হয়। ওই সময় ডাকাতরা শুধু অর্থই নেয়নি, ওই ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজারসহ আটজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শাখাটির নিরাপত্তা প্রহরী সোহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে গত বছরের ৯ মার্চ বগুড়ার আদমদীঘিতে সোনালী ব্যাংকের শাখায় সুড়ঙ্গ করে ভল্ট থেকে ৩০ লাখ টাকার বেশি চুরি হয়। ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার দেয়াল কেটে এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা চুরি হয়ে যায়। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকের গাজীপুরের জয়দেবপুর শাখা থেকে ৬০ লাখ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। আর এ বছরের ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যান এক কর্মকর্তা। একের পর এক ব্যাংকে চুরি ও ডাকাতির ঘটনায় শাখাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত অর্থ মন্ত্রণালয়ও। এসব ঘটনার সঙ্গে প্রহরীদের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদেরও। শাখাগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে করণীয় নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। তবে বিশ্বস্ত নিরাপত্তারক্ষী পাওয়ার কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারেনি কোনো পক্ষই। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা জানিয়েছেন, নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আনসার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতেই ঘটছে নানা রকমের সমস্যা। আবার কোথাও কোথাও নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী থাকলেও সেখানে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য প্রহরী নিয়োগ দেওয়া যায়, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। এ প্রসঙ্গে সচিব আসলাম আলম বলেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। সে কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর মাঠপর্যায়ের শাখাগুলোতে যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের শাখাগুলোর আশপাশে যারা বসবাস করে বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন।    

No comments:

Post a Comment