অর্ধদশক আগে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার রুট আবিষ্কার করে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ও নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সুবিধা আদায় করতে না পেরে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার সহজ পথ বেছে নেয়। আর এর নেতৃত্বে ছিল গত কয়েকদিন আগে পুলিশের হাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ মানব পাচারকারী টেকনাফের ধলু হোসেন ও বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা ফয়েজ উল্লাহ মাঝি। তাদের হাত ধরেই মূলত সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে অনেকে
মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে। সম্প্রতি সমুদ্রপথে মানব পাচারের ঘটনা ব্যাপকভাবে ফাঁস হওয়ার পর অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব তথ্য। রোহিঙ্গাদের হাত ধরে বাংলাদেশীরাও জড়িয়ে যায় সমুদ্রপথে মানব পাচার ব্যবসায়। একসময় যুক্ত হয় রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট শক্তিশালী চক্র। প্রভাবশালী মহল জড়িয়ে যাওয়ায় মানব পাচার প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগও হয়ে পড়ে সীমিত। এ সুযোগে আইনশৃংখলা বাহিনীর কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ সদস্যও পাচারকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। এসব কারণে সমুদ্রপথে মানব পাচারের বিষয়টি জানা থাকলেও তা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানব পাচারকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকায় জনপ্রতিনিধিদের নামও আছে। এ থেকেই স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল পাচারের নেপথ্যে যুক্ত ছিল। আবার উল্টো ঘটনাও ঘটেছে। তালিকায় মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে যারা প্রতিবাদ করেছেন, পাচারকারীদের কারসাজিতে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের নেটওয়ার্ক ৩২ জেলায় বিস্তৃত। সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা- এসব জেলা থেকে বেশিরভাগ মানব পাচার হয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লোকজনকে জোর করে পাঠানোর ঘটনা থাকলেও মূলত অন্যান্য জেলার লোকজনকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃত পাচারকারী দালালরা আগে থেকেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। ইতিপূর্বে তারা ইয়াবা চোরাচালান, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। বছর দুয়েক ধরে তারা পেশা পরিবর্তন করে মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ে। পাচারকারীদের মধ্যে অনেক ভয়ংকর অস্ত্রধারী ডাকাতও রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে রামুর ধোয়াপালং গ্রামের লেইঙ্গা আলীর ছেলে আবদুল করিম প্রকাশ করিম ডাকাত। এ ছাড়া ধেছুয়াপালং গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে হামিদুল হক প্রকাশ কালাবা ডাকাত (বর্তমানে জেলহাজতে), উখিয়া সোনারপাড়ার কালা জমির, টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের আবুল কালামসহ অনেকে রয়েছে। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ দালালরা বসবাস করে মালয়েশিয়ায়। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত তাদের নেটওয়ার্ক দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে আর লোভ-প্রলোভন দেখিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সহজ-সরল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এদিকে বেশ কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারী নিহত হলে আত্মগোপনে চলে যায় দেশের ভেতর থাকা মানব পাচারকারী দালালরা। থাইল্যান্ডে পাচারের শিকার মানুষের গণকবর আবিষ্কারের পর অবশ্য বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ একযোগে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বর্তমান সংকট নিরসনে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনের তাগিদ দিচ্ছে। মানব পাচার বন্ধ করতে মিয়ানমারের প্রতি সক্রিয় হওয়ার শক্তিশালী বার্তা দিতে চায় মালয়েশিয়া। তবে গোটা বিষয়টির একটি আঞ্চলিক সমাধানে নানামুখী উদ্যোগ চোখে পড়ছে। তার অংশ হিসেবে থাইল্যান্ড একটি সম্মেলন করতে যাচ্ছে। তারপরই সম্মেলনের আয়োজন করবে মালয়েশিয়া। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার যুগান্তরকে বলেন, মানব পাচারের বিষয়ে আমাদের কাছে যেসব খবর আসছে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের সমুদ্রসীমা থেকে এখন আর মানব পাচার হচ্ছে না। যারা গেছে আগে গেছে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মানব পাচারের শিকার যেসব মানুষ উদ্ধার হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক আছেন বাংলাদেশী। পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশনে যাদের দেখাচ্ছে, তাদের চেহারা বাংলাদেশীদের মতো নয়। মিয়ানমারের মেয়েরা গাউনের মতো একটা পোশাক পরে। এ পোশাক বাংলাদেশীরা পরে না। ছোট বাচ্চাদেরও ছবিতে দেখা যাচ্ছে। এরা বাংলাদেশী নয়। মানব পাচারে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানব পাচার চক্রের অনেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে সম্প্রতি বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এমন চক্রের আরও কেউ থাকলে তাদের ধরতে টেকনাফসহ গোটা এলাকায় আমাদের বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের মানব পাচারকারীদের সঙ্গে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধী চক্রের যোগসাজশ হয়। এভাবেই দিনে দিনে মানব পাচার ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা অনায়াসে পাচারকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আসা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানব পাচারের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। রোহিঙ্গারা সহায়-সম্বলহীনভাবে বাংলাদেশে আসায় তারা দালালদের খপ্পরে পড়ে নিজেদের ভাগ্য গড়তে সমুদ্রপথে অনিশ্চিত যাত্রায় শরিক হয়। চট্টগ্রাম এলাকার পাশাপাশি সারা দেশ থেকে দালালরা লোক সংগ্রহ করে উপকূলীয় অঞ্চলে পাঠাতে থাকে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপসহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় মানব পাচার লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। অনেক দিনমজুর কিংবা রিকশাচালক তাদের পেশা ছেড়ে পাচারকারী সিন্ডিকেটের দালালে পরিণত হয়। ওই অঞ্চলে মানব পাচারের সঙ্গে অন্তত ২০টি সিন্ডিকেট জড়িত। তাদের অনেকের পাচারের জন্য নৌকা আছে। আবার কেউ কেউ মিয়ানমারের পাচারকারীদের নৌকা ব্যবহার করে মানব পাচার করে থাকে। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুকদের পাচারকারীরা ছোট ছোট নৌকায় করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে গভীর সমুদ্রে কার্গো জাহাজে তোলে। সেখান থেকেই মুক্তিপণ আদায়ে শুরু হয় নির্যাতন। পাচারকারীদের দালালদের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিতে মোবাইল ফোনে বলা হয়। এমন নির্যাতনে কাজ না হলে তাদের আরও নির্যাতন করা হয় থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে। এসব ঘটনা নতুন নয়। এর আগে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস একাধিকবার এমন সব চিত্র তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে। এসব বার্তা কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসনকে পাঠানো হলেও মানব পাচার বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দূতাবাসের পাশাপাশি মানব পাচার নিয়ে কাজ করে এমন বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও সমুদ্রপথে পাচার বন্ধে বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। কক্সবাজারে পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড পাচারের শিকার কিছু কিছু মানুষ উদ্ধার করলেও পাচারকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের উপযুক্ত সরঞ্জাম না থাকায় তাদের যথাযথ টহল পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশের গহীন অরণ্যে পাচারের শিকার মানুষের গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে রোমহর্ষক কাহিনী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড একযোগে অভিযান শুরু করে। মানব পাচার নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলন। এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার ফারজানা বেগম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মানুষের কর্মসংস্থানের অভাবে মানব পাচার বেড়েছে। তার ওপর এক শ্রেণীর দালাল মানুষকে পাচারে উৎসাহ দিচ্ছে। দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি জনগণকে পাচারের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যুক্ত থাকায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা সমাধান হলে মানব পাচার বন্ধ করা অনেক সহজ হবে। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, মানব পাচারের ঘটনায় থাইল্যান্ড বড় ধরনের চাপে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার প্রতিবেদনে থাইল্যান্ডের অবস্থান সর্বনিুে টায়ারি তিনে থাকায় দেশটি এখন সেই অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে চাইছে। এ জন্য স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা এ সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মেলনের আয়োজন করছে। ২৯ মে একদিনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও জানান, গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো মুসলমানদের বলে চিহ্নিত করার পর মুসলিম কায়দায় তাদের সৎকার করা হয়েছে। টোটন সাহা নামে যাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়নি। তিনি জঙ্গলের টর্চার সেল থেকে পালিয়ে আসেন। তিনি বর্তমানে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ বলে জানিয়েছেন। মানব পাচারে জড়িত দালালরা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ঘিরে গড়ে উঠা দালাল চক্র দূতাবাসের এক শ্রেণীর কনসুলার ও শ্রম বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মানব পাচার করে থাকে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে দূতাবাস কোনো ব্যবস্থা নিলে তারা ঢাকায় উচ্চতর রাজনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে রাষ্ট্রদূতকে পর্যন্ত দেশে ফিরিয়ে আনে। সম্প্রতি এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার রিক্রুটিং এজেন্সির বদলে সরকারি পর্যায়ে লোক নেয়ার চুক্তি করেছিল। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে লোক নেয়ার তেমন চাহিদা মালয়েশিয়া দেয়নি। সেখানে আউট সোর্সিং কোম্পানির দালালরা মানব পাচারকারীদের কাছ থেকে কম খরচে লোক সংগ্রহ করছে। পাচারের মাধ্যমে যাওয়া মানুষের মজুরি ও চাকরির ক্ষেত্রে বঞ্চনাও বেশি হচ্ছে। এসব বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারকে কঠোর হতে দেখা যায়নি। তার বিপরীতে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই বাংলাদেশের উপকূল থেকে পাচার হয়েছে ২৫ হাজার মানুষ। জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, মানব পাচার বন্ধের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করে থাকে। আমি মানব পাচারের বিরোধিতা করি। মানব পাচারের শিকার মানুষকে বিমান থেকে পর্যন্ত নামিয়ে এনেছি। তবে এ কাজটা ইমিগ্রেশনের। এখন বোধ হয় মানব পাচার বন্ধে ভালো ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমি দু’দিন পর এ ব্যাপারে বলতে পারব। ব্যাংকক সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোর দেবে বাংলাদেশ : মানব পাচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। অনিয়মিত অভিবাসনসংক্রান্ত আসন্ন ব্যাংকক আঞ্চলিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়া মানব পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ অঞ্চলের সব দেশকে এ বিষয়ে মিয়ানমারকে শক্তিশালী বার্তা দিতে হবে। থাইল্যান্ড আগামী ২৯ মে একদিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ব্যাংকক সম্মেলনে যোগ দেবেন। তবে এ সম্মেলনে মিয়ানমার যোগ দেবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। থাইল্যান্ড বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারে একজন বিশেষ দূত পাঠিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার আঞ্চলিক উদ্যোগে যোগ দিতে চাইছে না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক মনে করে না। অস্ট্রেলিয়ার অনুরোধে মূলত থাইল্যান্ড এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৫টি দেশ এ সম্মেলনে যোগ দেবে বলে তারা আশা করছেন। তার মধ্যে এ অঞ্চলের দেশগুলো হল : অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। এ অঞ্চলের বাইরে থেকে যোগ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ইউএনওডিসি। বাংলাদেশ নিজ দেশের নাগরিকদের পরিচয় যাচাই করা সাপেক্ষে ফিরিয়ে আনার কথা বললেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, মানব পাচার একটি আঞ্চলিক সমস্যা বিধায় একক কোনো দেশের পক্ষে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পাচারের উৎস, গন্তব্য ও ট্রানজিট দেশগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পাচারের শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের কোনো দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমার যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব না নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মানব পাচার সমস্যার সমাধান হবে না। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বছরের পর বছর ধরে পাচারের শিকার মানুষের ওপর নির্যাতন চলছে এটা ওই দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারিতে কখনও চোখে পড়েনি- এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ- সব দেশই পাচারকারীদের নাম জানে। এখন সময় এসেছে এসব গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে। এটা করা না হলে কোনো এক দেশে অভিযান চালালে পাচারকারীরা অন্য দেশে চলে যাবে। ফলে মানব পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে না। মালয়েশিয়া থেকে ৭০০ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে : সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া গিয়ে আটকে পড়া ৭০০ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) এ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহায়তা দিচ্ছে। ঢাকায় আইওএম মুখপাত্র আসিফ মুনীর মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় উদ্ধার হওয়া ৭০০ বাংলাদেশীকে যাচাই-বাছাইয়ের পর ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আইওএমের কাছে এ সংক্রান্ত জরুরি তহবিল আছে। সেই অর্থ দিয়েই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফর করে দেশে ফিরেছেন। তিনি মালয়েশিয়া গিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে মানব পাচারের মূল কারণ রোহিঙ্গা সমস্যা বলে উল্লেখ করেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে না নিলে মানব পাচার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে যে, এ ব্যাপারে মিয়ানমারকে শক্তিশালী বার্তা দিতে হবে। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এটাও বলা হয় যে, ব্যাংকক সম্মেলন শেষ হওয়ার পর মানব পাচার বন্ধে মালয়েশিয়াও আরেকটি সম্মেলনের আয়োজন করবে।
No comments:
Post a Comment