Friday, June 19, 2015

রোজার উত্তাপ কাঁচাবাজারে:কালের কন্ঠ

তেল-চিনির দামে উত্তাপ নেই, রোজার আগের দুই দিনে বাজার চড়েছে বেগুনের। 'অসময়ে' ব্যাপক চাহিদা ও উত্তরে বন্যায় জমি ডুবে যাওয়ার কারণে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বেগুনের দাম উঠ
েছে কেজিপ্রতি ৯০-১০০ টাকায়। সেই সঙ্গে শসার দামও চড়ে গেছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। কাঁচা মরিচের দর তেমন একটা বাড়েনি, এখন কেজি বিকাচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। প্রতিবছর রোজা এলেই ব্যাপক চাহিদার কারণে প্রথম দিকে এ পণ্যগুলোর দাম বাড়ে। দুই-তিন রোজা গেলেই আবার দাম কমে। এবারও দাম কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময়ে কিছু পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে একসঙ্গে বেশি কেনাকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ ধরেই কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বাজারগুলোতে রোজার কেনাকাটার ব্যস্ততা চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল চূড়ান্ত ব্যস্ততার দিন। একসঙ্গে অনেক বেশি চাহিদা তৈরি হয়েছে বলে সবজি ও মাছের দাম বেড়েছে। কিন্তু চাল, ভোজ্য তেল, চিনি, আটাসহ প্রধান পণ্যগুলোর দামে কোনো হেরফের হয়নি। বরং গত বছরের তুলনায় ক্রেতারা এগুলো অনেক কম দামে কিনতে পারছে। রোজার আগে এক মাসে বাজারে রসুন, আদা, ছোলা, মসুর ডালের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজ ও দেশি আদার দাম আরেকটু বেড়েছে। তবে বেগুন ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়নি বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে গত দু-তিন দিনে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা হয়েছে। চীনা আদা ১৬০ টাকায় পাওয়া গেলেও দেশি আদা উঠেছে ২২০ টাকা কেজিতে। গত বছর রোজার প্রথম দিন বেগুন ১০০ টাকায় উঠেছিল, এবারও তাই। এখন বেগুনের মৌসুম নয়, পাশাপাশি রোজার কারণে চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এদিকে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন জেলায় ভারি বর্ষণে বেগুনের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে সরবরাহ কমে গেছে। বছরের এ সময়টায় বগুড়া, যশোর ও শ্রীপুর থেকে বেগুন সরবরাহ হয় জানিয়ে কারওয়ান বাজারের আড়ত মালিক মোশারফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বেগুন ও কাঁচা মরিচগাছ পানি সহ্য করতে পারে না। কিছুদিন আগেও যেখানে এক রাতে ২০ টন বেগুন আসত, এখন সেখানে এক টনও আসছে না। তিনি বলেন, এই বাড়তি চাহিদা আর কয়েক দিন। কাল থেকেই দাম কমতে শুরু করবে। ১০ রোজার পর তা একেবারেই কমে যাবে। বাড়তি আবাদ আর ভালো ফলনের কারণে কিছুদিন আগেও মানিকগঞ্জে দুই টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। এখন তা একটু বাড়ায় কৃষকরা একটু ভালো দাম পাচ্ছে। গতকাল মানিকগঞ্জের বরঙ্গাইল বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা দরে। ঢাকায় এক কেজি কিনলে ৪০ টাকা, আড়াই শ গ্রাম কিনলে ১২ থেকে ১৫ টাকা পেয়েছেন বিক্রেতারা। দেশি জাতের শসা গত বুধবার ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল তা ৬০ টাকা চাইতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। তবে হাইব্রিড শসা ৪০-৫০ টাকা দরে মিলছে। লেবু প্রতি হালিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মোটা দাগে বিভিন্ন ধরনের সবজি ২৫-৫০ টাকার ভেতরে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির দামও কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা বেড়েছে। অসময় ও চাহিদার কারণে ধনিয়া পাতার কেজি উঠেছে ৩০০ টাকায়। চালের দাম কেজিতে চার-পাঁচ টাকা কমেছে গত এক মাসে। ভোজ্য তেলের বোতলের লিটার ৯৩-১০১ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ১৬-১৮ টাকা কম। চিনি মিলছে ৪০ টাকার কমে, যা গত বছর ৪৭-৪৮ টাকা ছিল। ছোলার দর কেজিপ্রতি ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছরের সমান, কিন্তু এক মাস আগের তুলনায় পাঁচ টাকা বেশি। বাজারে সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০-৫০ টাকা বেশি চাইছে বিক্রেতার। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৮০-২৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৫০-১৬০ টাকা, চাষ করা কই ২২০-২৫০ টাকা, আমদানি করা রুই ২৫০-৩২০ টাকা, কার্পজাতীয় বিভিন্ন মাছ ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় প্রজাতির মুক্ত জলাশয়ের মাছ কিনতে গেলে চড়া দর গুনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি বেলে মাছ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল আকারভেদে ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, শিং আকারভেদে ৬০০-১৪০০ টাকা, মলা ৪০০-৫০০ টাকা, বাইম ৫০০-৬০০ টাকা দাম চাইছেন কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতারা। এদিকে গরুর মাংস ৩৮০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা শুক্কুর আলী বলেন, ইলিশ এখনো বেশি হারে ধরা পড়া শুরু হয়নি। এ কারণে দাম একটু বেশি। মাঝারি আকারের ইলিশ ৬০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment