Friday, July 25, 2014

ঈদে ঘরমুখী মানুষের স্রোত শুরু, বাস-ট্রেন-লঞ্চ সবখানেই ভিড়:প্রথম অালো

রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ কে ট্রাভেলসের কাউন্টারে হন্তদন্ত হয়ে আসা এক যুবক যশোরের টিকিট চাইলেন। জবাবে ওই কাউন্টারের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানালেন, টিকিট নেই। সব অগ্রিম হিসেবে বিক্রি হয়ে গেছে। ওই যুবক ইঞ্জিনের কভারে বসে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও সাড়া পেলেন না। ছুটলেন অন্য বাসের কাউন্টারের দিকে। পরিচয় দিয়ে আলাপকালে রোকনুজ্জামান নামের ওই যুবক জানালেন, তিনি জ্
বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। আগামী রোববার ছুটি নিয়ে এবং গতকাল সকালে অফিসে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলে গ্রামের বাড়ি যশোর যাবেন বলে বেরিয়েছেন। রোকনুজ্জামানের মতো গতকাল হাজার হাজার মানুষ নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়েছেন। কেউ একা, কেউ সপরিবারে। কী বাস টার্মিনাল, কী রেলস্টেশন, কী লঞ্চ টার্মিনাল—সবখানেই ছিল ঈদে ঘরমুখী মানুষের স্রোত। দুপুরের পর থেকে রাত অবধি চলে এ অবস্থা। যাঁরা অগ্রিম টিকিট কিনে রেখেছিলেন, তাঁরা নির্বিঘ্নে ঢাকা ছাড়তে পারলেও যাঁরা আগে টিকিট কিনতে পারেননি, তাঁদের টিকিট জোগাড়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে। ঈদের ছুটি শুরু হবে আগামী সোমবার থেকে। কিন্তু আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। মাঝে অফিস-আদালত খোলা কেবল রোববার। তাই রোববার অনেকে ছুটি নিয়ে গতকালই ছুটেছেন গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক, নৌ ও রেলপথের সমীক্ষা প্রতিবেদন ও পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী এবার ঈদে প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বে। এই সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল রাজধানীর তিন আন্তজেলা বাস টার্মিনাল—গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদে ছিল ঘরমুখী মানুষের ভিড়। প্রতিবারের মতো এবারও বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গাবতলীর শ্যামলী পরিবহনের একটি কাউন্টারে গিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার ভাড়া অন্য সময়ে ৪৫০ টাকা হলেও এখন ৫৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল এই পরিবহনের একেবারে পেছনের সারির কয়েকটি আসনের টিকিট পেতে ছিল রীতিমতো কাড়াকাড়ি। একজন নারী যাত্রী জানালেন, তিনি যাবেন মাগুরা। ভালো মানের বাসের টিকিট না পেয়ে সাধারণ মানের বাসেই যেতে হচ্ছে, তাও বাড়তি ভাড়া দিয়ে। বাড়তি ভাড়ার এই অভিযোগের প্রতিকার না থাকায় যাত্রীরা বাধ্য হয়েই তা মেনে নিয়েছেন। গাবতলী থেকে উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাস বেশি চলে। নামীদামি পরিবহনের কয়েকটি কাউন্টারে গিয়ে জানা যায়, অগ্রিম হিসেবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত অধিকাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। গতকাল সাধারণ মানের বাসগুলো নিমেষে যাত্রী ভরে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। বাসকে যাত্রীর জন্য নয়, যাত্রীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বাসের জন্য। টার্মিনালে পৌঁছার জন্য তাঁদের নগরের তীব্র যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ট্রেনেও ভিড়: কমলাপুর রেলস্টেশনেও ছিল ঘরমুখী মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনই যাত্রীতে পূর্ণ। ট্রেনের দরজায় ঝুলে, ছাদে উঠে অনেকে গন্তব্যে গেছেন। বেলা দুইটা ৪০ মিনিটের রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি ঠাসাঠাসি যাত্রী নিয়ে কমলাপুর ছেড়েছে নয় মিনিট পর। দরজায় ঝুলে, বগির পেছনের অংশে দাঁড়িয়ে, ছাদে উঠেও মানুষকে যেতে দেখা যায়। ভিড়ের কারণে কেউ কেউ চেষ্টা করেও ট্রেনে উঠতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে এক নারী মন খারাপ করে প্ল্যাটফর্মে বসে পড়েন। চট্টগ্রাম অভিমুখী সুবর্ণ, নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসসহ সব ট্রেনেই ছিল একই দৃশ্য। টিকিটের জন্য হাহাকার: গতকালও কমলাপুর স্টেশনে ছিল অগ্রিম টিকিটের জন্য হাহাকার। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৮ জুলাইয়ের টিকিট। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও রেলসচিব আবুল কালাম আজাদ বেলা আড়াইটার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। যাত্রীদের সুবিধার্থে ট্রেনে বগিও বাড়ানো হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, দুপুরের পর থেকে নদীপথের যাত্রীরা ঢাকার সদরঘাট টার্মিনালে আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ৪৩টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সব কটি লঞ্চেই যাত্রী ছিল পরিপূর্ণ। বরিশালগামী সুন্দরবন-২ লঞ্চের যাত্রী মো. আনোয়ার জানান, লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটায়। যানজট এড়ানোর জন্য দুপুরের দিকে টার্মিনালে চলে এসেছেন। তবু যানজট থেকে রেহাই পাননি। টার্মিনালে হকার ও কুলিদের উৎপাতের অভিযোগ করলেন কয়েকজন যাত্রী। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তা, যানজট নিরসন ও যাত্রী হয়রানি রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

No comments:

Post a Comment