Sunday, July 13, 2014

ডাক্তারদের উপস্থিতি দেখার যন্ত্র নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে!:কালের কন্ঠ

মাঠপর্যায়ের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর বহুবার বহু রকমভাবে কঠোর হুমকি-ধমকি কিংবা উৎসাহ দিয়েও অবস্থার তেমন উন্নতি ঘটাতে পারেননি। বরং এবার মাঠের এসব ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য স্থাপিত আধুনিক যন্ত্রগুলো নষ্ট করে রাখার। আর এ অভিযোগ তুলেছে খোদ স্বাস্থ্য অধ
িদপ্তরই। এসব যন্ত্র নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশের সব সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক আদেশে নিজ নিজ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে হাজিরা মনিটরিংয়ের জন্য স্থাপিত বায়োমেট্রিক মেশিন নষ্ট করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে তিন কর্মদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নির্দেশে আশানুরূপ সাড়া পায়নি অধিদপ্তর। সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কোনো তথ্যই পাঠাননি। পরে গত ৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশ পাঠানো হয়েছে সিভিল সার্জন এবং সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের কাছে। এতে আগের নির্দেশে সাড়া না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আরো দুই কর্মদিবস সময় বেঁধে দিয়ে ওই সব যন্ত্র নষ্টের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এবং আগের নির্দেশ কেন কার্যকর হয়নি তা ব্যাখ্যাসহ জানাতে বলা হয়েছে। তা না হলে যে কর্মকর্তারা তথ্য পাঠাননি, তাঁদের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১২-১৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার এইচপিএনএসডিপির (স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচি) অর্থ থেকে দেশের সব উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে একটি করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিশেষ সেন্সরযুক্ত ওই মেশিনগুলো ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় বা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে কোন ডাক্তার কখন তাঁর কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েছেন, তা শনাক্ত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আগেই সব ডাক্তারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রবেশ করেই প্রথমে ওই যন্ত্রে নিজের আঙুল পুশ করতে হবে এবং কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও একই কাজ করতে হবে। প্রতিটি যন্ত্র ৩০০ ডলার করে কেনা হয়েছিল। এ ছাড়া এসব যন্ত্র যাতে চুরি না যায় এ জন্য লোহার খাঁচা দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে প্রতিটি যন্ত্র রাখা হয়। এখন পর্যন্ত দেশের অর্ধেকের বেশি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘লোহার খাঁচা দিয়ে যন্ত্র চুরি ঠেকানো গেলেও অনেক স্থানেই ওই যন্ত্র কার্যকর বা অক্ষত রাখা যাচ্ছে না। যে স্থানটুকু দিয়ে আঙুল পুশ করা হয় ঠিক ওই অংশটুকুই ভেঙে বা নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক সূত্র জানায়, কেবল মেশিন নষ্ট করাই নয়, যেসব স্থানে এখনো ওই যন্ত্র স্থাপন করা হয়নি সেগুলোতে যাতে স্থাপন করা না হয় সে জন্যও নানা তৎপরতা চলছে। ফলে ওই প্রক্রিয়া একরকম থেমে আছে। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায় বায়োমেট্রিক মেশিন নষ্ট থাকার চিত্র। এ ছাড়া কোনো কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই যন্ত্র পাঠানো হলেও তা চালু করা হয়নি বলে জানা যায়। সিরাজগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘মেশিনটি স্থাপনের পর প্রায় বছরখানেক ঠিক চলছিল। এরপর কিভাবে যেন নষ্ট হয়ে যায়।’ তিনি দাবি করেন ‘মেশিনটি আমরা সারানোর জন্য ঢাকায় কয়েকবার যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু কেউ এটি সারিয়ে দিয়ে যায়নি। তাই অনেক দিন ধরেই মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।’ অন্যদিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মোতালেব মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এখানে বায়োমেট্রিক যন্ত্রটি আছে, কিন্তু তা চালু করে দিয়ে যাওয়া হয়নি।’ ওই দুই কর্মকর্তা সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো আদেশপ্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, তাঁরা সময়মতোই তথ্য-উপাত্ত ও জবাব ঢাকায় পাঠিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment