Friday, July 25, 2014

ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্ত জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রও:কালের কন্ঠ

উত্তর-পূর্ব গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। স্কুলটি ইসরায়েলি হামলায় তাড়া খাওয়া ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘ কর্মী এবং কয়েকটি শিশুও রয়েছে। বেইত হানোন শহরের ওই আশ্রয়শিবিরে হামলায় আহত হয়েছে দুই শতাধিক। ওই ভবনের ওপর তিন দিনের মধ্যে এটি ছিল চতুর্থ দফা হামলা। অসম এই যুদ্ধে বাছবিচার না করেই গাজায় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ
্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। জল, স্থল, আকাশ থেকে চলা ইসরায়েলের এই দানবীয় অভিযানে এ পর্যন্ত গুঁড়িয়ে গেছে ৪৭৭টি বাড়ি, ৪৬টি স্কুল, ৫৬টি মসজিদ এবং সাতটি হাসপাতাল। আর অভিযানের ১৭ দিনে প্রাণ হারিয়েছে ৭৮৮ ফিলিস্তিনি। যার এক-চতুর্থাংশই শিশু। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ৩৪ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত দুই দিনে অস্ত্রবিরতির প্রচেষ্টা জোরদার করেছেন আন্তর্জাতিক নেতারা। যদিও এ প্রচেষ্টা সাফল্যের মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েই গেছে। কেননা এক্ষুনি অস্ত্রবিরতিতে সায় নেই এই লড়াইয়ের মূল দুই পক্ষের। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের সুড়ঙ্গ সন্ধান শেষ না করে তারা থামবে না। আর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস এখনো ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবিতে অনড়। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে গাজা উপত্যকা। ৪৪ শতাংশ এলাকা থেকে বেসামরিক জনগণকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। তাড়া খেয়ে এসব এলাকার ফিলিস্তিনিরা গিয়ে ওঠে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল অথবা স্বজনদের বাসায়। ওই স্কুলগুলোর মধ্যেই একটি গতকাল আবারও ইসরায়েলি হামলার শিকার হলো। জাতিসংঘের ত্রাণ ও কাজ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএর পরিচালক রবার্ট টার্নার বলেন, গোলা ছোড়ার আগে ইসরায়েলি বাহিনী সতর্ক করেনি। এ ঘটনায় হতাহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। টার্নার আরো জানান, এই ভবনে হামলার আশঙ্কা থাকলে খালি করার জন্য একটি নিরাপদ রাস্তা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা সকাল থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। তবে ইসরায়েল সহযোগিতা করেনি এবং স্থানীয় সময় দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ‘এটা জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর অবস্থান সম্পর্কে ইসরায়েলকে আগেই জানানো হয়েছে। এই ভবনের ওপর গত তিন দিনে এটি ছিল চতুর্থ দফা হামলা।’ ইসরায়েল জাতিসংঘের আরো চারটি স্কুলেও এর আগে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, স্কুলগুলোতে অস্ত্রসহ হামাস যোদ্ধারা লুকিয়ে রয়েছে। তবে টার্নার জানান, এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। এদিকে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভ্যালেরিয়া আমোস। অস্ত্রবিরতিকে অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভূখণ্ডের ৪৪ শতাংশ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত জাতিসংঘ পরিচালিত ৬৯টি স্কুলে এক লাখ ১৮ হাজার গাজাবাসী আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোতে খাদ্য ও পানি ফুরিয়ে এসেছে। ফলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তারা। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পরিস্থিতির জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, হামাস জনবহুল এলাকায় আশ্রয় নিয়ে নিরীহ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যে কারণে তাদের মারতে গিয়েই সাধারণ মানুষ মারা পড়ছে বেশি। সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি। তবে হ্যামন্ড বলেন, ‘গাজায় নিরীহ মানুষ যত প্রাণ হারাচ্ছে পশ্চিমা জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ততই বাড়ছে এবং ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতি কমছে।’ একই সঙ্গে তিনি হামাসের প্রতি অস্ত্রবিরতি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। এর মধ্যেই চলছে অস্ত্রবিরতির উদ্যোগ। মধ্যপ্রাচ্য সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, তাদের উদ্যোগে সাফল্য আসছে। গতকাল তিনি কাতার ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এই দুটি দেশের সঙ্গে হামাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খালেদ মেশাল বর্তমানে কাতারেই অবস্থান করছেন। প্রসঙ্গত হামাসকে জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। এখনো পর্যন্ত পরোক্ষভাবেই আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে তারা। তবে খালেদ মেশাল গত বুধবার রাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজা থেকে অবরোধ তুলে না নিলে রকেট হামলা বন্ধ করবে না তারা। ইসরায়েলের দিক থেকেও নতুন কোনো বার্তা নেই। দেশটির বিজ্ঞানবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকোভ পেরি ইসরায়েলি ওয়েব পোর্টাল ওয়ালাকে সম্প্রতি জানান, আসন্ন দিনগুলোতে অস্ত্রবিরতির কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না। তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হামাসের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, আল জাজিরা, আরব নিউজ।

No comments:

Post a Comment