Friday, July 25, 2014

এবার আলজেরীয় বিমান ১১৯ আরোহীসহ বিধ্বস্ত:কালের কন্ঠ

এক সপ্তাহের মধ্যে তিন-তিনটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের দুটি বিমান দুর্ঘটনার পর আলজেরিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাতে ১১৯ জন আরোহী নিয়ে এবার আলজেরিয়ার একটি বিমান প্রতিবেশী দেশ মালিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। এয়ার আলজেরির বিমানটি বারকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাডুগু থেকে আলজেরিয়া যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়। আলজেরিয়ার সরকার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সংবাদ নিশ্চ
িত করলেও কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে তা জানাতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে বিমানটি গতিপথ পরিবর্তনের জন্য নাইজারের নিয়ামে অবতরণের চেষ্টার একপর্যায়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমানটি আলজেরিয়ার সীমান্ত থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে প্রতিবেশী দেশ মালির গাও অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। আলজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী উত্তর মালিতে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। মালির নাগরিকরা জানিয়েছে, তারা মালির উত্তরাঞ্চলের অ্যাগুয়েলহোক ও কিদাল শহরের মধ্যবর্তী স্থানে এয়ার আলজেরির বিমানটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছে। বিমানটিতে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ ৫০ জন যাত্রী ছিলেন। ফ্রান্স সরকার বিধ্বস্ত বিমানটির খোঁজে দুটি যুদ্ধবিমান সাহারা এলাকায় পাঠিয়েছে। গত বুধবার থাইল্যান্ডেও বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল ঝড়ের কারণে জরুরি অবতরণ করতে গিয়ে। তাতে মৃত্যু হয় ৪৮ যাত্রীর। ঝড়ের মধ্যে বিমান উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়ায় থাইল্যান্ডে এখন সমালোচনার ঝড় বইছে। আর গত ১৭ তারিখ (বৃহস্পতিবার) পূর্ব উইক্রেনে মালয়েশীয় বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ভূপাতিত করা হয় বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়, যাতে বিমানটির ২৯৮ জন আরোহীর সবাই মারা যায়। এ জন্য ইউক্রেন সরকার ও স্বাধীনতাকামী পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। আলজেরিয়ার সরকারি বিমান সংস্থা এয়ার আলেজেরির মুখপাত্র হোয়ারি জুহায়ের জানান, বিধ্বস্ত হওয়া ফ্লাইট এএইচ৫০১৭ বিমানটিতে ১১২ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রু ছিলেন। রয়টার্স জানিয়েছে, বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে ৫০ জন ফ্রান্সের, ২৪ জন বারকিনা ফাসোর, আটজন লেবাননের, চারজন আলজেরিয়ার, দুজন লুক্সেমবার্গের, একজন করে বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, ইউক্রেন ও রোমানিয়ার নাগরিক রয়েছে। তবে লেবাননের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাঁদের অন্তত ২০ জন নাগরিক ছিল বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে। বিমানটির পাইলটসহ সাতজন ক্রুর সবাই ছিলেন স্পেনের নাগরিক। লেবানন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের মধ্যে তাদের দেশের অন্তত ২০ জন নাগরিক ছিল, যাদের মধ্যে তিন দম্পতি এবং ১০টি শিশু রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এয়ার আলজেরির এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘বিমানটি যে বিধ্বস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত।’ তবে এর চেয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে তিনি অস্বীকার করেছেন। আলজেরিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানায়, এয়ার আলজেরির ফ্লাইট এএইচ৫০১৭ বারকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু বিমানবন্দর থেকে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে স্থানীয় সময় বুধবার রাত (গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহর) ১টা ১৭ মিনিটে। উড্ডয়নের ৫০ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে বিমানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল ভোর ৫টা ১০ মিনিটে বিমানটির আলজেরিয়ায় পৌঁছার কথা ছিল। ম্যাকডোনেল ডগলাম এমডি-৮৩ বিমানটির মালিক স্পেনের বেসরকারি বিমান সংস্থা সুইফট এয়ার। তাদের কাছ থেকে ভাড়ায় বিমানটি চালাচ্ছিল এয়ার আলজেরি। বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ অজানা : আলজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদেল মালেকের উদ্ধৃতি দিয়ে আলজেরীয় রেডিও জানায়, বিমানটি মালির গাও অঞ্চলে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছে, যা আলজেরিয়ার সীমান্ত থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে। মালির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিমান দুর্ঘটনার পর মালির ওই অঞ্চলে প্রচণ্ড ঝড় বইছিল। মালির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, বিমানটি মালির সংঘাতময় এলাকা উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার পর বিধ্বস্ত হয়। বিভিন্ন বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, এলাকাটি ২০১২ সালের কয়েক মাস একটি জিহাদি গ্রুপ দখল করে রেখেছিল। বর্তমানেও ওই এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের যুদ্ধ চলছে। এএফপি জানিয়েছে, যে রুটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, ওই বিমান রুটটি আফ্রিকা সফরের পথে ফ্রান্সের যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়। বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফ্রান্সের শীর্ষ বেসামরিক বিমান কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠক করেছেন। ফ্রান্সের পরিবহনমন্ত্রী ফ্রেডরিক কিউবিলিয়ার বলেন, ফ্রান্সে জরুরি ভিত্তিতে একটি ‘ক্রাইসিস সেল’ গঠন করা হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, এর কোনো কারণ এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও খারাপ আবহাওয়ার কারণেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। মালিতে কর্মরত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, তারাও ধারণা করছে, বিমানটি মালির গাও ও তেসালিত অঞ্চলের মাঝামাঝি কোথাও বিধ্বস্ত হয়েছে। মালিতে শান্তিরক্ষী বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কোকো এসিয়েন বিবিসিকে বলেন, এলাকাটি আলজেরিয়া সীমান্তের কাছে। সেখানে জনবসতি খুবই কম। তিনি বলেন, যখন বিমানটি নিখোঁজ হয়, সেই রাতের ওই এলাকার আবহাওয়া খুবই খারাপ ছিল। এলাকাটিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এখনো সক্রিয় বলে তিনি জানান। সিএনএন জানিয়েছে, এলাকাটিতে ধুলোঝড় বইছিল। এয়ার আলজেরির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে বিমানের ক্রু স্পষ্টভাবে কিছু দেখতে পারছিলেন না। এ জন্য অন্য কোনো বিমানের সঙ্গে যাতে সংঘর্ষ না হয়, তাই তিনি বিমানপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আর সেটা করতে গিয়েই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্যারাগুয়েতে ছোট বিমান বিধ্বস্ত : এদিকে প্যারাগুয়েতে গত বুধবার ছোট একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিন ব্যক্তি মারা গেছেন। বিমানটি একটি সড়কে জরুরি অবতরণ করতে গিয়ে একটি মোটরবাইকের ওপর বিধ্বস্ত হয় বলে জানা গেছে। এতে পাইলট বেঁচে যাওয়ার পর পালিয়ে যান। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। দুর্ঘটনাটি প্যারাগুয়ের পেদ্রো জুয়ান কেবেলরো শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে এবং ব্রাজিলের সীমান্তের কাছে। দুর্ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী, দুই বছরের এক শিশু এবং একজন বয়স্ক নারী মারা যান। বিমানটির লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও অনুমোদনহীনভাবে বিমানটি পাইলট চালাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। থাইল্যান্ডে দোষারোপ, ক্ষোভ : অন্যদিকে বুধবার থাইল্যান্ডে ট্রান্স এশিয়া এয়ারওয়েজের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৪৮ জন নিহত হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শেষ হয়নি। গতকাল শতাধিক ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও মৃতদেহ উদ্ধার করতে দেখা গেছে। তবে সব মৃতদেহ উদ্ধার সম্পন্ন হয়েছে কি না এ ব্যাপারে থাই কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিমান দুর্ঘটনার পর এখন থাইল্যান্ডজুড়ে শোক পরিণত হয়েছে ক্ষোভে। ঝড়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও সাধারণ নাাগরিকরা। তারা ট্রান্স এশিয়া এয়ারওয়েজ ও সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তাদের দোষারোপ করছে, ঝড়ের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কেন বিমানটির উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়া হলো। তবে থাই কর্মকর্তারা বিমান উড্ডয়নের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে দাবি করেছেন। বিমান দুর্ঘটনায় ২৮ বছরের ছেলে হারানো হিসুস নামের এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে এএফপিকে বলেন, ‘এমন খারাপ আবহাওয়ায় কোনোভাবেই বিমানটির ওড়ার অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের। পরিবারের ছয় সদস্যকে হারিয়ে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে চিৎকার করতে দেখা গেছে এক ব্যক্তিকে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

No comments:

Post a Comment