দেশের অধিকাংশ মহাসড়কের অবস্থা নাজুক। ঈদকে সামনে রেখে ব্যাপক তোড়জোড় সত্ত্বেও মেরামত সম্ভব হয়নি। এছাড়া যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পে তেমন অগ্রগতি নেই। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে সহসাই ভোগান্তি কমছে না সর্বসাধারণের। তবে অর্থ ব্যয় নিয়ে সন্তুষ্ট সড়ক বিভাগ। তাদের দাবি, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ভ
ালো অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে ১৪৯টি প্রকল্প ছিল সড়ক বিভাগের অধীনে। এজন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। বছর শেষে এর ৯৯ দশমিক ৪৫ ভাগ অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে ২৬টি প্রকল্পের। যার অনেকগুলোর পুরোপুরি অর্থ ব্যয় করা হয়নি। এছাড়া ৩৮টি প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি বলে আবারও মেয়াদ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, চলতি অর্থবছরে ২৬টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে। অনেক সময় জেলা সড়ক উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প নেয়া হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই বরাদ্দের মাধ্যমে তা শেষ করা যায়নি। ফলে মাঝপথে প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে আবারও নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে ৫৬টি প্রকল্প নির্বাচন করা হয়, যা অবশ্যই শেষ করতে হবে। তা সম্ভব না হলে ব্যয় ও মেয়াদকাল অবশ্যই বাড়াতে হবে। এজন্য অর্থ বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে যাতে শেষ করা যায়। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে যেসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তার মেয়াদ বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন করা হয়েছে। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কম অগ্রগতি হওয়ায় কমেনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। পুরোপুরি কাজ শেষ না করে সমাপ্তি ঘোষণা করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (বরিশাল জোন)। ২০০৯ সালে শুরু করা এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২৯৫ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ১৮৮ কোটি টাকা ব্যয় করে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট জোনের কাজ শুরু করে শেষ হয়েছে আরও আগেই। এতে ১৮২ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় করা হয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা। রাজশাহী জোনে বরাদ্দ ছিল ২২৮ কোটি টাকা। ব্যয় করা হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। ঢাকা জোনের অবস্থা আরও খারাপ। এ জোনে ৩৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২১৪ কোটি টাকা ব্যয় করেই প্রকল্পের সমাপ্তি টানা হয়েছে। গাবতলী সোয়ারীঘাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে প্রকল্পের সমাপ্তি টানা হয়েছে। ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে গচ্ছা দিতে হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। পাচ্চর শিবচর মাদারীপুর সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ মাত্র ৬৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে সমাপ্তি টানা হয়েছে। ৩৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ২২১ কোটি টাকা। এমন আরও বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে যা পুরোপুরি কাজ শেষ করা হয়নি। এ বিষয়ে আইএমইডির সংশ্লিষ্টরা বলছে, গত দু’মাস আগেও সড়ক বিভাগের কাজে তেমন অগ্রগতি ছিল না। কিন্তু মে থেকে জুন পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকের মতো অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্পে অগ্রগতি কম হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্র“ভমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে। জরাজীর্ণ এ ব্রিজের উন্নয়নে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি অনুসারে। কিন্তু গত অর্থবছরই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও জুন পর্যন্ত শেষ হয়েছে মাত্র ৬৭ শতাংশ অর্থ। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে ব্যয় হয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা। যার অনুকূলে বরাদ্দ মোট ছিল ১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। এ হিসেবে মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। সাসেক কানেকটিভিটি রোড নির্মাণ প্রকল্প বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দাতা সংস্থার সহযোগিতায় নেয়া এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৭৮ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৬ শতাংশ। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ৬ শতাংশ অর্থ। ২০১১ সালে নেয়া এ প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ ছিল ১২০ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প (এমআরটি) প্রকল্পের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। কিন্তু এটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। জয়দেবপুর ময়মনসিংহ রোড ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮৫২ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৪৭ শতাংশ। এছাড়া গ্রেটার সাসটেইনেবল আরবান ট্রানজিট প্রকল্পের অগ্রগতি ২ শতাংশ। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এছাড়া বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার দুটি সড়ক উন্নয়ন, নওগাঁ বদলগাছী-পত্নীতলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণ, কানসাট-সাপাহার-পোরশা রহনপুর সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্তকরণ, দোহার কাটাখালী নিকড়া-গালিমপুর সড়ক উন্নয়ন, খুলনা জেলার দীঘলিয়ায় অবস্থিত নদীভাঙন কবলিত নগরঘাটা-তেরখাদা সড়ক পুনর্বাসন ও রক্ষাপ্রদ সংরক্ষণ প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতি খুবই সামান্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দ না থাকা, প্রকল্পের সংখ্যা ও বাজেট নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা কমিশনের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ও টেকনিক্যাল প্রকল্প প্রস্তাবে (টিপিপি) গুণগত মানের দুর্বলতা, ঘনঘন প্রকল্প সংশোধন, দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতার অভাবেই মূলত নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায় না। ফলে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে ওঠে না।
No comments:
Post a Comment