ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় একের পর এক জালিয়াতি চলছেই। এবার জালিয়াতির সাথে জড়িত অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতাসহ ৩৮ জন র্যাবের হাতে আটক হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সর্বশেষ ঘ-ইউনিটের পরীক্ষা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৭ ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেয়ার সময় মোবাইলসহ হাতেনাতে আটক করেছে। যাদের সবার সাথেই ভর
্তি পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেয়ার শর্তে দুই থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি ছিল জালিয়াত চক্রের। অন্য দিকে সারা রাত অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোজাম্মেল হক লেনিনসহ তিনটি জালিয়াত চক্রের ২১ জনকে আটক করেছে র্যাব। এর মধ্যে ১২ জনই জালিয়াত চক্রের সদস্য। এ নিয়ে ৩৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধে করা নতুন নিয়মও কোনো কাজে আসেনি। জানা যায়, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজ, ইডেন ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ এবং টিচার্স ট্রেনিং কলেজকেন্দ্রিক একাধিক চক্রের নাম ঘুরে ফিরে আসছিল। এর মধ্যে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী হ্যাপীসহ বেশ কিছু নাম একাধিকবার জালিয়াতির ঘটনায় আলোচনায় আসে। মামলা হলেও তাদের কাউকেই আটক করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি ক-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার পর সবুজ ক্যাম্পাসে বেশ কিছু নেতাকর্মীসহ মহড়া দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায়। সর্বশেষ গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ পরিবর্তনের ঘ-ইউনিটের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায়ও জুয়েল নামে একজনের নাম বার বার উঠে এসেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের পদধারী নেতা বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। এ ছাড়া মোহন ও ইমদাদ নামে জালিয়াত চক্রের একাধিক সদস্যের কথা জানিয়েছে আটক শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে হাতেনাতে আটক ১৭ শিক্ষার্থী হলোÑ আজিমপুর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে বুল্টি বালা (রোল-৭৪০৪৩৪), মো: মেহেদী হাসান রানা (রোল-৭৪১৪০১), মেহেদী হাসান খান (রোল-৭৪০৭০৪), আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মোছা: খায়রে উম্মে সালমা (রোল-৭৩৩৪৫০) ও শারমিন আকতার মিশু (৭৩৩১৫৯) ও লালবাগ মডেল স্কুল থেকে ইমদাদুল ইসলাম (৭৩২১১৫)। তাদের লালবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। উইলস লিটল ফাওয়ার স্কুল কেন্দ্র থেকে মেহেদী হাসান (রোল-৭৭৫৯১৪) ও কৌশিক ফারহান (রোল-৭৭৫৯০৫), সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে রিহাদ হাসান রিফাতকে (রোল-৭৮২৪৯৫) আটক করা হয়। এ তিনজনকে রমনা থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বদরুন্নেছা মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে মো: আবিদ ইসলাম রিতন (রোল-৭২৭৯২২) ও মো: শাহরুখ আলম (রোল-৭২৯০৪২)। এ দু’জনকে চকবাজার থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে রিয়াদ আরফিনকে (রোল-৭২৪১৩৮) আটক করে বংশাল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে ফৌজিয়া জামান নবনীকে (রোল-৭৮৮৩৯৭) আটক করে মতিঝিল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ফাতিমা বিনতে জাফরকে (৭৯৮০১২) আটক করে খিলগাঁও থানায় সোপর্দ করা হয়। মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মেহেদী হাসানকে (রোল-৭৭৩৫৭২) আটক করে মিরপুর থানায় সোপর্দ করা হয়। টিকাটুলি সেন্ট্রাল মহিলা কলেজ থেকে মো: ওমর ফারুককে (রোল-৮০৩৩০০) আটক করে ওয়ারী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে মো: রনি হাসানকে (৭৬০৯৭৬) আটক করে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়। এর আগে রাতে পুলিশের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে আটক জালিয়াত চক্রের তিন সদস্য হলেনÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো: সুমন মিয়া এবং একই বিভাগের ইভনিং এমবিএর ছাত্র সাব্বির। অন্যজন ঢাকা কাবের কর্মকর্তা শামীম। এর মধ্যে সাব্বিরকে শাহবাগ থানায় এবং বাকি দু’জনকে র্যাবের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে মো: আরিফুল ইসলাম (রোল-৮০২৭০৭), মো: মহিউদ্দিন খান (রোল-৮০২৮৭৮) এবং মো: রুবেল মিয়া (রোল-৭৭৪২১৮) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এ দিকে গত বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে রাজধানীতে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা চক্রের ১৩ সদস্য, অসদুপায়ে জড়িত আট পরীক্ষার্থী এবং কলেজের একজন প্রভাষকসহ ২১ জনকে আটক করেছে র্যাব। এর মধ্যে ১৩ জন প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর সাথে জড়িত। বাকি আট পরীক্ষার্থীকে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মোবাইলে উত্তরপত্র এসএমএসসহ গ্রেফতার করা হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে প্রায় ৯৭ হাজার টাকা, ৩০টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করে র্যাব। গতকাল বিকেলে র্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ মুফতি মাহমুদ খান লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আটক করা হয় এফ কে এম খালেদুর রহমান খালেদ, মো: শুকুর আলী নীরব, ভদ্র শ্রীকান্ত, আবুল বাশার, মীর রেজওয়ান মাহমুদ তন্ময়, মোজাম্মেল হক লেলিন, মো: মনিরুল ইসলাম, মো: জামিল খান মিতুল, মো: জুবায়ের আহম্মেদ, মো: জসিম উদ্দীন, মো: সুমন মিয়া, কাজী শামীম হাবিব ও অরিত্র সিনহা। অসদুপায়ে জড়িত থাকার অভিযোগে আট পরীক্ষার্থীকে আটক করে র্যাব। তারা হলেনÑ মো: নুরুজ্জামান, মো: কাফির হাসান, শামীম সিকদার, সঙ্গীতা দাস, মো: রাশেদ সেখ, সুব্রত, মো: সবুজ হাসান ও অরিত্র সিনহা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক ডিডি (মিডিয়া) মেজর রুম্মান মাহমুদ, সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মেজর মাকসুদ আহমেদসহ র্যাবের অন্য কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটক ছাত্রদের মধ্যে তিনজন (অরিত্র সিনহা, নুরুজ্জামান ও কাফির হাসান) শেরেবাংলা নগর বালক উচ্চবিদ্যালয়, দু’জন (শামীম শিকদার ও সঙ্গীতা দাস) মিরপুর আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট এবং বাকি তিনজন (সুব্রত, রাশেদ ও সবুজ) গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা চলাকালে মোবাইল সেটসহ আটক হন। ওই সব মোবাইলে উত্তরপত্রের এসএমএস পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবকে জানান, ইতঃপূর্বে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। মোবাইলের মাধ্যমে পরীর্থীদের এসএমএস করে উত্তর পাঠিয়েছিলেন; কিন্তু পরীক্ষা শুরুর বেশ খানিকটা পরে প্রশ্ন হাতে আসায় তা সমাধান করে যথাসময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর না পৌঁছাতে পারায় পরীক্ষার রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। তবে আসন্ন ‘ঘ’ ইউনিটের জন্য ভর্তির শতভাগ সুযোগের আশ্বাস দিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় এক শ’ ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এই গ্রুপটিই পরীক্ষার আগের দিন রাতে পরীক্ষার্থীদের কাছে একটি গোপন মোবাইল নম্বর পাঠায়। পরীক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা থাকে তারা যেন প্রশ্ন পাওয়ামাত্র কোন সেট পেয়েছেন তা এসএমএস করে সাথে সাথে ওই গোপন নম্বরে পাঠিয়ে দেন। আর ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে সেটের উত্তরপত্র কিছুক্ষণের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অন্য একটি গ্রুপের কাজ হলো পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করা, যারা পরীক্ষার্থী প্রতি তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, আটককৃত সবার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোয় মামলা হবে। সবাই মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করে আটক হয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতা আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, র্যাব রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাতভর অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে শুনেছি। তবে তার মধ্যে ছাত্রলীগের কেউ আছে কি না জানা নেই। কিভাবে প্রশ্ন বাইরে বের হলো সে বিষয়েও তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে একাধিক ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সংশ্লিষ্টদের সহায়তা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যদি কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জালিয়াত চক্রের সদস্য হিসেবে ছাত্রলীগ নেতা আটক হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লাকে বারবার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বলেন, এ নামে কাউকে চেনেন না। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে এমন কেউ আছেন বলে তার জানা নেই। তবে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি দারুস সালাম শাকিল বলেন, লেলিন হল ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সর্বশেষ কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পদ থাকলেও এখন চাকরি করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা গতকাল সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাইরের ৯৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এক হাজার ৪১৬টি আসনের জন্য মোট এক লাখ পাঁচ হাজার ৫১৬ ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দুই থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার চুক্তি : ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের সাথে মোটা অঙ্কের চুক্তি করেছেন ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন জালিয়াতি চক্রের সাথে তাদের দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি হয়। পরীক্ষার পরে চান্স পাওয়ার শর্তে তাদের সাথে এ চুক্তি ছিল। তবে এ বিষয়ে ঝুঁকি ছিল সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের। এ কথা জানা সত্ত্বেও জালিয়াত চক্রের সাথে চুক্তি করেছেন তারা। ‘ঢাবির লোভ সামলাতে পারিনি’ : জিজ্ঞাসাবাদে আটক ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় স্বীকার করেছেন। এক ছাত্র বলেন, রাস্তায় একজনের সাথে তার পরিচয়ের সূত্র ধরেই এ জালিয়াত চক্রের ফাঁদে পা দেন তিনি। দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তার সাথে চুক্তি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লোভ সামলাতে না পেরে এ পথে পা বাড়িয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে কিভাবে টাকা পরিশোধ করতেন সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি। ১২টি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় তিনি হলের গার্ডের হাতে ধরা পড়েন। আটক এক ছাত্রী জানান, শাখাওয়াত নামে তার একজন বন্ধু গত বছর জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার মাধ্যমেই দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমদাদের সাথে তার পরিচয়। তার সাথে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেয়ার শর্তে সাড়ে তিন লাখ টাকায় চুক্তি হয়। তারা জানিয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষা যে কলেজে পড়বে সে কলেজের প্রিন্সিপাল অথবা কর্তব্যরত শিক্ষকের সাথে তাদের এক লাখ টাকার চুক্তি থাকবে, যারা তাকে পরীক্ষার হলে উত্তর সরবরাহ করবেন। এভাবে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর নেয়ার সময়ই তিনি আটক হন। অপর এক ছাত্রী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি জুয়েল নামে এক জালিয়াত চক্রের সদস্যের মোবাইল নম্বর পান, যার মাধ্যমে এ পথে পা বাড়ান তিনি। কাজে এলো না নতুন নিয়ম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ক, খ ও গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক জালিয়াতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জালিয়াতি রোধে নতুন নিয়মে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী গতকাল অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় নতুন নিয়মটি প্রয়োগও করা হলো। প্রশ্নপত্রের সেটকোড ছিল লুকানো; কিন্তু তা-ও কোনো কাজে এলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ১৭ জনকে জালিয়াতি করার সময় হাতেনাতে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা নতুন এ নিয়মও জালিয়াতি রোধে তেমন কোনো কাজেই এলো না। আগের মতোই মোবাইল ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতি হলো ভর্তি পরীক্ষায়। চার ইউনিটের পরীক্ষায় আটক ৬৬ জন : গতকাল অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় এবং বৃহস্পতিবার রাতে জালিয়াত চক্রের ১৫ সদস্য এবং ভর্তি ইচ্ছুক ২৩ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের তিনজনসহ আটক করা হয় ১০ জনকে। মামলা হয় ছয়টি। ১২ সেপ্টেম্বর ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আটক করা হয় ১৭ জনকে। মামলা হয় ১৩টি। ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষায় আটক করা হয় একজনকে। মামলা হয় একটি। এ নিয়ে চারটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আটক করা হলো ৬৬ জনকে।
No comments:
Post a Comment