Saturday, July 26, 2014

গাজায় মৃতের সংখ্যা ৮৩২:প্রথম অালো

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্মম অভিযানের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে ফিলিস্তিনি শাসনের আরেক কেন্দ্র ফাতাহনিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর। গতকাল শুক্রবার জুমাতুল বিদার দিন ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ জানায় পশ্চিম তীরের হাজার হাজার বাসিন্দা। এর আগের রাতে এখানে বিক্ষোভকালে ইসরায়েলি পুলিশ ও সেনাদের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষে দুই বিক্ষোভকারী নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়। বিক্ষোভ হয়েছে
ইসরায়েলের বেথলেহেম ও জেরুজালেমেও। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের টানা অভিযানের ১৮তম দিন গতকালও এ উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চলে। এদিন নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩২ জনে। এক দিন আগে বৃহস্পতিবার সকালেই মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৩০। খবর বিবিসি, এএফপি, সিএনএন ও আল-জাজিরার। কট্টর ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসনিয়ন্ত্রিত গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যায় ক্ষুব্ধ পশ্চিম তীরে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় গতকাল। পশ্চিম তীরের শাসনভার মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত সংগঠন ফাতাহর হাতে। সেখানকার ফিলিস্তিনি নেতাদের ভাষায়, এ বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তাঁদের ‘মুক্তি ও স্বাধীনতার বিপ্লব’ শুরু হলো। পশ্চিম তীরে বড় ধরনের এ বিক্ষোভের শুরু বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। ইসরায়েলি হামলা ও দখলদারির প্রতিবাদে রাতেই পশ্চিম তীরের ১৫ হাজারের বেশি মানুষ মিছিল বের করে। রামাল্লাহ শহর থেকে ইসরায়েল সীমান্তবর্তী কালান্দিয়া তল্লাশি ফাঁড়ি অভিমুখে যাত্রা করে তারা। ফাঁড়ির কাছাকাছি পৌঁছে তারা সেখানে থাকা ইসরায়েলি পুলিশ ও সেনাদের লক্ষ্য করে পাথর, পেট্রলবোমা ও পটকাজাতীয় বিস্ফোরক ছোড়া শুরু করে। কিছু তরুণ বিক্ষোভকারী প্রতিবন্ধকতা ভাঙারও চেষ্টা চালান। জবাবে ইসরায়েলি পুলিশ ও সেনারা রাবার বুলেট, গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ। গাজায় জাতিসংঘের একটি স্কুলে প্রতিষ্ঠিত আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি গোলা আঘাত হানার ঘটনায় ১৬ জন নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত এবং বহু আহত হয়। ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে তারা শুধু শব্দবোমা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সংঘর্ষে আহত হওয়া ১৮৫ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে ফিলিস্তিনি তরুণদের একটি দল ওই বিক্ষোভের ডাক দেয়। পশ্চিম তীরের নেতারাও ফিলিস্তিনিদের প্রতি গতকাল ‘ক্ষোভের দিন’ পালনের ডাক দিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ ভূখণ্ডের অধিবাসীদের প্রতি বিক্ষোভ ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলি বেতার বলেছে, ২০০০ থেকে ২০০৫ সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলবিরোধী অভ্যুত্থানের পর দৃশ্যত এটাই বৃহত্তম ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ-আন্দোলনের ঘটনা। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইসরায়েলের: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েলের সিকিউরিটি ক্যাবিনেট। দেশটির এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। জন কেরি ইসরায়েল ও×হামাসের মধ্যে ১৮ দিন ধরে চলমান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছিলেন। ইরানজুড়ে বিক্ষোভ: ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এবং ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ইরানে গতকাল ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ দেশটির সাত শতাধিক শহরে বিক্ষোভ মিছিলে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত দৃশ্যে তেহরানে বিক্ষোভকারীদের ইসরায়েল ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। এর কোনো কোনোটিতে লেখা ছিল, ‘ইসরায়েল নিপাত যাক’, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’। প্রতিবছর ইরান পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে আল-কুদস দিবস (জেরুজালেম দিবস) পালন করে থাকে। গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী ইসরায়েলি অভিযানে শত শত ফিলিস্তিনির প্রাণহানি চলার মধ্যে কুদস দিবসের এবারের সমাবেশ ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়াল: ১৮ দিন ধরে চলা ইসরায়েলি অভিযানে গতকাল নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত মৃতের এই সংখ্যা ছিল ৮৩২। মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, নিহত এসব ফিলিস্তিনির প্রায় ৮০ শতাংশই নিরীহ বেসামরিক নাগরিক। ফিলিস্তিনি জরুরি সেবা বিভাগ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় গতকাল এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও দুই সন্তানসহ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের একজন জ্যেষ্ঠ নেতাও প্রাণ হারান। জরুরি বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল-কাদরা বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে গাজা থেকে হামাসের ছোড়া রকেট ও মর্টার শেলের আঘাত ও মুখোমুখি সংঘাতে অভিযান শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৫ জন ইসরায়েলি সেনাসহ ৩৭ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। বিমানবন্দরে হামাসের হামলা: গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস গতকাল বলেছে, তারা ইসরায়েলের তেল আবিব বিমানবন্দরে তিনটি রকেট ছুড়েছে। দুই দিন বন্ধ রাখার পর যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের বিমান সংস্থা বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালুর এক দিন পর এ রকেট হামলা চালাল হামাস। সংগঠনটির সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেড দাবি করেছে, তারা গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় এম৭৫ রকেট দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এদিকে গতকাল গাজায় আরও এক ইসরায়েলি সেনা হামাসের ছোড়া গোলায় নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। গত মঙ্গলবার হামাসের একটি রকেট বিমানবন্দরটির রানওয়ের কাছে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এই বিমানবন্দরমুখী সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। কার্যত এতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ইসরায়েলের বিমান চলাচলব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ওই হামলাকে হামাস তাদের ‘বিজয়’ বলে দাবি করে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিতর্কেরও সূত্রপাত হয়।

No comments:

Post a Comment