Wednesday, July 16, 2014

রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন:যুগান্তর

ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অবৈধভাবে রানা প্লাজা নির্মাণের অপরাধে সোহেল রানা ও তার বাবা-মাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। মঙ্গলবার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। মামলা দায়েরের এক মাসের মাথায় চার্জশিটের অনুমোদন দেয়া হল। মামলায় সোহেল রানাকে আসামি করা না হলেও চার্জশিটে তাকে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, এজাহারে প্রাথম
িক পর্যায়ে সোহেল রানার বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ না থাকায় মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। পরে তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। রানা প্লাজা নির্মাণে সোহেল রানার অবৈধ প্রভাব বিস্তার ও সুযোগ-সুবিধা আদায় করার বিষয়টি সাক্ষীদের বক্তব্য এবং সোহেল রানার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও বেরিয়ে আসে। ‘রাজধানী ও তার সংলগ্ন এলাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু রানা প্লাজা নির্মাণে রাজউকের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। রাজউকও এতে আপত্তি করেনি। তাহলে রাজউকের কাউকে কেন আসামি করা হল না?’ জানতে চাইলে মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তবে গণমাধ্যমও পারত বিষয়টি আমাদের অবহিত করতে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, কারাবন্দি সোহেল রানাকে এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের আবেদন জানানো হবে। উল্লেখ্য, ১৫ জুন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক এসএম মফিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সোহেল রানাকে বাদ দিয়ে বাবা-মাসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। অন্য আসামিরা হলেন সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কমিশনার হাজী মোহাম্মদ আলী খান, ভবনের নকশাবিদ প্রকৌশলী এটিএম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌর মেয়র মোঃ রেফাতউল্লাহ, পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা) উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাবেক নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মোঃ আব্দুল মোত্তালিব, সাভার পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, মোঃ আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুস সামাদ এবং ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান। মামলাটি তদন্ত করেন এসএম মফিদুল ইসলাম। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাভার পৌরসভা ‘রানা প্লাজা’ নামীয় ৬ তলা একটি শপিং কমপ্লেক্স বা মার্কেট নির্মাণের জন্য ২০০৬ সালের ১০ এপ্রিল নকশার অনুমোদন দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি ৬ তলা ভবনের ওপর আরও ৪ তলা অর্থাৎ ১০ম তলা অনুমোদনের আবেদন করা হয়। ৬ তলার ওপর আরও ৪ তলার অনুমোদন দেয়ার কোনো অবকাশ নেই- এ কথা জেনেও তথ্যটি গোপন করেন রানার বাবা। দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন পূর্ববর্তী নথিতে উপস্থাপন না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি নতুন নথি খুলে পরবর্তী নথির তথ্য গোপন করে ১০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন করে পৌরসভা, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। এছাড়া রানা প্লাজা নামের ভবনটি শপিং কমপ্লেক্স হিসেবে অনুমোদিত ও নির্মিত হলেও সাভার পৌরসভা এ ভবনে ৫টি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের অনুমতি দেয়। গার্মেন্ট পরিচালনার জন্য জেনারেটরসহ বিভিন্ন হেভি মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়। যার ওজন নেয়ার ক্ষমতা শপিং কমপ্লেক্স হিসেবে ডিজাইনকৃত ভবনের ছিল না। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের ফলে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভবন ধসে পড়ে ইতিহাসের চরমতম মানবিক বিপর্যয় সংঘটিত হয় যাতে বহু লোক হতাহত হন। শিগগিরই অনুমোদিত প্রতিবেদন চার্জশিট আকারে আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে।  

No comments:

Post a Comment