Monday, July 21, 2014

দুপুরের মধ্যেই ট্রেনের টিকিট শেষ:প্রথম অালো

রোববার সকাল সাড়ে আটটা। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। ঈদে বাড়ি যেতে অগ্রিম টিকিটের জন্য অপেক্ষারত লোকের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। কোনো বিশৃঙ্খলাও নেই। সবার হাতেই টোকেন। এই টোকেন বা সিরিয়াল অবশ্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেয়নি। গত শনিবার দুপুর থেকেই অগ্রিম টিকিটপ্রার্থীরা কমলাপুরে ভিড় জমালে সেহ্রির পর যাত্রীরা নিজে থেকেই এই টোকেনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ শুরু করেন। টিকিট বিক্রির জন্য সক
াল নয়টায় একসঙ্গে ২০টি কাউন্টার খোলা হয়। নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য দুটি কাউন্টার থাকার কথা থাকলেও রয়েছে একটি। এবার টিকিট পেতে একটি সংক্ষিপ্ত আবেদন ফরম পূরণ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। মূলত কালোবাজারি রোধে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেন কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক খায়রুল বশার। তিনি বলেন, টিকিট কালোবাজারির এবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, টিকিট পেতে ওই ফরমে প্রাপকের নাম-ঠিকানা-লিঙ্গ ইত্যাদি লিখতে হচ্ছে। পরে এগুলো যাচাই করেই টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে ‘কার্যকরী’ উল্লেখ করে স্টেশন ব্যবস্থাপক আরও বলেন, এখানে একজনের টিকিট আরেকজনের নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কমলাপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এ বিষয়ে বলেন, কালোবাজারি রোধে স্টেশনে ১৬টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। কালোবাজারি রোধে প্রতিটি কাউন্টারে কে টিকিট নিচ্ছেন, তাঁর ভিডিওচিত্র করে সংগ্রহে রাখা হচ্ছে। পরের দিন ওইটি দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হবে যে একই ব্যক্তি আবার টিকিট নিতে আসছেন কি না। কাউন্টারে টিকিট বিক্রির ধীরগতি থাকলেও যাত্রীরা ধৈর্য হারাননি। ১১টা নাগাদ লাইন স্টেশন ছাড়িয়ে রাস্তায় চলে যায়। এ সময় রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক পরিদর্শনে এলে শৃঙ্খলা কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রতিদিন ট্রেনের ৬০ হাজার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। তিনি টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে বলেন, ‘এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি জড়িত থাকে ও দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এর আগে কাউন্টারে দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষারত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। যাত্রীদের অভিযোগ, কাউন্টারগুলো ধীরগতিতে টিকিট সরবরাহ করছে। সকাল নয়টা থেকে অনলাইনে টিকিট পাওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ (অ্যাকসেস) করা যাচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘যাত্রী-ভোগান্তি লাঘবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী দিন থেকে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যেসব মেশিন ধীরগতিতে কাজ করছে, সেগুলোকে পরিবর্তন করে আগামী বছর থেকে কাউন্টারগুলোতে গতিশীল মেশিন দেওয়া হবে।’ অনলাইনের অ্যাকসেস জটিলতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, তিনি শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। এ ছাড়া প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও যতক্ষণ টিকিট থাকবে, ততক্ষণ বিক্রি করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এ সময় রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার, ম্যানেজার, র্যাব-পুলিশসহ দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। গতকাল প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সব রুটের ২৪ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। আজ সোমবার বিক্রি হবে ২৫ জুলাইয়ের টিকিট। পর্যায়ক্রমে কাল মঙ্গলবার বিক্রি হবে ২৬ জুলাইয়ের টিকিট, ২৩ জুলাই বুধবার বিক্রি হবে ২৭ জুলাইয়ের টিকিট এবং সর্বশেষ ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বিক্রি করা হবে ২৮ জুলাইয়ের টিকিট। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমিশনার (এসি) গোলাম কুদ্দুস জানান, স্টেশনে ৮৬ জন নিরাপত্তাকর্মী কাজ করছেন। এ ছাড়া তাঁদের উদ্যোগে একটি সহায়তাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখান থেকে যাত্রীদের সব রকমের তথ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককেই। দিনের প্রথম টিকিট হাতে পেয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহতাব আলী। তিনি শনিবার দুপুরেই স্টেশনে এসেছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বাড়ি খুলনায়। মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ঈদ করতে যাব।’ রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক টিকিট থাকা পর্যন্ত বিক্রির নির্দেশ দিলেও টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় দুপুর আড়াইটা থেকে একটির পর একটি কাউন্টার বন্ধ হতে শুরু করে। সর্বশেষ কাউন্টারটি বিকেল পৌনে চারটায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে হাল ছাড়েননি টিকিট না-পাওয়া যাত্রীরা। কেউ পত্রিকা, কেউ বা মাদুর, কেউ বা খোলা মেঝেতেই বসে পড়েছেন। অনেকে খাবার নিয়ে এসেছেন। খাবার খেয়ে, গল্প করে, কার্ড খেলে কিংবা ঘুমিয়ে রাত পার করে দেবেন। আশায় আছেন সাময়িক কষ্টের পরেও ‘সোনার হরিণ’ টিকিট হাতে পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজের বাড়িতে ঈদ করবেন।

No comments:

Post a Comment