Sunday, July 27, 2014

বাতিল হচ্ছে ৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ:যুগান্তর

ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ। নানা অভিযোগে তদন্তাধীন থাকা এসব মুক্তিযোদ্ধার বিবরণীতে বিভিন্ন ধরনের ত্র“টি খুঁজে পাওয়া গেছে। এত বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার সনদ কোন প্রক্রিয়ায় বাতিল করা হবে তা নির্ধারণ করতে আগামী ৬ আগস্ট বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে সনদ বাতিলের প্রক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। জানতে চাই
লে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ১৫১ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদের বিষয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব সনদের বিষয়ে সরকার নানাভাবে তদন্ত করছে। অনেকের বিষয়ে সত্যতাও মিলেছে। এসব সনদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ৬ আগস্ট বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এসব সনদ বাতিল করা হবে তা সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দিন দিন বাড়ছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও উদ্বিগ্ন। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় কলংকমুক্ত করতেই এবার সরকার জোরেশোরে উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের আমলে নানাভাবে তদন্ত করে প্রায় দু’শত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের উপ-সচিব, রেলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ও সরকারি স্কুলের শিক্ষকসহ নানা পেশার লোক রয়েছে। সূত্রমতে, শিগগির আরও পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হতে যাচ্ছে। নানা অভিযোগে তদন্তাধীন থাকা এসব মুক্তিযোদ্ধার সনদে বিভিন্ন ধরনের ত্র“টি খুঁজে পেয়েছে তদন্তের কাজে নিয়োজিত সরকারের একাধিক সংস্থা। এত বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার সনদ কোন প্রক্রিয়ায় বাতিল করা হবে তা নির্ধারণ করতে আগামী ৬ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বৈঠকে বসছে। আট সদস্যের শক্তিশালী এ কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। এ ছাড়াও রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এর বাইরে আরও তিনজন সংসদ সদস্য এ কমিটির সদস্য। কমিটিতে রয়েছেন সাবেক সচিব রাশিদুল হক ও মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকার হাসান। ওই বৈঠকে বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। ওদিকে আগামী দু-একদিনের মধ্যে আরও ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন প্রজ্ঞাপন শিগগির : যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় মুক্তিযোদ্ধা নন বলে অঙ্গীকার করেছেন, অথচ তাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের ব্যাপারে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি চূড়ান্তপ্রায়। দু-একদিনের মধ্যে তা জারি হতে পারে। জানা গেছে, অনেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেননি, অথচ পরে মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহ করে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারী বলে দাবি করেছেন। সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন তাদের অনেকে। তাদের বিষয়ে সনদ বাতিলসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা ফেরত দান এবং বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশনা আসতে পারে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাদের মুক্তিযোদ্ধা করার বিষয়ে কারও কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এমন নির্দেশনাও আসছে ওই প্রজ্ঞাপনে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে গত ২১ জুলাই নিজ দফতরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যারা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে। যারা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন, তা ফেরত নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হবে। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ২০১৪ সালের পর ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি আর থাকবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা হলেও যেহেতু সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় ঘোষণা দেননি, কাজেই তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। আর প্রতারণার কারণে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা হওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, বর্তমানে দুই লাখ ১২ হাজার গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ভুয়া সনদের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তা তদন্তাধীন। চলতি মাসেই উপসচিবসহ ৩৫ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়। এর আগে ১১৬ জনের সনদ বাতিল করা হয়েছিল।  

No comments:

Post a Comment