Tuesday, July 15, 2014

রাজশাহী নগরীতে খাবার পানির তীব্র সংকট:যুগান্তর

রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ ছোট মসজিদ এলাকার তাহের আলী ও তার স্ত্রী ফিরোজা বিবি ওয়াসার পানির জন্য রাত দেড়টার দিকে কলস নিয়ে পানির লাইনের কাছে বসে আছেন। ফিরোজা বিবি জানালেন, তাদের বাড়ির আশপাশ নিয়ে প্রায় দু’শ মিটারের মধ্যে ওয়াসার পানির কোনো ট্যাপকল স্থাপন করা হয়নি। তাই তারা পানির লাইন ফুটো করে ট্যাপকলের চাহিদা মেটান। কিন্তু রমজানের শুরু থেকে লাইনে পানির গতি নেই। এক কলসি পানি পেতে আধা ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। দ
িনের বেলাতেও চাহিদা মতো পানি মিলছে না। গত শনিবার রাতে শুধু তাহের দম্পতিই নন, ওই এলাকার মালেকা, ফুলজান, ঝর্ণা, ছকিনা ও সীমাসহ অনেকেই খাবার পানির সংকটের কথা জানালেন। তারা জানান, তাদের এলাকায় সহজে ওয়াসার সাপ্লাই পানি পেতে স্থানীয় কাউন্সিলরকে তারা একাধিকবার ট্যাপকল স্থাপনের আবেদন জানান। আজ হবে কাল হবে বলে প্রতিশ্র“তি দেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন নেই। ট্যাপকল তো দূরের কথা এখন দিনের বেলায় সাপ্লাই পানি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে পানি সংগ্রহ করতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। সব কাজ ফেলে তারা এখন পানির জন্য হাহাকার করছেন। জানা গেছে, সাপ্লাই পানির সংকট শুধু নগরীর হেতমখাঁ এলাকায় নয়। নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুর মোড়, বালিয়াপুকুর, টিকাপাড়া ও রানীনগরসহ পুরো এলাকায় এখন পানির জন্য হাহাকার। নগরীর সাধুর মোড় এলাকার আবদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানি সংকট নিরসনে ওয়াসার কোনো মাথাব্যথা নেই। সাধারণ মানুষের কোনো অভিযোগই আমলে নেয় না তারা। রাজশাহী ওয়াসা জানায়, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এলাকায় বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৮০ জন মানুষের বসবাস। কিন্তু পাইপলাইনে পানি সরবরাহের আওতাভুক্ত এলাকায় জনসংখ্যা ৫ লাখ ২৭ হাজার ৪১০ জন। শতকরা হিসাবে প্রতিদিনের পানি সরবরাহ মোট চাহিদার মাত্র ৪৭ ভাগ। এখনও ওয়াসার পানি সরবরাহের আওতার বাইরে নগরীর ৩৩ ভাগ মানুষ। মহানগরীর পূর্ব-উত্তর ও পশ্চিম পাশের প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার মানুষ বর্তমানে ওয়াসার পানি সরবরাহ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এসব এলাকার মানুষ হস্তচালিত নলকূপ অথবা পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনের পানি সংগ্রহ করেন। ওয়াসার হিসাব মতে, নগরীরজুড়ে সাপ্লাই পানির গ্রাহক প্রায় ৩৫ হাজার। পানি সরবরাহ নিতে ১৮শ’ টাকা ফি জমা দিতে হয়। পরে প্রত্যেক মাসে ৪০ টাকা পানির বিল পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রায় ৭০টি করে উন্মুক্ত ট্যাপকল রয়েছে। এসব ট্যাপকল পাঁচ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে। উন্মুক্ত ট্যাপকল থেকে পানির অপচয় বাড়ে। এ কারণে ট্যাপকল স্থাপন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্বাস আলী সরদার ও ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তরিকুল আলম পল্টু জানান, পানি সংকটে নগরীতে কারবালার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের ওয়ার্ডে পানির তীব্র সংকট। পানির সমস্যা নিয়ে শুধু কাউন্সিলররা নয়, মেয়র সাহেবও ওয়াসাকে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন। এরপরও ওয়াসা পানি সমস্যা সমাধান করতে এগিয়ে আসেনি। এ ব্যাপারে রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ যুগান্তরকে জানান, নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১৮ মিলিয়ন লিটার। কিন্তু ওয়াসা সরবরাহ করছে মাত্র ৬৩ মিলিয়ন লিটার। পানি সরবরাহে নানা সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সংকট সমাধানে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাম্প বসানো হচ্ছে। শিগগিরই সংকট কেটে যাবে।  

No comments:

Post a Comment